২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:২২:৩৯ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে কী কম্বোডিয়া স্টাইলে নির্বাচন!
চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচনমুখী আ.লীগ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
চাপ উপেক্ষা করে নির্বাচনমুখী আ.লীগ


সর্বত্রই একটা অস্বস্তি! কী হতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে এই অবস্থা। এখন মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন হঠাৎ সব সচিবকে ডেকে সচিবালয়ে বৈঠক করেছেন। এমনটা আগেও হয়েছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে এই সচিব সভাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার আরেকটি কারণ ২৫ জুলাই মঙ্গলবার প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সে বৈঠক এগিয়ে এবং সঙ্গে সচিব বৈঠকও একসঙ্গে অনুষ্ঠান হয়েছে। এ বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়সহ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনের প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা শোনা গেছে। এখানে উল্লেখ্য, বর্তমানে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা রয়েছেন ৮৫ জন। তবে বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার এক বৈঠক। এখানে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত এমন কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়নি। 

মাঠের আন্দোলনে বিএনপি বা তাদের জোট এক দফা নিয়ে চিল্লাচিলি করুক আর যাই করুক না কেন, ওগুলোতে তেমন মনোযোগ নেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। ক্ষমতাসীন দলের মূল টার্গেট দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা কীভাবে প্ল্যানমাফিক করা যায়। তিন টার্ম কমপ্লিট করার পর চতুর্থ টার্মের জন্য সরকারের এ প্রস্তুতি। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। সে লক্ষ্যে যেসব প্রস্তুতিগুলো নেওয়া প্রয়োজন সেটাই তারা গ্রহণ করছেন। প্রশাসনের সর্বত্র সাজানো হচ্ছে। কারণ অন্যসব নির্বাচনের মতো এবারেরটা হবে না সেটা বারবার নিজ নেতাকর্মীদেরও সতর্ক করে আসছেন প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ। এবার বড় চাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে। সবারই প্রত্যাশা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের। সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবার তারা সেরকমটাই করবে। 

অবশ্য সরকারের এমন প্ল্যানের বড় বাধা দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলসমূহ। কিন্তু এ বাধা আমলে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছে না। যদি বিএনপি বিগত নির্বাচনের মতো না-ই এলো, তাহলে কী হবে সে প্ল্যানও তৈরি রেখেছে ক্ষমতাসীন। দোদুল্যমান জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ বেশকিছু দলকে তারা নির্বাচনে ভেড়ানোর জন্য আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেটাতে যে শর্ত তারা দেবে তা হয়তো পূরণও করবে ক্ষমতাসীন দল। কারণ রাজনীতি করে সবাই ক্ষমতার জন্য। বিএনপিও সেটাই করে। আওয়ামী লীগও করবে তাতে তো অসুবিধা নেই। তাছাড়া দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে দেশে চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন তো তারা করেছেই। 

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটাও জানে, গত দুইবারের মতো এবারের নির্বাচন ওই একই স্টাইলে অনুষ্ঠান করা মোটেও সহজ সাধ্য নয়। এজন্য যেমন টেকনিকের প্রয়োজন, তেমনি বুকে অসীম সাহসেরও প্রয়োজন। বলা যায়, ‘ডু অর ডাই।’ এর আগে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা ছেড়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে। তাতে কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু দীর্ঘ তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকার পর অনেকের স্বার্থে আঘাত লেগেছে। সুযোগ পেলে তারা ছাড়বে না। ফলে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার অর্থ আওয়ামী লীগ তাদের অঙ্গ সংগঠন থেকে শুরু করে প্রতিটা ক্ষেত্রেই বড় চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া। বিশেষ করে বিএনপির দাবি অনুসারে যে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়েছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এ ঘাতপ্রতিঘাতও আসবে। ফলে দল বাঁচাতে, নেতাকর্মীদের সেফ রাখতে আগামী নির্বাচনেও জেতা চাই। শত বাধাবিপত্তি ডিঙিয়ে হলেও নির্বাচনটা সেরে ফেলতে চায় এখন আওয়ামী লীগ। দলের শীর্ষনেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল। সর্বত্রই এ দৃঢ়তা এখন ক্ষমতাসীন দলটির। 

ওই লক্ষ্যে রক্তচক্ষু আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের। কীভাবে তাদের ম্যানেজ করা যায় সে চেষ্টায়ও মরিয়া। বিএনপি মাঠে বড় আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা যাতে মনোবল না ভাঙে সেজন্য পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে মাