২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:৪১:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে যড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে মাঠে আ.লীগ..
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে যড়যন্ত্রের অভিযোগ নিয়ে মাঠে আ.লীগ..


বিএনপি’র বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জোর প্রচারণা চালানো হচ্ছে যে, দলটি বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে গভীর যড়যন্ত্র করছে। এর পাশাপাশি বিএনপি’র বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চক্রান্তের অভিযোগ এনে এর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে আ. লীগ। এসব ব্যাপারে দ্রুত ফল পেতে আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাংক বলে সংশ্লিষ্টরা গভীর এবং সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক মাঠ এখন মারাত্মকভাবে উত্তপ্ত। কি হবে বা হতে যাচ্ছে এ-নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। এবারে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং এর পাশাপাশি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ইস্যুতে রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি যেভাবে দাপিয়ে বেরাচ্ছে তা-নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে ভিন্ন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তাদের শঙ্কা বা ধারণা কোনোভাবেই এবারে আওয়ামী লীগ ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি করে ফেলতে পারছে না। আবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো দ্বাদশ জাতীয়  সংসদ নির্বাচন করে ফেললেও এর পরে কি হতে পারে তা-নিয়েও শঙ্কা রয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায়ে। এমন ধরনের উভয় সঙ্কট মোকাবেলায় নানান ধরনের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। 



অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ এবারে অচল

২০১৪ বা ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নিরঙ্কুশ বিজয়ী দেখিয়ে ক্ষমতায় বসে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে আওয়ামী লীগ ব্যাপক রাজনৈতিক কূটনৈতিক তৎপরতা চালায়। ২০১৪ বা ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি এবং সে-সময়ে তার মিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সারাদেশে ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস করেছে-এমন অভিযোগ নিয়ে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাবড়িয়ে বেড়িয়েছে আ. লীগ। এভাবে দেশে বিদেশে বলা চলে একধরনের মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে ২০১৪ বা ২০১৮ সালে জাতীয়  সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের নেতিবাচক প্রচারণাতে উড়িয়ে দিয়ে সরকারের পক্ষে নিয়ে আসে আওয়ামী লীগ। লাভ করে জাতীয় আর্ন্তজাতিক স্বীকৃতি। সেসময়ে একটাই প্রচারণা হয় যে, বিএনপি এবং সেসময়ে তার মিত্র শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে সারাদেশে যেমন ভয়াবহ অগ্নি সন্ত্রাস করেছে, তেমনি দিচ্ছে জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় । এব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের তথ্যচিত্র তৈরি করার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে লবিং করে বিদেশী কূটনৈতিকদের ম্যানেজ করে ফেলে। বলা হয়, বিএনপি এবং সেসময়ে তার মিত্র শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী মিলে দেশে একটি সাম্প্রদায়িক সরকার কায়েম করতে চায়। যদিও বিএনপি এধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বরাবরই। কিন্তু আ. লীগ শক্তিশালি এবং জোড়ালো প্রচারণা বিএনপি’র পক্ষ থেকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্য হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। 

ভারতে বিএনপি’র বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা

এ ব্যাপারে বিএনপি’র একজন নেতা একান্তে আলাপকালে জানান আরো করুন অভিজ্ঞতা। জানান দেশ প্রতিনিধিকে যে তিনি যখন বছরে দু’এক আগে ভারতের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। সেই অনুষ্ঠানে ভারতের বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদদের কথা শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপি’র এই নেতা দেশ প্রতিনিধিক বলেন, ভারতের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেছেন। জানতে চেয়েছেন, বিএনপি’র কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিশ্বাসী কি-না? বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কি একাত্তরে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরের সমর্থক বা সহায়তাকারী ছিলেন কি-না? এসব শুনে বিএনপি নেতার সেসময়ে চোখ ছানাবড়া..। তিনি দেশ প্রতিনিধিকে বলেন, আ. লীগ এবং তার সাথে সংশ্লিষ্টারা প্রতিবেশী দেশটিকে এমনভাবে বিএনপি’র বিরুদ্ধে উপস্থাপন করেছে যা বিস্ময়কর ঠেকেছে তার কাছে। তিনি বলেন, একিইভাবে পশ্চিমাদের কাছেও বিএনপি’র বিরুদ্ধে আ. লীগ ঠিক একিই কায়দায় সফলভাবে উপস্থাপন করেছে। আর একারণে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি স্বাধীনতা বিরোধী ও মৌলবাদি শক্তি জামায়াতের কাতারে বিএনপি’কে রাখা হয়েছে। এই নেতা আরো বলেন, বিএনপি’র গায়ে এধরনের গন্ধ আর কালিমা মুছতে দেশে বিদেশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এখন আওয়ামী লীগ ভারত কিংবা পশ্চিমাদেরকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে এসব তকমা দিয়ে হালে পানি পাচ্ছে না। 

