২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৫৯:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


মানবাধিকারের জায়গাটা তিলে তিলে হারিয়ে যাচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
মানবাধিকারের জায়গাটা তিলে তিলে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে ডোন্ট গ্যাস এশিয়া ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনী


ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশীদ বলেছেন, “মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমি বলতে পারি যে মানবাধিকারের জায়গাটা তিলে তিলে হারিয়ে যাচ্ছে। বায়ু দূষণ, পরিবেশ দূষণ আমার খাদ্য, জলসহ প্রতিদিনের বসবাসের প্রতিটি ক্ষেত্রকে ধ্বংস করে ফেলছে। 

বাংলাদেশে ডোন্ট গ্যাস এশিয়া ক্যাম্পেইন-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শারমিন মুরশীদ আরো বলেন, উপকূল জুড়ে আমার কাজ রয়েছে; সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ আজ তাদের ঘর বাড়ি ছাড়া, সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব। আর এই জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে আমাদের আজকের এই ইস্যু, জীবাশ্ম জ্বালানি। সরকারকে বুঝতে হবে যত দ্রুত নবায়ণযোগ্য জ্বালানির উপরে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে তত দ্রুত আমরা ধ্বংসের হাত থেকে এই দেশকে রক্ষা করতে পারবো”। 

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এর সামনে ইকুয়িটি বিডি, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, বেলা, ব্রতী, ক্লিন, ফ্রেন্ডস অফ দ্যা আর্থ এশিয়া প্যসিফিক, গ্লোবাল ল’থিংকারস সোসাইটি, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশন এর যৌথ উদ্যোগে এশিয়া মহাদেশের অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশেও একযোগে এই ক্যাম্পেইন এর সূচনা উপলক্ষ্যে মূকাভিনয় ও মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জীবাশ্ম জ্বালানির এই ভয়াবহ সম্প্রসারণকে রুখে দিতে ঢাকার পাশাপাশি একযোগে আজ টোকিও, ম্যানিলা, ইঞ্চেওন, মান্ডালুইয়ং, জাকার্তা, চিয়াং মাই, হানই, দিল্লী, কলকাতা, কাঠমুন্ডু, লাহোর এবং করাচিতেও এই ডোন্ট এধং গ্যাস” ক্যাম্পেইন এর যাত্রা শুরু হয়। পুরো এশিয়াতে এই সমাবেশ আয়োজন ও সমন্বয় করেছে এশিয়া এনার্জি নেটওয়ার্ক এবং এপিএমডিডি (এশিয়ান পিপল’স মুভমেন্ট ফর ডেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট)। 

ঢাকায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশীদ এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এএসএম বদরুল আলম, ফ্রেন্ডস অফ দ্যা আর্থ এশিয়া প্যসিফিক এর প্রতিনিধি বারীশ হাসান চৌধুরী, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ এর প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলাম তুব্বুস, গ্লোবাল ল’ থিংকারস সোসাইটি এর প্রেসিডেন্ট রাওমান স্মিতা, ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এর সমন্বয়কারী এস জেড. অপু ও অন্যান্য। 

এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি) এর সমন্বয়কারী এবং এশিয়ান এনার্জি নেটওয়ার্ক এর আহবায়ক লিডি ন্যাকপিল বলেন, “এশিয়ায় তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস টার্মিনাল, পাওয়ার প্লান্ট এবং পাইপলাইন সম্প্রসারণের জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রকল্প চলছে। আমাদের এই প্রকল্পগুলোর প্রয়োজন নেই। এগুলো এই অঞ্চলে জলবায়ু সংকট এবং জ্বালানি সংকট সমাধানের পরিবর্তে আরও সমস্যা তৈরি করবে কারণ গ্যাস কয়লার মতোই ক্ষতিকর। ’ডোন্ট গ্যাস এশিয়া’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে, আমরা সরকার, ব্যাংক এবং কর্পোরেশনের কাছে এই বার্তা পাঠাচ্ছি: গ্যাস এবং অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণ বন্ধ করুন! জীবাশ্ম জ্বালানি শক্তি বন্ধ করুন! দ্রুত, ন্যায়সঙ্গত এবং ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তিতে রূপান্তর করুন!”

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, “উন্নত দেশসমূহ ইতিমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে নবায়ণযোগ্য জ্বালানির প্রতি গুরুত্বারোপ করছে, তারা বিভিন্ন বছরকে লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে নির্ধারণ করে ঘোষণা দিয়েছে যে এই নির্ধারিত সময়ের পর তারা আর জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করবে না। কিন্তু এই উন্নত দেশগুলোই আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উন্নয়নের নামে জীবাশ্ম জ্বালানি দিয়ে এই জনপদের মানুষকে এক অপূরণীয় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পৃথিবীতে যারা পরিবেশ, প্রাণ, প্রকৃতি রক্ষা করতে চায়, যারা জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উন্নয়নের একটি টেকসই সমাধানের কথা ভাবে তারা একত্রে প্রতিরোধ গড়ে তুলে বিনিয়োগকারী দেশ ও অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের এই তৎপরতা রুখে দিয়ে আফ্রিকা মহাদেশে যেন নবায়ণযোগ্য জ্বালানির সহজলভ্যতা সৃষ্টি করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তারই হাত ধরে আজ এশিয়ার দশটি দেশে একত্রে এই ডোন্ট গ্যাস এশিয়া ক্যাম্পেইনের পথচলা শুরু হলো। আমরা শুধু এই দশটি দেশই না, খুব দ্রুতই এশিয়ার সকল দেশ একজোট হয়ে, এই আফ্রিকা এবং এশিয়া দুই গ্লোবাল সাউথ একসাথে গ্লোবাল নর্থের সাথে হিসাব নিকাশে বসবো। দীর্ঘদিন যাবৎ কনফারেন্স অব পার্টি তে আমাদের মত দেশগুলো এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে আসলেও সেগুলোকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব কখনোই প্রদান করা হয়নি, তবে মিশরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ায় আমরা তা সাধুবাদ জানাই, কিন্তু আমরা চাই আমাদের মত দেশগুলোকে নবায়ণযোগ্য জ্বলানী খাতে পূর্ণ সক্ষমতা অর্জনে উন্নত দেশগুলো সততার সাথে সহযোগিতা করবে”।   

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, বৃক্ষ নিধন ও জলবায়ু শরণার্থী বিষয়ে জনসচেতনতামূলক মাইম প্রদর্শন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম এ্যাকশন এর সদস্যবৃন্দ। অনুষ্ঠানে আয়োজনকারী সংগঠনসমূহ ছাড়াও অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠন এবং ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন