২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:০২:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


‘এরা হৃদয়হীন, মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-১১-২০২৩
‘এরা হৃদয়হীন, মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়’ গ্রেফতার এক বিএনপি নেতার স্বজনদের কান্না


একেবারে হৃদয়হীন একটা সরকার। এরা মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়। ফরমায়েসী ও গায়েবী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। গত ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির আটক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধনে সমবেত হয়। তাদের অনেকের হাতে প্রিয় স্বজনের প্রতিকৃতি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ছিলো। এসব স্বজনরা তাদের কষ্ট ও বেদনার কথা বলতে গিয়ে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়লে পুরো সমাবেশস্থল এক মর্মস্পর্শী পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

ফরমায়েসী ও গায়েবী মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির চেয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তাদের স্বজনরা। ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে কারাবন্দি স্বজনদেরে পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কারাবন্দি মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাস এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। দুই পৃষ্ঠার এই স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে কারাবন্দি বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা বিচার প্রার্থীদের শেষ আশ্রয়স্থল এই সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘‘আমাদের বিশ্বাস, বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে দেশের বিচার বিভাগকে রক্ষা করা, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আপনি (প্রধান বিচারপতি) অগ্রণী ভূমিকা রাখবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান দমন-পীড়ন, মিথ্যা, গায়েবি হয়রানিমূলক মামলায় গণগ্রেফতার, পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতন, ঢালাও সাজা প্রদান, জামিন প্রদানে না করার বিষয়ে আপনার উদ্যোগী ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। আমাদের অনুরোধ থাকবে, গণগ্রেফতারকৃত বিএনপি ও বিরোধী মতালম্বী রাজনৈতিক বন্দিদের আশু মুক্তির জন্য আপনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালতসমূহের প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।” সমাবেশের পর স্মারক লিপিটি প্রধান বিচারপতির কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে রাজবন্দি স্বজনরা যেতে রওনা হলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশ বাধা দেয়। পরে কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয় এবং একই সঙ্গে রেজিস্ট্রি ডাক যোগেও পাঠানো হয়।

‘স্বজনদের কষ্ঠ-বেদনার কথা’

২৮ অক্টোবরের পর গ্রেফতার হওয়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী অসুস্থ আফরোজা আব্বাস হুইল চেয়ারে করে কর্মসূচিতে আসেন। সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমনপীড়নের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওরা এতো নির্মম, ওরা অত্যাচারি। ছোট ছেলেকে না পেলো বড় ভাইকে ধরে নিয়ে যায়, বড় ছেলেকে না পেলে বাবাকে নিয়ে যায়, বাবাকে পেলো না বোনকে নিয়ে যায়-আমরা এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের মধ্যে বসবাস করছি। এটা কেমন দেশ? এখানে এসেছেন এক কারবন্দি নেতার স্ত্রী তা দু‘জন শিশুকে নিয়ে। ওই শিশুদের বাবাকে পুলিশ কারাগারের নিয়ে গেছে। তারা আজকে প্রতিবাদ করার ভাষা ভুলে গেছে, প্রতিবাদ করলে দেখা যায় তাকেও ধরে নিয়ে যায় বাসা থেকে।” ‘আমার বাসায় কিভাবে হামলা হয়েছে, আমার বাসার লোকজনকে তুলে নিয়ে যায়, মারধর করে- এটা কোন দেশে আমরা বসবাস করছি। আমরা আইনের ন্যূনতম সুবিধাটুকু পর্যন্ত পাচ্ছি না।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, হাবিবুর রহমান হাবিব, লুতফুজ্জামান বাবর, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারওয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বিলকিস জাহান শিরিন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বাণিজ্য বিষয় সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, শরিফুল আলম, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, শামীমুর রহমান শামীম, শেখ রবিউল আলম, রফিকুল ইসলাম মজনু, আমিনুল হক, সাইফুল আলম নিরব, মুনায়েম মুন্না, আবুল কালাম আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর, আকরামুল হাসান, আজিজুল রহমান মোসাব্বির, আনিসুর রহমান লাকুসহ জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) আহসান হাবিব লিংকন, জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখের মুক্তি দাবি জানান আফরোজা আব্বাস।

মানববন্ধনে সমাবেশে কারাবন্দি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম অসুস্থ থাকায় তিনি একটি ছোট চিঠি পড়ে শুনান মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।

