০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:০৫:৩৭ অপরাহ্ন


ছাড় দেয়া হচ্ছে না বিএনপি’কেও
বিএনপি’কে নির্বাচনে আনতে আ.লীগকে কঠোর চাপ আমেরিকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
বিএনপি’কে নির্বাচনে আনতে আ.লীগকে কঠোর চাপ আমেরিকার


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর কঠোর চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি করাতে সব ধরনের পরিস্থিতি তৈরি ও পদক্ষেপ নিতে এই চাপ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সন্তোষজনক পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তেমন পরিস্থিতিতে যেনো বিএনপি অংশ নেয় সেজন্য এই দলটিকে (বিএনপি) কঠোর চাপে রাখা হচ্ছে। আর এর ব্যতয় হলে অর্থ্যাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি ও বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হলেও কঠোর পরিস্থিতির মুখে পড়বে দলটি।


অপরদিকে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পরও বিএনপি সেক্ষেত্রে নির্বাচনে অংশ না নিলে উভয়ের ক্ষেত্রেই যে মার্কিন ভয়াবহ খড়গ নেমে আসবে-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক এমন বার্তাই দেয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোনা যাচ্ছে। আর এধরনের পরিস্থিতি তৈরির আগে শর্তহীন সংলাপে বসে বিষয়টি ফয়সালার তাগিদ দেয়া হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস কর্তৃক বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে যে চিঠি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’ দিয়েছেন তাতে সেই বার্তাই আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারত তার স্পষ্ট অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করার খবর দিয়ে দাবি করা হয় যে সরকারে স্বস্তি তৈরি হয়েছে। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছিলো যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের কথাই শেষ। বিশেষ করে, বিএনপি ঘরানার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জনগণের মধ্যে একটা ধারণা দেখা দেয় যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতের সাথে দহরম মহরমের কারণেই ভারত এখনো বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারছে না। আর একারণেই দিল্লীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে অনুষ্ঠিত ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষেই গেছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন খবরে তোলপাড়ের মূহূর্তে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠি দেয়ার ঘটনা রাজনীতিতে নাটকীয় মোড় নিয়েছে। তিনটি দলের কাছেই চিঠিটি দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। এতে করে বোঝা যাচ্ছে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। 


চিঠিতে কি আছে

বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে পৃথক পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি দিয়েছেন তার ভাষা বা মর্মকথা হচ্ছে প্রায়ই একিই রকম। চিঠিতে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে তিন দলকে ডোনাল্ড লুর চিঠিটি দিয়েছেন-যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক এব্যাপারে গণমাধ্যমে বলেছেন, চিঠির বিস্তারিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে শর্তহীন সংলাপের আহ্বানও জানানো হয়েছে। চিঠিতে মূলত তিনটি বিষয়ে বলা হয়েছে বলে বিস্তারিত জানান। বলেন, প্রথমত: যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন দেখতে চায়। দ্বিতীয়ত: শর্তহীনভাবে সংলাপের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয়ত: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি গ্রহণ করেছে, চিঠিতে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।


চিঠির পর কি হচ্ছে? 

বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে পৃথক পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি দেয়ার খবরে দৃশ্যপট কিছুটা পাল্টে গেছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তার দেয়া চিঠিতে যে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন তার পরিবেশ পরিস্থিতি কি আছে? এমন সংলাপের আয়োজন কিভাবে হবে? সেধরনের পরিস্থিতি না হলে কি হবে এমন আলোচনা সর্বত্র। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠির পর সংলাপের পরিস্থিতি সৃষ্টি আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ১৪ নভেম্বর দুপুরে বিএনপি কার্যালয়ের কাছে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন পরিবেশ। রাজধানীতে বিএনপির নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুই পাশে রাখা লোহার ব্যারিকেড বা রোডব্লক সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৩ নভেম্বর সোমবার রাত বারোটার দিকে ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়া।


কিন্তু দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এখনও তালাবদ্ধ রয়েছে। আছে পুলিশের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশের কলাপসিবল গেইট বাইরে থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে। তারা এটি করেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে দলের কার্যালয়ের সামনে থেকে ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলার ঘটনা যে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র দেয়া চিঠির পরই ঘটেছে তা স্পষ্ট। অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে বুধবার (১৫-১১-২৩) বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তফসিল কবে হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো দেওয়া হয়নি কমিশনের পক্ষ থেকে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব জাহাংগীর আলম। তিনি বলেছেন, চিঠিটি সংলাপের আহ্বান জানিয়ে কি না, সেটা কমিশন অবহিত নয়। কারণ, চিঠি কমিশনের কাছে আসেনি। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলের মতে, যতোই বক্তব্য রাখা হোক না কেনো বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে পৃথক পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি দিয়েছেন তার একটি সর্বশেষ ফলাফল অর্থ্যাৎ সংলাপ হবে কি-না তা দেখার অপেক্ষায় আছে ইসি। 



এরপর কি হতে পারে?

প্রধান তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিকে পৃথক পৃথকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যে চিঠি দিয়েছেন তার ভাষা বা মর্মকথা হচ্ছে শর্তহীন সংলাপ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট যেনো দ্রুত সমাধান করে ফেলা হয়। কারণ ভূ-রাজনৈতিসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশের এই (রাজনৈতিক) সঙ্কটের সুন্দর সমাধান জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এটি হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেনেরও রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ। বাইডেন প্রশাসন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখাতে চায় যে বিশাল প্রতিকূলতা কাটিয়ে বাংলাদেশে তা-র প্রশাসন গণতন্ত্র আনতে পেরেছে। আরেকটি দিক হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশের বিরাট একটি অংশ অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মোদ্দা কথা প্রকৃত গণতন্ত্র চায়।


আর সে-টি আনতে পারলে বাংলাদেশের মানুষ তা সাদরে গ্রহণ করবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ঋণী থাকবে, ভুলে যাবে তাদের অতীত। আর এমন পরিস্থিতি আচ করেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখছে। তবে সে ধরনের প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পাশাপাশি মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র সহযোগিতা না পেলে উভয়ের ক্ষেত্রে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। উভয় দলের জন্যই যে ভিসা নীতি যে কঠোর হবে তা স্পষ্ট-এমন বার্তাও আছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র পাঠানো চিঠিতে।

শেয়ার করুন