এ কারণেই নতুন অভিযোগ.. অগণতান্ত্রিক শক্তির আওয়াজ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই কারণেই পুরনো তকমা বাদ দিয়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধে মাঠে নতুন অভিযোগ হাজির করেছে আ. লীগ। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে আ.লীগের শীর্ষ থেকে গণতন্ত্রের দাবিতে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখা হয়। এতে বলা হয়, যখন তাদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের কথা শোনেন তখন তিনি অবাক হন। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হত্যা, অভ্যুত্থান ও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছে। জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং ভোট কারচুপির মধ্য দিয়ে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। “সুতরাং গণতন্ত্র শব্দটি তাদের সঙ্গে যায় না”। আবার গত ২ অক্টোবর সোমবার যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশবিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় দলের সদস্যরা (এপিপিজি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে তাজ হোটেলে সাক্ষাৎকালে তিনি তার আশঙ্কা কথা জানান। লন্ডনে এপিপিজি সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, কোনোভাবেই অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে আ. লীগ এখন সারা দুনিয়া প্রচারণা চালাচ্ছে যে বিএনপি অগণতান্ত্রিক সরকার চায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল ও নির্বাচনি পরিবেশ বিনষ্টের গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা অতীতের ধারাবাহিকতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। একই সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের চলমান অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়।

এমন প্রচারণায় শেষ কোথায়....লাভ-ই বা কি?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে করতে রাজনীতির মাঠে সরব বিএনপি’র নেতৃত্বে আছে বিভিন্ন দল ও জোট। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে অহিংস আন্দোলনে করে যাচ্ছে বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। অন্যদিকে মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে শান্তি সমাবেশের নামে পাল্টা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। চলছে নিয়মিত সাংগঠনিক তৎপরতাও। আর এসবের পাশাপাশি দেশে- বিদেশে বিএনপি ও তার সাথে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা। এরই একটি অংশ হিসাবে বলা হচ্ছে, বিএনপি বাংলাদেশে একটি অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে গভীর যড়যন্ত্র করছে। এর পাশাপাশি বলা হচ্ছে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে বিএনপি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, আমেরিকাসহ পুরো পশ্চিমারা এখন বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। বাংলাদেশে একটি পিউর গণতন্ত্রের মডেল দেখতে চায়। তারা প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র চায় না। আমেরিকাসহ পশ্চিমারা যদি ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনকে মনে প্রাণে গ্রহণ করত তা হলো তো এসময়ে এসে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আওয়াজ জোড়ালো করতো না। অন্যদিকে তাদেরকে যে সরকার এখনো পর্যন্ত আশ্বস্ত করাতে পারছে না তেমন প্রমাণও মিলেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের একটি বক্তব্যে। তিনি বলেছেন অন্ধকারে ব্যালটবাক্সে ভোট পড়ার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। দেশে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও আধুনিক উল্লেখ করে তা দেখতে বিদেশিদের আসার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। এরই মধ্যে বিদেশীদের এখনো পর্যন্ত আশ্বস্ত করা গেলো না বলেই এখনো বলতে হচ্ছে ’অন্ধকারে ব্যালটবাক্সে ভোট পড়ার অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।’ আর এসব কারণে অগণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে গভীর যড়যন্ত্রের পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চক্রান্তের ব্যাপারে বিএনপি’র বিরুদ্ধে অভিযোগ কতটা হালে পানি পাবে তা-নিয়ে সন্দিহান পর্যবেক্ষক মহল।

শেয়ার করুন