ফরমায়েসী রায়ে সাজাপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক সাংসদ মোহাম্মদ শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, ‘‘আমার স্বামী সম্পূর্ণ বিনা দোষে বিনা অপরাধে দুই বছরের সাজা দিয়ে জেলে আটক রাখা হয়েছে। এরকম অনেক বিএনপিসহ বিরোধী নেতা-কর্মী, ভিন্নমতের মানুষের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশকে একটা কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। এটা অবসান আমি চাই।”

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবুল কালাম কালামের শিশু ছেলে ফুয়াদ বলেন, ‘আমি বাবাকে ছেড়ে দেন, প্লিজ আমার বাবাকে ছেড়ে দেন (কাঁদতে থাকে)।’

কারাবন্দি দুই ছেলের (আবদুর রহিম ভুঁইয়া, আবদুর রহমান ভুঁইয়া) বাবা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, ‘আমি একটি নির্যাতিত পরিবারের অভিভাবক। আমি বিএনপি করি। এটাই আমার অপরাধ। আমার ছেলেরা বিএনপির অঙ্গসংগঠন করে। আমার বড় ছেলকে না পেলে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। আজকে আমরা বিএনপি করি বলে আমার পরিবারের ওপর এই ঝড় নেমে এসেছে। আমার প্রশ্ন বিএনপি করা কি অপরাধ?’

যুব দলের সাবেক নেতা এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, ‘আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এটা কোন ধরনের জুলুম। যেখান পুলিশ মামলার বাদী, পুলিশ মামলার সাক্ষী দেয়। আমাদেরকে কিছুই বলতে দেয় না। আমাদের উকিলরা যখন কথা বলতে যায় তখন ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বলেন, এখানে আইনের কথা বলবেন না। তাহলে আমরা কোথায় যাবো, কোথায় বিচার পাবো? আমরা আজকে মজলুম পরিবার।”

রাজবন্দি স্বজনদের মধ্যে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দসু তালুকদার দুলুর মেয়ে বলেন, ‘কারাবন্দি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাবিবুর রহমান হাবিবের স্ত্রী শাহানারা মায়া, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মেয়ে তাসমিনা তাব্বাসুম রাফি, সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের স্ত্রী শাহানা ইসলাম, মির্জা আব্বাসের ছোট বোন সাহিদা মির্জা, এসএম জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রাজিয়া জাহাঙ্গীর, ইদ্রিস আলীর স্ত্রী শিউলি বেগম, ছাত্র দলের আমানউল্লাহ আমানের মেয়ে মর্জিয়া আখন্দ, নেসার উদ্দিন রাব্বীর স্ত্রী মীরু, কাউসার হোসেনের স্ত্রী মোসা. মিনু আখতার, পিরোজপুরের কাজী ওয়াহিদুজ্জামান বাবলুর স্ত্রী তামান্না জাহান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

