২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:৫৭:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


অ্যাকশনের আগে ডোনাল্ড লুর শেষ আন্টিমেটাম
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
অ্যাকশনের আগে ডোনাল্ড লুর শেষ আন্টিমেটাম ডোনাল্ড লু


জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা সমাগত। যে কোনো মুহূর্তে তফসিল ঘোষণা দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যে সিইসি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সকল আলাপ আলোচনাও সেরে ফেলেছেন। এরপরও অনিশ্চয়তার দোলাচল। তফসিল দেওয়া হবে কি? কখন? 

কারণ তফসিল ঘোষণা হলে দেশে বিরাজমান বিরোধী দলসমূহের আন্দোলনের মাত্রা অন্যরূপ ধারণ করবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও সমমনাদের অবরোধ বিরামহীন চলছে। প্রথম টানা ৭২ ঘণ্টার পর এখন এক বা দুদিনের গ্যাপ দিয়ে টানা ৪৮ ঘণ্টা করে কয়েকপর্বের অবরোধ চলছে। এরপরও তফসিল ঘোষণা হলে অসহযোগ আন্দোলন, নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি দেওয়ার কথাও শোনানো হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘টু প্লাস টু’ বৈঠক অনেককে ঈদের খুশিতে মনে হয়েছিল। সেখানে যদিও ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক। কিন্তু ছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। ঢাকার শীর্ষ দৈনিকে খবর বেড়িয়েছিল, ভারত বাংলাদেশের বিষয় তাদের অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিকও হতে পারে। তবু অবস্থার নড়চড় করবে না ভারত। এমতাবস্থায় ভারতকে খুশি রাখতে হয়তো যুক্তরাষ্ট্র তাদের দীর্ঘ প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে যে নীতি বা কৌশলে ছিল, সেটার পরিবর্তনও করতে পারে। কিন্তু এসব খবর নিয়েও ছিল দ্বিধা বিভক্ত। তবে এমনি মুহূর্তে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের শর্তহীন সংলাপের জন্য শীর্ষ দলসমূহকে (আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) সংলাপের আহ্বান আবারও ভিন্ন এক আবহ তৈরি করে ফেলেছে।

এরই মধ্যে আসন্ন ওই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির উদ্দেশ্যে চিঠি পাঠিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যথাযথভাবে ওই চিঠি পৌঁছেও দিয়েছেন। 

এবারের যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগটা অন্যরকম। এরআগে একের পর এক বিবৃতি দিয়েছেন, স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন থেকে শুরু করে শীর্ষ বহু কর্মকর্তা কখনো বিবৃতি, কখনো ঢাকায় এসে, কখনো বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা সচিবদের ডেকে নিয়ে বলেছেন যেসব কথা। এবারও সেই একই ধরনের কথা চিঠি দিয়ে জানালেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

ডোনাল্ড লু প্রসঙ্গটা উঠলেই অনেকের ভয়ার্ত একটা চিত্র সামনে এসে দাঁড়ায়। কথিত রয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হটিয়ে দেওয়ার প্রধান কারিগর এই লু। অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত ডোনাল্ড লুর দায়ভারটা তার একার নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রতিফলনটা তিনি করে যান। তাছাড়া তিনি তো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ফলে নামটা তার চলে আসবে সর্বাগ্রে এটাই স্বাভাবিক। 

এদিকে ডোনাল্ড লুর এমন চিঠির বক্তব্য ও ভাষা সরল সহজ হলেও এ চিঠি বাংলাদেশের বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আবারও উত্তপ্ত করে দিয়েছে। শোনা গিয়েছিল, বিএনপিকে বাইরে রেখে জাতীয় নির্বাচনটা হয়তো অনুষ্ঠিত হয়ে যাবে। কারণ বিএনপির শীর্ষনেতারা দণ্ডিত। বাকি যারা রয়েছেন তারা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনে এলে আসবেন, না এলে নেই। কারো জন্য তো নির্বাচনী ট্রেন থেমে থাকবে না। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বলে দিয়েছেন, সংলাপের দরজা বন্ধ। এর সঙ্গেও বিএনপি ও সমমনাদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। এটা অবশ্য শীর্ষ পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে অনারবত।

এমনি মুহূর্তে দিল্লির বৈঠক নিয়ে অব্যাহত মার্কিন ও পশ্চিমা জোটের অব্যাহত চাপের মধ্যে আশার আলো দেখা গেলেও ডোনাল্ড লুর চিঠিখানা, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হিমালয় ছুঁয়ে আসা শীতের পরশ বুলিয়ে যাওয়া বাতাস মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকণার উত্তাপে ইউটার্ন করে রূপ নিয়েছে। যাকে ইতিপূর্বে লু হাওয়া বলে অভিহিত করা হয়েছিল লুর উদ্যোগকে। 

তাহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু সেই পুরোনো ইস্যু। তফসিল কী ঘোষণা হবে? নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসক্রিপশন অনুসারে শর্তহীন সংলাপ-যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একেবারে উড়িয়ে দিয়ে চলছে। কী হচ্ছে, কী হবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজমান অনিশ্চয়তার দোলাচল আরো ঘনীভূত রহস্য। 

গত ১৩ নভেম্বর সোমবার ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র স্টিফেন ইবেলির পাঠানো জরুরি এক বার্তায় বলা হয়, আসন্ন নির্বাচন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে পুনর্ব্যক্ত করতে দেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। দূতাবাসের বার্তায় আরো বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বাংলাদেশে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। তারা সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার এবং সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানায়। যুক্তরাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক দলের বিপরীতে অন্য রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না। যুক্তরাষ্ট্র বিবদমান সব পক্ষকে শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানায়। সেই সঙ্গে দূতাবাসের বার্তায় এটাও স্মরণ করানো হয় যে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে পূর্বঘোষিত মার্কিন ভিসানীতি কার্যকর হবে। 

তবে এটাও ঠিক, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি ও নতুন করে সংলাপ আহ্বান-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে নতুন উদ্যোগে চলমান অচলাবস্থার বরফ গলতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। তবে সেটা যদিও হয়ও, তাতে বিএনপিসহ যেসব বিরোধীদল রয়েছে তাদের মূল শর্ত যদিও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা কীভাবে এড়িয়ে নতুন ফরমুলা সংযোজিত হবে। এমনকি বিএনপির ও বিরোধীদলসমূহের যেসব নেতাকর্মী কারাগারে, তাদের অবস্থা কী হবে বা নির্বাচনটাই কখন হবে নানা সমীকরণ চলে আসবে। যার প্রতিটির হিসাব-নিকাশ জটিল। 

তার আগে যাদের সঙ্গে সংলাপের কথা বলার ওই চিঠি, তাদের সিংহভাগ তো কারাগারে। সংলাপটাই বা হবে কীভাবে। এক্ষেত্রে যে নমনীয়তা দেখানোর প্রয়োজন পড়বে বিরোধী নেতাকর্মীদের অবমুক্তকরণের। এতে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি নিম্নমুখী হওয়ার যে লক্ষণ সেটা কী মেনে নেবে ক্ষমতাসীন দল-এ প্রশ্নটাও উঠছে! আবার কেউ কেউ বলছেন, অ্যাকশনের আগে সংলাপের জন্য ডোনাল্ড লুর এটা শেষ আল্টিমেটাম হতে পারে। 

শেয়ার করুন