২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:১৪:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ


ঘটনাবলিকে ওয়েকআপ কল বিবেচনা করতে পারে
শ্রীলঙ্কার উদহরণ বাংলাদেশে কেন?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
শ্রীলঙ্কার উদহরণ বাংলাদেশে কেন? শ্রীলঙ্কায় সংঘর্ষকালীন সময়ের এক চিত্র/ফাইল ছবি


কিছু মানুষ বুঝে না বুঝে বলছেন, ‘বাংলাদেশও অতি শিগগিরই শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কা থেকে এক্ষুণি শিক্ষা নেয়া উচিত।’ হঠাৎ করে শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশ হবে এ শঙ্কা কেন? সামাজিকঅবস্থান, ভূ-রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক অবকাঠামো, সামাজিক রসায়ন, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাই নয়, অনেক দেশের চেয়ে ভিন্ন।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের অবশ্যই কিছু কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক হবার অবকাশ আছে। কিন্তু আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। রাজনৈতিক নেতৃত্ব,সরকারঘনিষ্ঠ আমলা,ব্যবসায়ীরা অবশ্যই শ্রীলঙ্কার ঘটনাবলিকে ওয়েকআপ কল বিবেচনা করতে পারে। কিন্তু এখনো তৃণমূলে শাসকদলের বিপুল সমর্থন থাকায় এবং কার্যকর কোনো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি না থাকায় আমি অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি ঘটার সম্ভাবনা দেখি না। 

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শিক্ষিত আর সমৃদ্ধির দেশ শ্রীলঙ্কাভুল রাষ্ট্রীয় নীতি,দুর্নীতিপরায়ণ জাতীয় নেতৃত্ব এবং অদূরদর্শী  বিদেশি ঋণের ফেরে পড়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। জনতার তীব্র প্রতিরোধের মুখে রাজাপাকসে পারিবারিক দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। মন্ত্রী, সংসদ,সরকারঘনিষ্ঠ মহল পাড়া-মহল্লায় হেনস্তা হচ্ছে। একসময় পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করে বাংলাদেশেও এমনটি হবার কথা যারা ভাবছেন, তাদের এটি ভ্রান্তিবিলাস। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বাংলাদেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর।

সঠিক পথে চলা বাংলাদেশের বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি অনেক সুদৃঢ়।

রফতানি বহুমুখী, খাদ্যে অনেকটাই স্বয়ংসম্পূর্ণ, জ্বালানি নিরাপত্তা অনেক উন্নততর। আইনের শাসনের দুর্বলতা আছে, দুর্নীতি আছে। কিন্তু সক্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া অনেক ক্ষেত্রেই সরকারকে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রভাবিত করছে। সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। 

করোনা সময়ে ট্যুরিজম এবং চা শিল্প-নির্ভর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে বিকল্প কিছু করেনি সরকার। উপরন্তু বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ভাতা পরে। উপরন্তু অপেক্ষাকৃত কম উপযোগিতার মেগা প্রকল্পসমূহের বিদেশি ঋণের চাপে দেউলিয়া হয়ে পড়ে অর্থনীতি। বাছবিচার না করে কিছু দেশ বিশেষ করে চীনের ঋণ ফাঁদে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। 

বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মৌলিক পার্থক্য এখানেই। রফতানি বহুমুখী, রফতানি আয়ে সমৃদ্ধ, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। করোনা সময়ে নানা প্রণোদনা দিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখায় প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আরেকটি সাফল্য হলো একাধারে চীন, ভারত, কোরিয়া,জাপান, রাশিয়া ও আমেরিকা সকল পক্ষকে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে সম্পৃক্ত রাখা।

 বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর আর্থিক, অর্থনৈতিক উপযোগিতা আছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু (সড়ক, রেল,গ্যাস, বিদ্যুৎ), কর্তফুলী নদীতলদেশের টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা,রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ি-মহেশখালী বিদ্যুৎ জ্বালানি হাব, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, সিটি সার্কুলার রোড, রেল, বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক, ১০০ বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং অন্য মেগাপ্রকল্প২০৩১ নাগাদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মিলন মোহনায় পরিণত করবে।

তবে শঙ্কা আছে জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে। এটার সমস্যাগুলো চিহ্নিত হয়েছে। শতকরা শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ট্রান্সমিশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ২০২৫ নাগাদ দূর হবে। দেশের জ্বালানি সম্পদ আরোহণ আর উত্তোলন ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।

আমার মনে হয় না বাংলাদেশে বাস্তবায়িত এবং বাস্তবায়নাধীন মেগাপ্রকল্পসমূহের জন্য নেয়া ঋণসমূহ পরিশোধে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হবে। তবে প্রয়োজন সরকারি খরচে কৃচ্ছ্রতা, অপচয় হ্রাস এবং দুর্নীতি নির্মূল। সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে নির্ধারিত দায়িত্বে পদায়ন। ভবিষ্যতে মেগাপ্রকল্পসমূহ গ্রহণ করে অনেক সতর্কতার প্রয়োজন আছে। 

আমি প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ কৃষক সমাজ, শ্রমিকগোষ্ঠী, উদ্ভাবনী তরুণগোষ্ঠী নীরবে দেশকে এগিয়ে নিবে। নির্বাচন-ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনলে সরকার আমলা-নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে রাজনীতি রাজনীতিকদের হাতে ফিরিয়ে দিলে সরকারের কিছু নেই।

বাংলাদেশ প্রতিবেশী সকল দেশ এমনকি ভারত থেকেও এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ অবশ্যই স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে বিকশিত হওয়ার যাত্রাপথে আছে। রোড ব্লকগুলো সরে গেলে চলার পথ মসৃণ হবে।


শেয়ার করুন