২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:০৫:১৫ অপরাহ্ন


বর্ষা আশীর্বাদে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে বিদ্যুতের
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
বর্ষা আশীর্বাদে সঙ্কট কেটে যাচ্ছে বিদ্যুতের


মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুন মাসের শুরুতে তীব্র গরমের কারণে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ১৬০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছায়। একই সময়ে ডলার সংকটের প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানি সংকটে পর্যায়ক্রমে রামপাল এবং পায়েরা আমদানিকৃত কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সাময়িকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্থগিত হয়, তেল চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকেও ক্ষেত্র বিশেষে বিদ্যুৎ উৎপাদন সীমিত হয়ে পড়ে। এই পর্যায়ে ১৬০০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১২০০০-১৩০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা হারায় বিদ্যুৎ বিভাগ। ৩০০০-৩৫০০ উৎপাদন ঘাটতির ফলে অসহনীয় লোডশেডিং জনজীবন বিষময় করে তোলে।  

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী সার্বিক অবস্থা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে দৈর্য্য ধারনের পরামর্শ দেন। কয়েকদিনের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলধারায় বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তাপ মাত্রা উল্লেখজনকভাবে কমে আসে। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ চাহিদা কমে ১৩০০০ মেগাওয়াট দাঁড়ায়। ইতিমধ্যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে ফিরে আসে। চট্টগ্রামের বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়েকদিনের জন্য পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও উৎপাদন শুরু হয়। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানি সংকট কেটে যাওয়ায় আশা করা যাচ্ছে ২৬ জুন থেকে পর্যায় ক্রমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনে ফিরে আসবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কয়লা ক্রয়ে কোনো সংকট না হলে এবং আবার সহসা তীব্র গরম না পড়লে আর বিদ্যুৎ সংকট হবে না। তড়িৎ ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং সরকার বাহবা পেতেই পারে। 

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, আদানির ভারতীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট পুরোদমে চালু হওয়ায় কয়লা চালিত বিদ্যুতের সরবরাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে এস আলম গ্রুপের বাশখালীর এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্র থেকেও পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ ও ৩০ জুনের মধ্যে এসএস পাওয়ারের পরপর দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আগামী ২৫ জুনের মধ্যে কয়লা আসবে। এতে করে উৎপাদন আরও বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে ২৫ জুনের পর পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। সব মিলিয়ে পায়রা, এসএস পাওয়ার এবং রামপাল থেকে অন্তত ২ হাজার ৮৮৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

আগেই বলেছি ভরা বর্ষা মৌসুমে বিলম্বিত বৃষ্টি আশীর্বাদ হয়ে আশায় বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬০০০ মেগাওয়াট থেকে কমে ১২ জুন ১১৫০০ মেগাওয়াট নেমে আসে। এই দিন ১১,১২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় ঘাটতি দাঁড়ায় মাত্র। 

১১ জুন রোববারও লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। ১৩ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ছিল ১১ হাজার ৯৭৬ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৬৪ মেগওয়াট। এর আগে ৬ জুন রাত ১টা নাগাদ সর্বোচ্চ ৩ হাজার ২৬৬ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। তখন মোট চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৪৬ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ ছিল মাত্র ১১ হাজার ৪৮০ মেগাওয়াট। জ্বালানি ঘাটতির কারণে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পর এ বছর এটি রেকর্ড লোডশেডিং ছিল।

সরকার ব্যর্থ হলে, জন দুর্ভোগ হলে সমালোচনা হবেই। তবে দেখতে হবে সীমিত সামর্থ নিয়ে সরকার কতটা আন্তরিক। ২০০২ -২০০৬ এবং পরবর্তীতে ২০০৯, ২০১০ সময়ের কথা স্মরণ করলে এখনো বিভীষিকা মনে হয়। তখন ১০-১২ ঘন্টা বিদ্যুৎ লোড শেডিং ছিল নিত্য দিনের সঙ্গী। আমি সরকারের জ্বালানি ব্যাবস্থাপনা নিয়ে ১০০% সন্তুষ্ট নই। যথেষ্ট গলদ আছে। সেই সঙ্গে বৈষয়িক সংকট সমস্যা ঘনীভূত করেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাজের সমন্বয় না থাকায় জ্বালানি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এটির স্থায়ী সমাধান না হলে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে না। আত্মতুষ্টির কোনো কারণ নেই। সরকারসহ সবাইকে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যাবহারে সাশ্রয়ী হতেই হবে। একই সঙ্গে দেশজ প্রাথমিক জ্বালানি যোগান বাড়াতে হবে। নবায়ণযোগ্য জ্বালানিকে প্রণোদনা দিয়ে অবদান বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে হবে।

শেয়ার করুন