২০ মে ২০১২, সোমবার, ০৮:০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন


যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর প্রতিবাদ সভা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৫-২০২৪
যুক্তরাষ্ট্র উদীচীর প্রতিবাদ সভা প্রতিবাদ সভায় অংশগ্রহণকারীরা


রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক নয় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র উদীচী। গত ৫ মে বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উদীচীর সভাপতি সুব্রত বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলিম উদ্দিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী কণ্ঠযোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী বকুল এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আনোয়ার বাবলু।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই ১৯৪৭ সালে আমাদের পিতা ও পিতামহরা মুসলিম ভাই ভাই শ্লোগানের আবেগে পড়ে দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানের সাথে আমরা যুক্ত হয়ে পড়েছিলাম। তারপর স্বাধীনতার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর চক্রান্তের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়ে। তারা আমাদের ভাষার ওপর আক্রমণ করে। ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু সমগ্র জাতি তখন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদের জন্য প্রস্তুত ছিল না। অনেকেই তখনও পাকিস্তনের মোহে আবিষ্ট। ফলে সমষ্ঠিগতভাবে প্রতিবাদের জন্য জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সময়ের প্রয়োজন ছিল। চার বছর পর ১৯৫২ সালে আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ জানাই। বুকের রক্ত দিয়ে আমরা আমাদের মুখের ভাষা বাংলা ভাষা রক্ষা করি। একইসাথে দ্বি-জাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই। সেদিন থেকে দ্বি-জাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধে একুশের চেতনা ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রামের পথ বেঁয়ে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে দ্বি-জাতিতত্ত্বকে কবর দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্ম। তারপর অল্পদিনের মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের আলোকে বাহাত্তর সালে শহীদের রক্তে লেখা হয় বাহাত্তরের সংবিধান। যাকে আমরা বাহাত্তরের সংবিধান বলে আখ্যায়িত করে থাকি। দুর্ভাগ্যজনক স্বাধীনতার ৩ বছরের মাথায় কিছু কুচক্রী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তারপর ক্ষমতার পালাক্রমে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে সংবিধানে ’বিসমিল্লাহ’ অন্তর্ভুক্ত করে নেন। জিয়ার অকাল মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন জেনারেল এরশাদ। ইতিমধ্যে এরশাদ স্বৈরাচার হিসেবে আখ্যায়িত। ক্ষমতার শেষ ভাগে এসে এরশাদ ১৯৮৮ সালে অষ্টম সংশোধনীর মাধ্যমে ’রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সংবিধানে সংযুক্ত করে নেন। তারা আরো বলেন, যেহেতু বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উভয় বিষয়ই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী এবং সাংঘর্ষিকও বটে। তাই তাৎক্ষণিক স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষে এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন দেশের ১৫জন বরেণ্য ব্যক্তি। তখনই দেশব্যাপী দাবি উঠে বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহালের। এমনি অবস্থায় ২০০৯ সালে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার আগে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল জনগণের দাবি বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল করার। তারপর ক্ষমতায় আসার একপর্যায়ে আদালত বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহালের রায় তথা আদেশ দিয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও তখনকার আইনমন্ত্রী শফিক আহমদ বিবৃতি দিয়ে ঘোষণা দেন আজ থেকে দেশে কোনও ধর্মীয় রাজননৈতিক দলের অস্তিত্ব থাকলো না। 

তারা বলেন, ২৩ বছর পর ২০১১ সালের ৮ জুন রিটটির ওপর হাইকোর্ট রুল দেন। সেদিন আদালত অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ১৪ জন জ্যৈষ্ঠ আইনজীবীর নাম ঘোষণা করে আদেশ দেন। এবং এর প্রায় পাঁচ বছর পর ২০১৬ সালের ৮ মার্চ রুলটি শুনানির জন্য আদালতে উঠে। কিন্তু আদালত সেদিন অ্যামিকাস কিউরি মনোনীত করার আদেশ প্রত্যাহার করে নেন এবং রিটটি খারিজ করে দেন। এমনকি রিটের পক্ষে উপস্থিত আইনজীবীদের কোনও কথা বলার কিংবা শোনার সুযোগটুকুও দেননি। এনিয়ে সেদিন প্রশ্ন উঠেছিল সরকারের গোপন হস্তক্ষেপে ও নির্দেশে আদালত এমনটি করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় রীটের ৩৬ বছর পর এবার আদালত রায়ের অভিমতে বলা হয়,ওই সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ২ক যুক্ত করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। তথা ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সাংঘর্র্ষিক নয়। আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমরা মনে করি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ধর্মনিরপেক্ষতা তথা বাহাত্তরের সংবিধানের সাথে অবশ্যই সাংঘর্ষিক। দুঃখের বিষয় রায়ের পর সপ্তাহ দু’তিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। সরকারের নীরব ভূমিকায় দেশের জনগণের মনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। 

শেয়ার করুন