৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৬:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


দেশের স্বাধীনতা আমাদের সবার
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২২
দেশের স্বাধীনতা আমাদের সবার



আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে কিছু লিখতে যাওয়া সত্যিই অনেক মেধা ও প্রজ্ঞার ব্যাপার, সাথে যুক্ত হতে হবে দেশপ্রেম ও দরদ। এ জাতীয় লেখা লিখতে গেলে বেশিরভাগ লেখকই শুরুতেই মনে মনে একটা রাজনৈতিক মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ায়, যে কারণে কয়েক লাইন লেখার পরই তিনি লেখকের চেয়েও বড় একজন দলীয় কর্মী হয়ে ওঠেন। তখন আর একশো ভাগ সত্য কথাগুলো লেখা যায় না আর একপেশে হবার কারণে লেখাটি আর বহুল পঠিত হয়ে ওঠে না। দেখা যাক, আমরা আজকের এই ছোট্ট লেখাটি সবার পাঠ উপযোগী করে লিখতে পারি কিনা। তবে শুরুতেই বিনয়ের সাথে নিবেদন করে রাখি একটি কথা তা হলো, কোনো তথ্য বা মন্তব্যে আবেগায়িত বা উত্তেজিত না হয়ে লেখাটি পড়ে শেষ করলে ভালো হবে। ভিন্নমত থাকলে তাও পরে জানানো যাবে। এবার আসা যাক, আমাদের স্বাধীনতা দিবস প্রসঙ্গে।

১৯৭১-এর ২৬ মার্চ সম্পর্কে বলার আগে একটু ১৯৪৭ সাল হয়ে আসা জরুরি। বস্তুত ১৯৪৭-এর আগস্ট মাসে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হবার সময় পাক-ভারত উপমহাদেশ দুটো রাষ্ট্রে ভাগ হওয়াটা ছিলো একটা বড় ধরনের ভুল। ভূখণ্ডটি তিনটা রাষ্ট্রে ভাগ হওয়া উচিত ছিলো তখনি। আমাদের এ অভিমতের সাথে সাথে কেউ হয়তো বলে বসবেন যে, এটা দশ বা ততোধিক রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া উচিত ছিলো। কেউ এহেন মন্তব্য করলে সে কথা আমরা পরে মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারবো, তবে এ মুহূর্তে আমাদের অভিমত তিনটি রাষ্ট্রের পক্ষে। তখন বিভাজনটি সঠিকভাবে হলে ১৯৭১-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটির প্রয়োজন হতো না। দ্বিজাতি তত্ত্বকে রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তি না ধরে ভাষাকে ধরলে আজ পাক-ভারত উপমহাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত এলাকা হিসেবে পরিগণিত হতে পারতো। বিভাজনের ভিত্তিটা যে ভুল ছিলো তা ১৯৫২-তেই প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিলো। আর ধর্ম যে শক্ত ভিত্তি হিসেবে রাষ্ট্র গঠনের জন্য ভাষার চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম তাও কিন্তু এক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, একটা দেশের দুটো ভূখণ্ড এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত, এ ধরনের একটি কল্পিত কথা প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টাও ছিলো এক ধরনের বেওকুফি। এতো বড় বড় রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত, সমর বিশারদ এবং সমাজবিষয়ক মহীরুহগণ কি করে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিলেন তা এখন কোনোভাবেই বুঝে ওঠা যায় না! আমাদের বিশ্বাস, এটি যে কম পক্ষে তিনটি রাষ্ট্রে তখনই বিভক্ত হওয়া উচিত ছিলো তা এখন সবাই একমত হবেন বলে আমরা মনে করি। তো আসা যাক একাত্তরের দিকে।

বস্তুত একাত্তরের দিকে পদযাত্রা বায়ান্নতেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো। ইসলামের কথা বলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির যাঁরা দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁরা শুরু থেকেই দেশের পূর্বাংশকে হীন চোখে দেখতে থাকলেন, এদিকের মানুষদেরকে তাদের মতো উত্তম নয় এরকম ভাবতে থাকলেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে এ অংশকে অবহেলা করতে থাকলেন। পূর্বাংশের মানুষদেরকে অগত্যা সাথে নেয়ার মতো করে তাঁরা নতুন রাষ্ট্র চালাতে শুরু করলেন। ভাষা প্রসঙ্গে প্রথম যে ঝাঁকুনিটা ১৯৫২তে সম্পাদিত হয়েছিলো আসলে সেটাই ছিলো আমাদের জন্য একটা দিকনির্দেশনা যে, আমাদের কি করা উচিত। ওই উচিত বিষয়টিই শক্ত করে ধরেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ স্বাধীন করার নিমিত্তে দেয়া ওনার সাতই মার্চের ভাষণটি এখন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে পরিণত হয়েছে। ওনার নাম ব্যবহার করে যাঁরা রাজনীতি করছেন বা করতে চান তাঁদের প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত যে, ওনার বক্তৃতাটি লিখিত বক্তব্য ছিলো না এবং এর ভাষাগত এবং উদ্দীপনাগত মান ছিলো অতুলনীয়, যা ওনার প্রজ্ঞায় প্রোথিত ছিলো। প্রত্যেকে এটুকু মাথায় রাখলেই বাংলাদেশের এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকবে না।

