২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:১২:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মাহমুদুর রহমান মান্না বললেন
নির্বাচন কমিশন সরকারের চামচা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
নির্বাচন কমিশন সরকারের চামচা মাহমুদুর রহমান মান্না


বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ‘চামচা ইসি’ বলে সমালোচনা করেছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। গত ৩ এপ্রিল গণতন্ত্র মঞ্চের এক বিক্ষোভ সমাবেশে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, চামচা নামিয়েছে একটা নির্বাচন কমিশনকে। ও বিএনপিকে যে কত ভালোবাসে.. বলে একবার না খাইয়ের বার বার সাধিব.. আমার তোমার প্রতি যে প্রেম তা শেষ হবে না। এই বার ডেকেছি আসেনি.. ডাকতেই থাকবো। কোনোদিন কি সাড়া দেবে? সেই কথা বলতে পারেনি।

মান্না বলেন, ‘ওদের সঙ্গে যারা আছে সহযোগী, এক সঙ্গে আন্দোলন করছে তাদেরকেও ডাকবো। আবার নামও জানে না। সিপিবির কাছে চিঠি দিয়েছে দলের নাম লেখেছে আরেকটা। প্রেসিডেন্ট লিখেছে একজনের নাম, দলের নাম যা ২০টা মধ্যেই নাই সেইরকম এই নির্বাচন কমিশন এবং তারপর যাদের যাদের কাছে চিঠি লিখেছে, তাদের রিঅ্যাকশন আপনারা দেখেছেন। তারাও বলেছেন যে, আমরা এই ধরনের ফালতু আলাপ করতে রাজি নই।’

মান্না বলেন, কেন নামালো ওকে (ইসি) ওরা তো জানে যে, বিরোধীদল যে, আগেই প্রত্যাখ্যান করেছে। এবারো তারা এটা গ্রহণ করবে না। তবু করেছে কারণ বিশ্ববাসীকে বড় বড় রাষ্ট্রকে, বড় বড় দেশের নেতাদের দেখাতে চায়,  দেখো আমরা তো চেষ্টা করছি যাতে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে পারি। কিন্তু এটার নাম চেষ্টা না। এটার নাম ফোর-টুয়েন্টি, ফোর-টুয়েন্টি খেলা। কি আলোচনা করবেন? আমরা স্পষ্ট কণ্ঠে বলতে চাই, এই সরকার জনগণকে ভোট দিতে দেয় না। আগের রাতেই ভোটের বাক্স ভরে রাখে, সমস্ত রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার করে, এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার চালু আছে। অতএব উনি (শেখ হাসিনা) যতদিন আছে, তার অধীনে আমরা ভোটে যাবো না।’ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে প্রথম আলো পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান ও শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা অ্যাক্টে মামলা, র‌্যাবের হেফাজতে নাসরিন জেসমিনের মৃত্যু এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন : প্রথম আলো প্রসঙ্গে’

মান্না বলেন, খারাপ দেখায় যে অপরাধ করেছে সেই অপরাধ বিশ্বের উন্নত দেশে হলে এতোদিন পর্যন্ত সেই পত্রিকা বাতিল হয়ে যেতো। তো করেন না, বাতিল করেন প্রথম আলোকে? আপনাদের তো নিউজ পেপার বাতিল করার অভ্যাস আছে, আপনাদের যারা পূর্বপুরুষ তাদের কাছ থেকে সেটা পেয়েছেন তারা চারটা পত্রিকা রেখে সব বাতিল করে দিয়েছিল। আপনারা শাসমুজ্জামান শামসকে, একজন দরিদ্র রিপোর্টার সাভারে থাকে, তাকে গ্রেফতার করেছেন। মতিউর রহমানকে গ্রেফতার করতে তো পারলেন না, তাকে গ্রেফতার করতে পারবেন না এবং শামসুজ্জামান শামসকেও ছেড়ে দিতে হবে। মনে রাখবেন, যে ক্ষমতায় জোর করে বসে আছেন ঐ ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে কানতে কানতে বাড়ি চলে যেতে হবে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ জেগেছে, সারা বিশ্বের লোক জেগেছে, ঐ ব্লুমবার্গের ভোট ব্যাংকের রিপোর্ট দিয়ে কোনো কাজ হবে না। বাপ রে দেশের কত উন্নতি হয়েছে, বেকার নাকি কমে গেছে ৫০ লাখ। কোনো জায়গাতে দেখাতে পারবেন বেকার কমেছে। এখানে যতগুলো মানুষ বসে আছে সবার কাছে আমি বলি, নিজের নিজের বাড়িতে, নিজের নিজের ঘরে খোঁজ নিন কয়টা লোক চাকরি পেয়েছে বিগত পাঁচ বছরে। সম্ভবত পুলিশে দুয়েকজন যেতে পারে.. আর কোথাও চাকরি পায়নি।’

