২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:০২:২৮ পূর্বাহ্ন


বিএনপিকে শাপলা চত্বরের পরিণতির হুঁশিয়ারি!
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
বিএনপিকে শাপলা চত্বরের পরিণতির হুঁশিয়ারি! আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের


চট্টগ্রামে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবির আন্দোলনে রোডমার্চ শেষে গত ৫ অক্টোবর কর্মসূচি দিয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার শেষ কর্মসূচি নিয়ে উত্তাপ ছড়াতে শুরু করেছে। সেদিন পাঁচ দিনের কর্মসূচিতে বিএনপি কর্মসূচি দেয় ৯ অক্টোবর দেশের প্রতিটি মহানগর ও জেলায় সমাবেশ ও মিছিল, ১২ অক্টোবর ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন, ১৪ অক্টোবর সারাদেশে গণঅনশন, ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ এবং ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ। মির্জা ফখরুল আরো জানান, ১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ শেষে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে। 

এসবই যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও ১৮ অক্টোবরের ঢাকায় সমাবেশ নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। অবশ্য বিএনপিও ঢাকার ওই সমাবেশটাকে মহাসমাবেশে রূপ দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বিএনপি দীর্ঘদিন থেকেই ঢিমেতালে আন্দোলন করে আসছে এটা ঠিক, কিন্তু নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগে এ অক্টোবর মাসে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দলটি আবারও বড় কর্মসূচিতে মনোযোগী হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপি ১৮ অক্টোবরের সমাবেশকে ঢাকা অবরোধ টাইপের কোনো কিছুতে রূপান্তরিত করতে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে বিএনপি যদি এমন কঠোর কর্মসূচিতে যায়, সেটা বিএনপিসহ সমমনাদের অহিংস আন্দোলন ভিন্নপথে রূপ নিতে পারে। কারণ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপির কোনো দাবি-দাওয়ার পরোয়া না করেই গতানুগতিক নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। এমতাবস্থায় বিএনপিসহ তাদের সমমনা দলসমূহ সেটা প্রতিহত করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের বিভিন্ন উদ্যোগেরও একটা ভূমিকা কাজ করছে। 

তবে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহলে উৎকণ্ঠা কাজ করছে। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের দেওয়া নির্দেশনা ফলো না করলে সেখানে বন্ধুপ্রতিম বা উন্নয়ন সহযোগীরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে পারে। যার মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার মতো ভয়ানক সিদ্ধান্তেও যেতে পারে বলে কোনো কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করছেন। এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে র‌্যাবের ওপর স্যাংশন, ভিসানীতি প্রয়োগ করার মার্কিনি সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে বিরাজমান। ফলে এক তরফা কোনো নির্বাচন, যা পূর্বে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বা বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে, সেটা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বেলায় ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। 

এদিকে ঢাকায় বিএনপির ডাকা ১৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ১৬ অক্টোবর সোমবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী যুবলীগ আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখন চলে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা। আগামী মাসে সেমিফাইনাল আর জানুয়ারি মাসে হবে ফাইনাল খেলা। খেলা হবে ভোট চোরদের বিরুদ্ধে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে, লুটপাট ও অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে।’ 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ঢাকা অবরোধ করতে আসলে বিএনপি নিজেরাই অবরোধে পড়ে যাবে। তারা এবার পালাবার পথ পাবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৮ তারিখের সমাবেশকালে ক্ষমতা দখল করার জন্য নেতাকর্মীদের অতিরিক্ত কাপড় নিয়ে ঢাকা আসতে বলেছেন। তারা ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরোধ করার ষড়যন্ত্র করছে। তাই ঢাকার হোটেলগুলোতে কোনো সিট খালি নেই। সব সিট তারা বুক করে ফেলেছে। নতুন বাড়ির খালি ফ্ল্যাট বুক করেছে। তিনি বলেন, সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কিন্তু এবার বিএনপির পরিণতি শাপলা চত্বর থেকে আরো করুণ হবে। ১৮ অক্টোবর সবাই আমরা জমায়েত হবো। বিএনপি চুরি করে প্রবেশ করছে। আমরা কি বসে বসে ললিপপ খাবো? যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সবাই প্রস্তুত আছি। এবার অবরোধ করলে বিএনপিই অবরোধ হয়ে যাবে। তাদের অবরোধ করতে হবে। তারা এবার পালানোর পথ পাবে না।’ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন সন্দেহের কারণ, বিএনপি গত ২৮ জুলাই আরো একবার পল্টনে মহাসমাবেশ করে এবং ওই সমাবেশে থেকে ঘোষণা হয় যে, পরের দিন ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে তাৎক্ষণিক অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। কেউ যেন ঢাকা ছেড়ে না যায়। সে ঘটনায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। গাবতলী পয়েন্ট থেকে আমান উল্লাহ আমানকে আটক করে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। গয়েশ্বর চন্দ্রকে বেড়ধক পিঠিয়ে এরপর ডিবি অফিসে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে আরো অনেক বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। ফলে আওয়ামী লীগ সন্দেহ করছে বিএনপি এবারও সে জাতীয় কিছু একটা করে বসতে পারে। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এক দফা, ৩২ দল, আন্দোলন সবই ভুয়া। এই দলটিই (বিএনপি) ভুয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হাওয়া থেকে পাওয়া আজগুবি খবর ছড়াচ্ছেন; তাদের প্রতি নাকি পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন আছে, তাদের নাকি সাহস জোগাচ্ছে। অথচ পশ্চিমারা বলেছে, নির্বাচনে তারা কোনো দলকে সমর্থন করে না।  তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, মির্জা ফখরুল আর কত মিথ্যা বলবেন! গতবার টাকার বস্তা নিয়ে আন্দোলন করেছিলেন, সেই আন্দোলন সফল হয়নি। আন্দোলন গোলাপবাগ মাঠের গর্তে চলে গেছে। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির অর্থসহায়তা বেড়েছে আগের চেয়ে। তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করে সাহস সঞ্চার করেছে। আর আওয়ামী লীগের সাহস জনগণ। আমরা জনগণের সমর্থন থেকে সাহস পাচ্ছি। জনগণ যতক্ষণ সঙ্গে আছে, ততক্ষণ ভয় নেই। আমরা ন্যায় ও নীতির পক্ষে আছি।’ 

বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা কারো কাছে মাথা নত করেন না। আল্লাহ ছাড়া তিনি কাউকে ভয় পান না। ফখরুল সাহস পাচ্ছে বিদেশ থেকে। আমরা সাহস পাচ্ছি বিদেশি সমীক্ষায় এসেছে, আগামী নির্বাচনে শতকরা ৭০ ভাগ লোক শেখ হাসিনার পক্ষে ভোট দেবে। আমরা শেখ হাসিনার মতো সাহসী নেতার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন থেকে সাহস পাচ্ছি।’ 

শেয়ার করুন