১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০২:৫৪:৫২ অপরাহ্ন


উন্নয়ন অংশীদারদের উপর ক্ষোভ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৬-২০২২
উন্নয়ন অংশীদারদের উপর ক্ষোভ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর


বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন আরেকটি আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। এবার তিনি নাম উচ্চরণ না করে ‘উন্নয়নের অংশীদার’ রাষ্ট্রসমূহের কঠোর সমালোচনা করেছেন। উন্নয়নের অংশীদার কারা, সেটা তিনি ক্লিয়ার করে না বললেও ইশারাতে তিনি যেটা বুঝাতে চেয়েছেন সেটা তার আরেক কথার মধ্যে স্পষ্ট। কারণ তিনি কথা বলছিলেন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ও গম ক্রয় সম্পর্কে। এব্যাপারে তিনি ভারতের ‘বুদ্ধি’ চেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। এর আগে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের গৌহাটিতে নদী বিষায়ক এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে দেশে ফেরেন। এ সংক্রান্ত আলোচনায় নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলছিলেন কথাগুলো। ওই সম্মেলনে ভারতের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে যে আলোচনা হয় সেখানে তিনি রাশিয়া থেকে তেল ও গম ক্রয়ের বুদ্ধি চেয়েছেন। 

তিনি ভারতেরও কঠোর সমালোচনা করে, ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সইয়ের বিষয়টি ১১ বছর ধরে ঝুলে থাকার ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ এবং ‘লজ্জার’ বলে অভিহিত করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেন,‘রাশিয়া আমাদের কাছে তেল ও গম বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমরা তো ভয়ে। ওই নিষেধাজ্ঞার ভয়ে (রাশিয়ার উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদেশ (ইউই) নিষেধাজ্ঞা)। আমরা ভারতের কাছে জানতে চেয়েছি তোমরা কিভাবে করেছ। তোমরা তো (রাশিয়ার কাছ থেকে) নিচ্ছ। সেটা তারা বলেছে। জ্বালানী ক্ষেত্রে যে সমস্যা, সেটা তো আমাদের জন্য সত্যিকারের একটি সমস্যা। এ নিয়ে আমরা ভয়ে আছি। তাই আমরা তাদের কাছে বুদ্ধি চাই। বিশেষ করে তারা সেটা  (তেল ও গম ক্রয়) কিভাবে করেছে।’ 

এ সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন আরো বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ (ভারতের সাথে) আলোচনা হয়েছে। তারা কিভাবে পরিস্থিতি (রাশিয়ার কাছ থেকে তেল গম ক্রয়) সামাল দিয়েছে। তারা বড় দেশ, তারা ম্যানেজ করতে পারে। তারা কোনো পদক্ষেপ নিলে কেউ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়না। আমরা দরিদ্র, ছোটখাট দেশ, আমাদের উপর মাতব্বরি একটু বেশি।’ 

এ সময় একে আব্দুল মোমেন আরো যোগ করেন,‘মাতব্বরি তো দেখতেছেনই প্রতিদিন। আপনারাও (সাংবাদিক,মিডিয়া) তাদের উৎসাহ দেন। তারা প্রতিদিন একেকটা ইস্যু নিয়ে আসে। আমরা তাদের বলতাম ‘উন্নয়ন অংশীদার’। এখন উন্নয়নে এক পয়সাও দেয় না। কিন্তু খালি অ্যাডভাইস দিয়েই যায়। আর উন্নয়ন যাতে বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে, তার জন্য যত ধরনের ফরমাশ আছে, তা দিচ্ছে। অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন ধরনের শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। সেগুলো তো গ্রহণযোগ্য নয়। এ জন্যই আমরা ভারতের সঙ্গে আলাপ করেছি। এ জন্য আঞ্চলিক কিছু সংগঠন গড়ে তোলা, যাতে সমস্যা হলে আমরা সামাল দিতে পারি। এটা আমরা আলাপ করেছি। আঞ্চলিকভাবে আমরা স্থিতিশীলতা কিভাবে অর্জন করতে পারি, তা নিয়েও আলাপ করেছি।’ 