‘আন্দোলন আরো তীব্র হবে’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জনগণ সোচ্চার হচ্ছে, ফেসবুকে জনতাকে পাওয়া যায়। এটা রোজার মাস। প্রধানমন্ত্রীর বলেন, এই রোজার মাসের কর্মসূচি দিলেন কেন? আপনার র‌্যাব সুলতানা জেসমিনকে কথাই বলেননি হত্যা করতে পারে। তার বিচার করেন না। রোজার মাসে সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করতে পারেন, রোজার মাসে বিনা বিচারে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আটক করতে পারেন, নির্যাতন করতে পারেন। আমরা প্রতিবাদ করলে দোষ। আমরা প্রতিবাদ করবো। রোজার মাস বলে আন্দোলন তীব্র করতে পারছি না। আমি আপনাদের বলতে চাই, রোজা যাবে, ঈদ যাবে, মানুষ ঢাকায় ফিরবে। আবারো রাজপথে মিছিল শুরু হবে সেরকম মিছিল যে মিছিলে সরকারের বুকে কাঁপন ধরে যাবে। এমন আন্দোলন হবে সেই আন্দোলনের মুখে শুধু দেশ নয়, বিশ্বের বিবেক জেগে উঠবে সবাইকে তোমাকে চলে যেতে বলছে, তোমায় চলে যেতে হবে।’

সাইফুল হক বললেন 

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকার প্রচ-ভাবে নার্ভাস, সরকার খুবই টেনশনে। এক সাপ্তাহ গেলে আরেক সাপ্তাহ কীভাবে যাবে সরকারের উদ্বেগ। রোজার মাসের পরে বাংলাদেশে কি হবে সরকার গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে। লক্ষণটা কি? দৈনিক প্রথম আলো একটা জনপ্রিয় দৈনিকের একটা নিউজের বিরুদ্ধে সরকার রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সেই সাংবাদিকদের গ্রেফতার করেছে। সত্য বললে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের টুঁটি তারা চেপে ধরছে।’

যা বলেন জোনায়েদ সাকি 

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারীর জোনায়েদ সাকি বলেন, স্বাধীনতার মানে হচ্ছে মাছ-মাংস আর চালের স্বাধীনতা। এই যে মাছ-মাংস-চালের স্বাধীনতা, নিজের পেটের খাবার জোগানোর স্বাধীনতা এটা তারা (জনগণ) অর্জন করতে চায়। এটা দিতে পারে না বলে এবং না দিয়ে মাথাপিছু আয় নাকি ২ হাজার ৮০০ ডলার। আপনার ১০ লাখ টাকা আর আমার ১ হাজার টাকা এই দুইটা যোগ দিলে ভাগ করে যা হয়। একেক জনের আয় হয় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এই মাথাপিছু আয়ের সঙ্গে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বাস্তব জীবনের সম্পর্ক নেই। কাজে মিথ্যা কথা বলে, উন্নয়নের ফুলঝুরি করে কোনো লাভ হবে না। ভয় দেখিয়ে দমনপীড়নের করছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে আইনিভাবে দমনপীড়নের একটা অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চায় সরকার। জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রথম আলোকে এবার তো মওকা পেয়েছি এই মামলা দিয়ে ধরতে গেছেন। আওয়ামী লীগের যেসব বুদ্ধিমানেরা প্রথম আলোকে মওকা পেয়েছি.. ধরি এবং ঢুকিয়ে দেই বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, শেষ পর্যন্ত বের হলো একটা ভুয়া মামলা দাঁড় করিয়েছেন। মামলার এজাহারে লেখা আছে শিশু জাকির হোসেন নাকি এটা (মাছ-মাংস-চালের স্বাধীনতা) বলেছে। এটা ভুয়া কথা। কোন আক্কেলে এটা মনে হয় যে, ঐ শিশুটি এই কথা বলেছেন। এটা যারা মনে করেন, তারা হয় উন্মাদ। তারা উন্মাদ না তারা ভেবেছেন এটা একটা সুযোগ পাওয়া গেল যে, প্রথম আলোকে ধরি, ধরে জেলে পুরে দেই। কিন্তু সবকিছু জনগণের কাছে আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, প্রথম আলো কিংবা সংবাদমাধ্যমকে গলাটিপে ধরার চেষ্টা আর প্রথম আলোকে একটু জেলে ঢুকিয়ে দিলে বাকি সব সংবাদমাধ্যম তাদেরকে শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা- এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এখন এই বুদ্ধিমানেরা চুপসে গেলেও আমরা দেখছি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের অনেক সম্পাদক থেকে কিছু লোকেরা, শিক্ষক সমিতিরা এবং যারা ঘুষ-মুষ খেয়ে একেবারে নতজানু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভাইস চ্যান্সেলর হয়েছেন, তারা মিলে এখন বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছেন স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নাকি ষড়যন্ত্র করেছে। এই সরকার এবং তার চাটারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এই সরকার দেশের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে, দেশের মানুষের বিরুদ্ধে বিভক্তি তৈরি করে, দেশের সার্বভৌমত্ব-স্বাধীনতাকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। এদের সরিয়ে দিতে হবে।

মান্নার সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক সাকি আনোয়ারের সঞ্চালনায় এই বিক্ষোভ সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, মোশাররফ হোসেন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, গণ-অধিকার পরিষদের রাশেদ খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাধনা মহল বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন