২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:৫১:০০ পূর্বাহ্ন


ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০২-২০২৩
ডিসেম্বরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন


বাংলাদেশের অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও নির্বাচনী বছর, ২০২৩। বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সনের জাতীয় নির্বাচন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এবার আর তেমনটার সম্ভাবনা নেই। তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ এক লড়াইয়ের উত্তাপ ছড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচন। যেমনটা এবার সব দলের অংশগ্রহণের চলছে প্রস্তুতি। তেমনি উন্নয়ন সহযোগী বা দাতাগোষ্ঠীরও ব্যাপক চাওয়া সব দলের অংশগ্রহণমূলক ও  গ্রহণযোগ্য এক নির্বাচনের। এ প্রত্যাশা দীর্ঘদিন থেকেই। যত ঘনিয়ে আসছে দিন, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও আয়োজনের তৎপরতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেমনটা যাচ্ছে ক্ষমতা ধরে রাখতে। তেমনি বিএনপি ও সমমনা দলগুলো যাচ্ছে ক্ষমতাসীনদের অবসান ঘটুক এবং ক্ষমতার মসনদে তাদের স্থান হোক। কিন্তু কী হবে, কিভাবে হবে সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন। 

আপাতত ওই দিকটা আর নয়। এবার নির্বাচন মাঠের উত্তাপের ধরনটা কেমন সে নিয়ে কিছু আলোচনা। যেমনটা দীর্ঘদিন থেকেই বলে আসছে বিএনপি, যে তাদের কর্মসূচির দিনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে বসে থাকছে। যাতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা আতংক তৈরি হচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ ও বিএনপির সমমনা দলসমূহের নেতৃবৃন্দ বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেন এমন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দেন। ভীতি না ছাড়ান। এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বারবার তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং সেভাবেই পালন করে যাচ্ছেন। বিএনপি যাতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারে এ জন্যই আওয়ামী লীগের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বিএনপির কর্মসূচির দিনে তারা যেন কোনো কর্মসূচি না দেন। যেমনটা ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দিনে বিএনপি তাদের কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সেটা করছে না একেবারেই। বিএনপির কর্মসূচির দিনে তারাও কর্মসূচি দিচ্ছে। এর যৌক্তিকতা হলো- বিএনপি যাতে আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে সে জন্য বিএনপির কর্মসূচির দিনে তারাও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়ে মাঠে থাকছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ অভিযোগ তুলছেন, বিএনপি আবারও আগুন সন্ত্রাসের দিকে ফিরে যাবার প্ল্যান কষছে। ফলে সে পাহাড়া দিতেই তাদের মাঠে থাকা। বিএনপি এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির অবতারণার জন্য আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করছে। 

এমন অভিযোগ পালটা অভিযোগেই চলছে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে এগুলোর কাউন্টার দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি তারা দিচ্ছেন না। 

সম্প্রতি এক সভায় তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা বিএনপিকে প্রথম থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিযোগিতায় চেয়েছি। কিন্তু আমাদেরকে তারা বরাবরই শত্রুপক্ষ মনে করে আসছে। তারা গত এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাঠে আসছে। গত ডিসেম্বর থেকে তারা অনেক বড় বড় কথা বলছেন।’ 

আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে আমরা শান্তি সমাবেশ করব। তারা করে নয়াপল্টনে আমরা উত্তরায়। ১০ ডিসেম্বর তারা রাজধানীতে করেছে আমরা সাভারে করেছি।’ সেতুমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমাদের দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা কোনো কর্মসূচি দিলে কিছু সংবাদমাধ্যম বিএনপির কথাটিকে বলে। বিএনপি বলছে পাল্টাপাল্টি। আমরা তো পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিচ্ছি না।’ 

উল্লেখ্য, দীর্ঘ বিরতির পর বিএনপি গত ২০২২ সনের ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠের মাঠের কর্মসূচিতে ফেরে। সে সময় ১১ দিনের যে কর্মসূচি দিয়ে সুচনা করেছিল, তার মধ্যে একটি ছিল তৃণমুলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার। ১২ মার্চ ’২২ তারিখে বিএনপির উদ্যোগে সারা দেশে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে হাটবাজারে হাটসভা, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ হয়। সেখান থেকেই বিএনপির কর্মসূচিতে বাধাদানের চেষ্টা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ। যেটা ব্যাপক হয়ে ওঠে বিভাগীয় পর্যায়ের সমাবেশে। বিশেষ করে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় ব্যাপক শো ডাউন করে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসমূহ। 

এরপর থেকেই বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলে সেদিন কর্মসূচি রাখে আওয়ামী লীগও। এর মধ্যে গত শনিবার তৃণমুলে তথা ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি রেখেছিল। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন। সেটা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ। তিনি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরেরই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। ফলে এ মুহূর্তে রাজপথ অন্যদেরকে ছেড়ে দিতে বা ফাকা রাখতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। ফলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে তারা প্রকারান্তে ঘুরিয়ে পাশাপাশি কর্মসূচি বলার চেষ্টা করছেন সম্ভবত এ কারণেই।

শেয়ার করুন