তবে এ বক্তব্যে ‘উন্নয়ন অংশীদার’ কারা সেটা স্পষ্ট না করলেও সেচ্ছায় ওইসব দেশের নীতিনির্ধারকদের মন্তব্য না আসাই স্বাভাবিক। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে একটা স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রকাশ মিলেছে। কিন্তু হঠাৎ তার এমন বক্তব্য কেন এ নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। কদিন আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরে সেখানকার শীর্ষ নেতাদের কাছে সামান্য বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশ নেয় এ ব্যাপারে সহায়তা চেয়ে তোলপাড় করেন। দেশের অভ্যন্তরীণ সামান্য এক বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ লোকজন কিভাবে সহায়তা দেবে। যদিও পরক্ষণেই তথ্যমন্ত্রী প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যটা নিছক তার ব্যাক্তিগত বলে উল্লেখ করেন। যদিও রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ খরচা করে মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে যেয়ে ওই কথা বলেছিলেন।

ওই ঘটনার পর বাংলাদেশ সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের কাছে বাংলাদেশের র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ব্যাপারে ভারতের সহায়তা কামনা করেও আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। এস জয়শঙ্কর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ক্লিয়ার করে বলেছিলেন, এ বিষয়টা নিয়ে তার পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে জিজ্ঞাসা করতে বলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান। পরে ওই ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি মেলেনি। তবে ওই বিষয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খাট হয়ে যাওয়ার সমালোচনা হয়েছিল। 

গোটা বিশ্ব যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিশেহারা, বাংলাদেশও তাদের মত এর প্রতিকারে অস্থির হয়ে ওঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুরদর্শী মনোভাব দেখিয়ে অনেক আগভাগেই ভারতের কাছে অগ্রীম অর্থ দিয়ে দেশের জনগণের জন্য তিন কোটি করোনা টিকা ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদন করে প্রশংসা কুড়ান। 

সে সময় ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার ভ্যাকসিন কিনতে অগ্রিম টাকা দেয় বাংলাদেশ সরকার। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাবে ৬০০ কোটি টাকার বেশি টাকা জমা দেয়া হয় বলে সেসময় খবর প্রকাশিত হয়। এর বিপরীতে সেরাম ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ সরকারকে একটি ব্যাংক গ্যারান্টিপত্র দেবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে বলে তখন বিবিসি জানিয়েছিল। 

পরে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলেছে, ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইন্সটিটিউট টিকা দিতে আগাম হিসেবে এ অর্থ নেবে। বাকি টাকা টিকা সরবরাহ শুরু করার পর দেয়া হবে। চুক্তির ধারা অনুযায়ী, সেরামকে আগামী জুনের মধ্যে টিকা দিতে হবে, না হলে বাংলাদেশ অগ্রিম এ টাকা ফেরত নেবে। কিন্তু টিক ও অগ্রীম অর্থের খবর কী সেটা সবারই জানা! জানা গিয়েছিল, চুক্তিতে উল্লেখ থাকে প্রথম তিন কোটি টিকা প্রাপ্তির পর আরো তিন কোটি টিকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবে বাংলাদেশ। কিন্তু টিকা উৎপাদনের পর অনেক দেনদরবার করে মাত্র ৭০ লাখ টিকা দিয়েছিল ভারত। বাকি টিকা এখনও দেয়নি। সে অর্থের কী খবর তারও হদিস নেই। 

প্রচন্ড তোপের মুখে থাকা বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাহায্যের হাত বাড়িয়ে কোটি কোটি টিকা দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের জনগণকে। সে টিকাতে বাংলাদেশের জনগণ ভয় কাটিয়ে আবার কাজে ফিরতে পেরেছে। দেশের অনেক উপকার হয়েছে। এটা গেল একটা ইস্যুর কথা। যা এত দ্রুত ভুলে যায়নি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। যা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণও করে দেশের মানুষ। 

এ বছরেরই গোড়ার দিকে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ২০২২ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে বিনা মূল্যে ফাইজারের তৈরি ১০০ কোটি ডোজ টিকা অনুদানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর অঙ্গীকার রয়েছে। এই অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে ফাইজারের তৈরি টিকার এই ধারাবাহিক অনুদান প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

ওই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ওই পর্যন্ত ৬ কোটি ১০ লাখ টিকা দিয়েছে বাংলাদেশকে। যার বেশিরভাগই অনুদানের অংশবিশেষ। এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে অনুদানের টিকা প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষে।


শেয়ার করুন