‘এই পরিস্থিতির অবসান করতেই হবে’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘এখানে আপনারা দেখেছেন অনেক মা, অনেক বাবা আজকে কাঁদছে- তাদের স্বজনরা আজ কেউ কারাগারে, কেউ গুম হয়ে গেছে, কেউ খুন হয়ে গেছে- কিন্তু এই সরকারের হৃদয়ে তাদের কান্না শব্দ নাড়া দেয় না। ওরা অবৈধ ক্ষমতাকে শুধু মাত্র টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের সমানে কারাগারে ঢুকাচ্ছে।’ এই পরিস্থিতি আমরা অবসান চাই। এই অবস্থার অবসানে আসুন এই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা রাজপথে নামি, প্রতিবাদ জানাই।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই স্বজনরা আছেন তাদের বুকের কান্না আপনারা শুনেছেন। আপনারা সবাই জানেন, গ্রেফতার করবার জন্য গিয়ে তাকে না পেয়ে যাকে-তাকে গ্রেফতার করছে, ভাইকে গ্রেফতার করছে- একেবারে হৃদয়হীন একটা সরকার। এরা মানুষের কষ্টে আনন্দ পায়। এরা এতোই হৃদয়হীন এতো পাষাণ তাদের হৃদয় এসব কথায় ওদের চিড়া ভিজে না।’ যাদের আত্মীয়-স্বজনরা জেলে আছেন তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বক্তব্য, আপনারা আজকে প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেবেন। প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেন কিনা জানি না, কিন্তু কাগজটা যদি পৌঁছে উনি (প্রধান বিচারপতি) যদি পড়ে দেখেন-উনার কিছু করবার আছে বলে মনে হয় না। বিচার ব্যবস্থা এখন একদম সরকারের হাতের মুঠোয়। পুলিশগুলো চলে সরকারের নির্দেশে, তার বাইরে নয়। অতএব লড়াই করতে হবে সরকারে বিরুদ্ধে রাজপথে। আমি মনে করি, হাজার হাজার নেতা-কর্মীদের হাজার হাজার স্বজনরা রাজপথে আসতে পারেন। আজকে যারা আয়োজক তাদেরকে অনুরোধ করব সেই পথে যান।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাজবন্দিদের স্বজনদের এই অনুষ্ঠানে মা-বোন-বাবার কথা শুনে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে চোখে পানি খুবই রাখা কঠিন। গত দুইমাস ধরে ইজরাইলের আক্রমনে গাজায় যেরকম মানবিক বিপযর্য় চলছে গত অনেকগুলো বছর ধরে ২৮ অক্টোবরের পরে এখানে মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। উচ্চ আদালতের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, বিরোধী দল করা কি অন্যায়? সরকার কি বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন? নিশ্চয়ই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। তাহলে কেনো এই জুলুম নির্যাতন? যেভাবে সরকারে জুলুম নির্যাতন, গণগ্রেফতার করছেন তাতে ফিলিস্তিনে মানবিক বিপর্যয়ের পড়ে বাংলাদেশে সেই অবস্থায় তৈরি হয়েছে। জেলখানায় মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আমরা পরিষ্কার করে এই নিবেদন আপনার কাছে রাখতে চাই, গত ২৮ অক্টোবর যে সমাবেশগুলো ছিলো তার মধ্যে বিএনপির মহাসমাবেশে আমরা মনে করি অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে কতিপয় এজেন্টদেরকে দিয়ে সেখানে পরিকল্পিত সহিংসতা তৈরি করা হয়েছে। সেই সহিংসতাকে ব্যবহার করে সরকার সমস্ত দোষ বিরোধী দলের ওপরে দিয়ে তারা নির্বিচারে একটা সর্বাত্মক দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদেরকে শত শত মামলা দিয়ে আজকে পর্যন্ত প্রায় ১৯/২০ হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ কাস্টডিতে তাদের ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি গণতন্ত্রের মঞ্চের নেতাদেরও গ্রেফতার করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে। নিম্ন আদালত কারো জামিন দিচ্ছেন না। এমনকি যারা অসুস্থ, রোগে আক্রান্ত এরকম ব্যক্তিদেরকে আসামী বানিয়েছে, তাদেরও জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে ওই নিম্ন আদালতের বিচারকরা বলছেন, তাদের নাকি কিছুই করার নেই- এরকম অবস্থা। মাননীয় প্রধান বিচারপতি বাংলাদেশ সামরিক স্বৈরাচারের শাসন দেখেছে, বাংলাদেশ এর আগে এমনকি নির্বাসিত সরকারের আমলেও নানারকম বিরোধী দলের ওপরে অত্যাচার দেখেছে- কিন্তু সেই সময়েও আমাদের দেশের আদালত এরকম আচরণ করেনি। আমরা আপনার কাছে বলতে চাই, আদালত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, জনগণের শেষ ভরসা। প্রধান বিচারপতি আপনি নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দেন তারা যাতে ন্যায় বিচার করেন। আর আপনার আদালত যদি ন্যায় না করেন বাংলাদেশের জনগনের আদালতে কেউ রেহাই পাবেন না, আপনাদের সবাইকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আজকে মায়েরা রাস্তায় নেমেছেন, আজকে শিশুরা রাস্তায় নেমেছেন, তারা ফরিয়াদ করছে ন্যায় বিচারের জন্য। বাংলাদেশের মানুষ রাজপথে নামার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কোনো দমনপীড়নে কাজ হবে না, রাজপথ দখল করে বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামতে বাধ্য করবে।’

আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরীর সঞ্চালনায় এই মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণঅধিকার পরিষদের নূরুল হক নূর, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবুল কালাম আজাদ, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ডা. পারভেজ রেজা কানন, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের রুহুল আমিন গাজী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। 

শেয়ার করুন