২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:৩৫:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপেষু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


আপনার গতিশীল নেতৃত্বে দেশজুড়ে যখন ‘উন্নয়নের জোয়ার’, আপনাদের দাবি অনুযায়ী ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে যখন ‘স্মার্ট’ বাংলাদেশের স্বপ্ন, তখন আপনাকেই প্রশ্ন করা সাজে! 

প্রিয় শহর তিলোত্তমা ঢাকা এখন কেন বসবাসের জন্য নিকৃষ্টতম শহরগুলোর শীর্ষে? যানজট, জলজট, শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, গ্যাস-দুর্ঘটনা, অগ্নি-দুর্ঘটনার শঙ্কায় ঢাকা অনেকের মতে জীবন্ত বোমার সঙ্গে বসবাস করছে। ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছে ঢাকা মহানগরী। আপনার দেশপ্রেম, ঐকান্তিক প্রয়াস এবং নিবেদন নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না। কিন্তু আপনার পরামর্শক, মন্ত্রী, সাংসদরা কী করছেন? কী করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিল, সেনা-আমলাগোষ্ঠী মহোদয়গণ। এমনিতেই নানা কারণে আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্যের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত, তার ওপর ঢাকায় এখন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। 

এবার নিয়ে চতুর্থবার আপনার নেতৃত্বের সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। আপনার নেতৃত্বেই চলছে সবকিছু। কারা, কীভাবে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ঢাকা মহানগরীকে অভিশপ্ত করেছে আপনি সবই জানেন। আপনি চাইলেই স্বল্পতম সময়ে অনেক কিছুই করতে পারেন। আজ ঢাকার যে মলিন বেশ সেটির স্বপ্ন কিন্তু আপনার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু জাতিকে দেখাননি। নিঃসন্দেহে তার বিদেহী আত্মা ঢাকার বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিদিন ঢাকা বায়ুদূষণে নিকৃষ্ট শহরের কলঙ্ক ব্লক পড়ছে, অগ্নি-দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। অথচ আমাদের কৈশোরে ষাটের দশকে ঢাকা ছিল ছায়া ঢাকা, পাখি ঢাকা নির্মল শান্তির শহর। 

আপনার সমীপে কিছু সুপারিশ করতে চাই- 

অবিলম্বে ঢাকা মহানগরীতে মেট্রোপলিটন গভর্নেন্স পদ্ধতি চালু করে সব সেবা কার্যক্রম এবং উন্নয়ন কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব মেয়র অফিসে অর্পণ করা হোক। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণের মেয়রদের সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা করে কাজের স্বাধীনতা দেওয়া যেতে পারে। দুটি মেয়র কার্যালয় উন্নত দেশগুলোর সিটি কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাকে টুইন সিটি পদ্ধতিতে উন্নয়ন করতে পারে। সেক্ষেত্রে নগরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, মশক নিধন, পরিবেশদূষণ রোধ, উন্নয়ন কার্যক্রমে অনেক শৃঙ্খলা আসবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কার্যক্রম মেয়র অফিসের মাধ্যমে এককেন্দ্রিক নিয়ন্ত্রিত হবে, মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিববৃন্দ মেয়র অফিসের সঙ্গে সমন্বিতভাবে মহানগরীর সব কার্যক্রম মনিটরিং করতে পারবে। 

সরকার কিন্তু ঢাকার ট্রাফিক-ব্যবস্থা উন্নয়ন, চারপাশের নদীগুলো দখলমুক্ত করে সার্কুলার নদীপথ চালু, ঢাকার পুরোনো খালগুলো পুনরুদ্ধার করার কম কার্যক্রম গ্রহণ করেনি। কিন্তু সমন্বিত কার্যক্রম না থাকায় বিপুল অর্থ খরচ করেও কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত জনদুর্ভোগের অবসান করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে কেউ কারো কথা শুনছে না। যার এককথায় জবাব কোনো স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নেই। সুশাসনের অভাব সর্বত্র। ডিজিটাল বাংলাদেশে কেন শুনতে হবে ঢাকায় লক্ষাধিক বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে রাজউকের অনুমোদন উপেক্ষা করে? কেন ৪৬ জন নিরীহ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর পর শুনতে হবে অভিজাত এলাকার ভবনটিতে অনুমোদনহীনভাবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চলছিল? সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে এখন যে কার্যক্রম চালাচ্ছে, সেগুলো কেন নিয়মিত করা হয়নি? নিরীহ মানুষদের অকাল অপমৃত্যুর জন্য কারো কি কোনো দায়বদ্ধতা নেই? সরকারের মন্ত্রীরা কথায় বিরোধীদলের ষড়যন্ত্রের বায়বীয় অভিযোগ করে। কিন্তু আয়নায় নিজেদের মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা দেখে না। সবকিছুই যদি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হয়, তাহলে এতো বিশাল মন্ত্রিসভা, উপদেষ্টামণ্ডলী, আমলাদের বহর জনগণের পয়সায় পালতে হবে কেন? 

আমি সরকারপ্রধানকে অনুরোধ করবো, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তিন মাস, ছয় মাস, এক বছরের কর্মসূচি বেঁধে দিয়ে অর্জনের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা। ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। একটি উন্নয়নশীল দেশ সব পেশার পেশাজীবীদের সম্মিলিত স্বতঃস্ফূর্ত অবদানের ভিত্তিতে এগিয়ে যায়। সরকারপ্রধান হয়তো বুঝতে পারছেন কিছু উপদেষ্টা সরকারকে অতিমাত্রায় আমলানির্ভর করে ফেলায় সব ক্ষেত্রেই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। শাসনব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন না হলে ‘কেউ কারো কথা শোনে না’-সংস্কৃতি থেকে মুক্তি মিলবে না। 

তিলোত্তমা ঢাকা আর কখনো অর্জিত হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশ সৃষ্টির সম্ভাবনা দূর আকাশের তারা হয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে।

শেয়ার করুন