০১ মে ২০১২, বুধবার, ০১:৬:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


চ্যালেঞ্জিং সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
চ্যালেঞ্জিং সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেএফকে এয়ারপোর্টে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছেন দুই রাষ্ট্রদূত


বাংলাদেশের আগামীর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। এই চাপ দেশি এবং আন্তর্জাতিক। দেশি চাপ বলতে বিএনপিসহ সমমনা দলের আন্দোলন। তাদের দাবি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের চাপ বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। দেশি চাপকে সরকার খুব একটা আমলে না নিলেও বিদেশি চাপ নিয়ে সরকার এক ধরনের অশ্বস্তিতে রয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্যবারের মত এবার ভারতও আওয়ামী লীগ সরকারের পাশে নেই। তাদের অবস্থা যেন ধরি মাছ না ছুঁই পানি। এর মূল কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় এক বছর আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে জানিয়েদিয়েছে যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে এবার তারা সরাসরি পর্যবেক্ষণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সরকার অশ্বস্তিতে থাকার কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছুটে গিয়েছিলেন ব্রিটস এবং জি-২০ সম্মেলনে। এই দুটো সফরে একমাত্র অর্জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে একটি বিতর্কিত সেলফি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন নিয়ে বৈঠক। যেখানে রাজনীতি নিয়ে কোন আলোচনা ছিলো না। কোন সম্মেলন থেকেই বরফ গলেনি। যে কারণে এবার আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রীর সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং চ্যালেঞ্জিং। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্ক থাকবেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়াশিংটন থাকবেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন ২২ সেপ্টেম্বর দুপুরে। প্রধানমন্ত্রী যতদিন না নিউইয়র্কে থাকছেন, তার চেয়ে বেশি সময় কাটাচ্ছেন ওয়াশিংটনে। একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াশিংটনে আমেরিকান সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নৈশভোজে অংশ নেবেন। তদবির চলছে তার সঙ্গে বৈঠকের। চেষ্টা করবেন বরফ গালাতে। আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ছবির ব্যবস্থা হতে পারে কিন্তু বৈঠক নয়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে তার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন। তিনি রাত ১০ ৫০ মিনিটের সময় জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। এই সময় তাকে ফুলেল স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম এ মুহিত এবং ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। বিমান বন্দর থেকে তিনি সরাসরি ম্যানটনের হোটেলে লগে প্লেসে চলে যান। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হলেও ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্কের উদ্বোধনীতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় দুপুর ১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে তিনি জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন। ১৯ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত রিসিপশনে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কর্মসূচির বিস্তারিত

সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সর্বজনীন স্বাস্থ্য ও অর্থসহ বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ও সৌজন্যমূলক বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর এবং সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত জানান, জাতিসংঘে দেয়া প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের পাশাপাশি বিশ্ব-শান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু ও ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে-‘বিশ্বাস পুনর্গঠন ও বিশ্ব সংহতির পুনরুদ্ধার : ২০৩০’ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং সবার জন্য স্থায়িত্বের দিকে। ১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের রকফেলার সেন্টারে ইউএনআইডিও ও ডেলয়েট-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘খাদ্যের জন্য চিন্তা-খাদ্য সরবরাহ চেইন উদ্ভাবনের জন্য এসডিজিকে ত্বরান্বিত করার জন্য সহযোগিতা’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন। একইদিনে তিনি ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে ‘এসডিজি সামিট-লিডার্স’ ডায়ালগ ৪ (এসডিজি অর্জনের জন্য সমন্বিত নীতি ও পাবলিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা) শীর্ষক আরেকটি সম্মেলনেও ভাষণ দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূত ও বিশ্ব স্বাস্থ্য অর্থায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রাষ্ট্রদূত গর্ডন ব্রাউন ও নিউ ইয়র্কের লেক্সিংটন ভেন্যুতে গ্লোবাল বিজনেস কোয়ালিশন ফর এডুকেশনের এক্সিকিউটিভ চেয়ার সারাহ ব্রাউন আয়োজিত জাতিসংঘের ২০২৩ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিগত নৈশভোজে যোগ দেন। ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সিআর-১৬-এ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর সভাপতি কর্তৃক ‘টুওয়ার্ডস এ ফেয়ার ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল বৈঠকে ভাষণ দেন। একইদিন জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সিআর-১১ এ বাংলাদেশ, অ্যান্টিগুয়া এবং বারবুডা, ভুটান, চীন, মালয়েশিয়া, চ্যাথাম হাউস এবং সূচনা ফাউন্ডেশনের সহ-আয়োজিত চিকিৎসা পরিষেবাভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকের একটি উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে যোগ দেন। ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য আন্তর্জাতিক পাবলিক ফাইন্যান্সিং বৃদ্ধি এবং দক্ষতা নিশ্চিতকরণ’ শিরোনামে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন (এফএফডি) বিষয়ে ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল চেম্বারে একটি উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেবেন।

একইদিনে তিনি মহাসচিবের ক্লাইমেট অ্যামবিশন সামিটে যোগ দেবেন, মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক, নারী নেতাদের ইউএনজিএ প্ল্যাটফরমের বার্ষিক সভা, ক্লাইমেট অ্যামবিশন উচ্চস্তরের জলবায়ু উচ্চস্তরের বিষয়ভিত্তিক সম্মেলনের পাশাপাশি ন্যাশনাল জুরিসডিকশনের বাইরের এলাকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য আইনের ওপর জাতিসংঘের কনভেনশনে যোগ দেবেন। ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সাইড ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রীর যোগদানের পাশাপাশি ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে সৃষ্ট হুমকি মোকাবিলা’ শীর্ষক ব্রেকফাস্ট সামিটে এবং ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সভায় যোগ দেবেন। সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের জেনোসাইড উপদেষ্টা, নবনির্বাচিত ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দফতরের দ্বিপক্ষীয় বুথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। অনুষ্ঠানে যোগদানের পর, তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) ওয়াশিংটন ডিসির উদ্দেশ্যে নিউ ইয়র্ক ত্যাগ করবেন। তিনি ২৩ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে থাকবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কমার্শিয়াল ফ্লাইটে ওয়াশিংটন থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন। ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে তিনি লন্ডনে পৌঁছাবেন। 

শেয়ার করুন