পরবর্তী সময়ের প্রেক্ষাপট এখন খুব একটা বিশ্লেষণ করতে যাবো না আমরা। ওনাকে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কে বা কারা উৎসাহী করে তুলেছিলেন সেই গবেষণায়ও আমরা যাচ্ছি না। শুধু একটা কথাই বলবো, আমাদেরকে স্বাধীনতা উপহার দেয়া মানুষটির এ রকম করুণ মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না।

আমরা এ লেখা অতিদীর্ঘ করতে চাই না, তাই বর্তমানের প্রেক্ষাপটে চলে আসা যাক। আমরা জানি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যতটুকু জানি, আওয়ামী লীগও এতে দ্বিমত পোষণ করে না। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জাতির পিতা প্রসঙ্গে পুরো দেশেই একটি আন্তরিক অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া দরকার যে, জাতির পিতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু সবার, শুধু আওয়ামী লীগের নয়, সব মানুষের। আমাদের জানা মতে অতীতে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে অবস্থানকারী দলগুলোকে কোনো কোনো সচেতন লেখক পরামর্শ দিয়েছিলেন, তাঁরা যেন বঙ্গবন্ধু হত্যার নিন্দা জানিয়ে শোক দিবস পালন করেন। কিন্তু ওনারা ওইটুকু ঔচিত্যবোধের স্তরে পৌঁছতে পারেননি। জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে আপনি সমঅধিকারের আন্দোলন করবেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা চাইবেন, এদেশ আমার বলে বুক ফুলাবেন, এটা কি হয়! বিষয়টিতো অপরিহার্য। জাতির পিতাকে অসম্মান করা বেআইনি নয় কেন! ‘জয় বাংলা’ সেøাগানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি। যা-ই হোক, আমরা বিষয়টিকে আবেগের চেয়ে যুক্তি দিয়ে এর সর্বজনীনতা বোঝাবার চেষ্টা করছি।

আমার প্রাণপ্রিয় সোনার দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে লিখতে গেলে গ্রন্থের পর গ্রন্থ লিখেও শেষ করা যাবে না। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে শান্তিপ্রিয় মানুষদের এই  মাতৃভূমিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগকে বলতে হবে বঙ্গবন্ধু সবার আর অন্যান্য রাজনেতিক দলগুলোকে বলতে হবে বঙ্গবন্ধু আমাদের  এদেশ আমাদের সবার।

ও হ্যাঁ, এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু ও গুরু ভারতের প্রসঙ্গে দু’একটা কথা বলতেই হয়। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সাফল্য অর্জনের জন্য ভারতের সহযোগিতা অপরিহার্য। ওনাদের সদিচ্ছা ছাড়া বাংলাদেশের উৎকর্ষ সাধন অসম্ভব। ভারত একটি বড় এবং গণতান্ত্রিক মডেলের রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা নয়, এটা ভারতের চেয়ে ভালো আর কে জানে! বঙ্গবন্ধুও এ বিষয়টি জানতেন। তবে শুধু ধর্মও যে একটা রাষ্ট্রের একমাত্র ভিত্তি নয়, এটাও আমাদের প্রতিবেশী জানে। ভাষা একটি বিরাট বিবেচ্য বিষয়, এটাও ভারতের অসাধারণ বিজ্ঞতার অধিকারী রাষ্ট্রনায়কগণ এবং রাজনীতিবিদগণ জানেন। আমাদের বিশ্বাস, বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকলে তা যে ভারতের জন্যও মঙ্গলজনক তা কে না জানে! ভারতের অখণ্ডতা বাংলাদেশ প্রশান্ত থাকার ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে।

বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক হিসেবে আমার বলিষ্ঠ ইচ্ছা হলো, আমাদের দেশ সোনার বাংলা হিসেবে পৃথিবীর বুকে চিরকাল গৌরবের চিহ্ন হয়ে থাকুক। বাংলাদেশের মানুষ পরাধীনতা মানতে অভ্যস্ত নয়। দেশ, পতাকা, স্বাধীনতা, জাতির পিতা, গৌরবÑএসবই আমাদের সবার। আমাদেরকে চেনে এখন সারা পৃথিবী।


শেয়ার করুন