২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৩৩:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের খালেদা জিয়া
আ: লীগের অধীনে নির্বাচনে গেলে বিএনপির সব শেষ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
আ: লীগের অধীনে নির্বাচনে গেলে বিএনপির সব শেষ খালেদা জিয়া


বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বললেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে তো বাংলাদেশে গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি’র রাজনীতিও শেষ হয়ে যাবে। দলের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। কোনোভাবেই সরকারের কোনো ধরনের ফাঁদেই পা দেয়া যাবে না। 

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে গত ১২ সেপ্টেম্বরে রাতে দেখতে গিয়েছিলেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। এসময় গণতন্ত্র মঞ্চের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে একান্তে কথা বলেন। প্রতিনিধিদলে জেএসডি সভাপতি আসম আবদুর রব, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ছিলেন।

গণতন্ত্র মঞ্চের এই প্রতিনিধি দলের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আন্দোলন বিএনপি’র মূল উদ্দেশ্য। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়ার মনোভাব জানতে চাওয়াও ছিল সাক্ষাৎ এর আরেক উদ্দেশ্য। তারই সূত্র ধরে কথোপকথনে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা বিস্তারিত জানতে চাইলে তাদেরকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। অন্যদিকে দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের দুইজনের সাথে একান্ত কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালেদা জিয়া। বলা হচ্ছে ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, আর্থাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এছাড়া তার মেরুদন্ড, ঘাড়, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে। 

কেনো দেখা করতে গেলেন?

গত বছরের আগস্টে দেশের ছয়টি রাজনৈতিক দল নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয়। জোটের শরিকরা হচ্ছে জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। তবে গণ অধিকার পরিষদ প্রথমে এই জোটের সাথে থাকলেও মে ২০২৩ এ তারা জোট থেকে বের হয়ে আসে। জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব এই মঞ্চের ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এর উদ্দেশ্য লক্ষ্য তুলে থরেন। বলা হয়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই মঞ্চ গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্র, সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারব্যবস্থা নিয়ে মঞ্চের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রস্তাবসহ দাবি রয়েছে। এই জোটটি সম্প্রতি বিএনপি’র সাথে একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনও শুরু করেছে। কিন্তু গণতন্ত্র মঞ্চ গঠনের পর থেকে সরাসরি কখনোই এর শীর্ষ নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেননি বা সুযোগ পাননি। তবে জোটের অন্যতম শরিক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বেশ কয়েকবারই বেগম জিয়ার গুলশানস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্ত গণতন্ত্র মঞ্চ গঠনের পর জোটগতভাবে খালেদা জিয়ার সাথে কেউ সাক্ষাৎ করেননি। গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়ার পেছনে এটিও একটি অন্যতম কারণ ছিল। তিনি বলেন, যে দলের সাথে যুগপৎ আন্দোলন ও জোট গঠন করেছি সে দলের শীর্ষ নেতার সাথে সাক্ষাৎ হবে না এটাতো হতে পারে না। তাছাড়া খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারে সব সময় একজন আপোষহীন নেত্রী। এছাড়া  এই আন্দোলনের প্রধান নেতাতো তিনিই। অন্যদিকে তিনি গুরুতর অসুস্থ। এমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত দশটায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে যান বলেই দেশ প্রতিনিধিকে জানান। 

কেমন দেখলেন রাজনৈতিকভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে?

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষনেতাদের একজন দেশ প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপে আরো অনেক তথ্য দেন।  নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, ’বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া টোটালি আনকম্প্রমাইজ মুডে আছেন’। গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, ’মোদ্দাকথা বেগম খালেদা জিয়াকে মনে হয়েছে তিনি হাসপাতাল নয় রাজপথেই গণতন্ত্রের জন্যই লড়ে যাচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া একজন লড়াকু সৈনিকের মতো কথা বলেছেন বলেই গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা দেশ প্রতিনিধিকে জানান। তার মানসিক শক্তি এবং কণ্ঠের দৃঢ়তা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা বলেন, গণতন্তের সংগ্রামে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে খালেদা জিয়াকে অসম্ভব আশাবাদী বলেই মনে হয়েছে তার। খালেদা জিয়া বলেন, এই আন্দোলনে আমরা জয়ী হবোই...।

পাতানো নির্বাচনের প্রশ্ন আসলো কেন?

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাকে দেখতে গেলেন জোটগতভাবে-এটা ঠিক আছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ-এটাও ঠিক। কিন্তু এমন সময়ে কেনো সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে জানতে চাইলেন আসন ভাগাভাগি বা একটি পাতানো নির্বাচনে বিএনপি কি অংশ নেবে কি-না? এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে হাসাপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে যাওয়া গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতা দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, ’দেখেন বাজারে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। এমন কথা মিডিয়ায় অহরহ আসছে যে পর্দার আড়ালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারের সাথে আপোষরফা করে যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বিএনপি আসন ভাগাভাগিতে রাজি। সংসদে কিছু বেশি আসনের দেশি-বিদেশীর পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের আশ্বাসেই বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দেবে। বাজারে এসব খবরের ব্যাপারে বেশ কিউরিসিটি কাজ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের অনেকেরই মনে। বিষয়টির ব্যাপারে বিএনপি দায়িত্বশীল মোটকথা একেবারে সবোর্চ্চ পর্যায়ের নেতার মুখ থেকেই জানার ইচ্ছা ছিল দীর্ঘদিনের। ’তাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেই এসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রশ্ন করি সরাসরি, জানতে চাই তার মনোভাব। আর এতেই বেগম খালেদা জিয়া দেখি দৃঢ়তার সাথে জবাব দেন। এই সময় তার আনকম্প্রমাইড মুডটি সবার চোখেই দৃশ্যমান হয়েছে বলেই গণতন্ত্র মঞ্চের সেই নেতা দেশ প্রতিনিধিকে জানান। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সরাসরি বলে ফেলেন, এই ক্ষমতাসীনদের অধীনের নির্বাচন বা আসন ভাগাভাগি করে অংশ নিলে আমরাতো শেষই.... হয়ে যাবো। তাহলেতো আর কিছুই থাকবে না..।

শেয়ার করুন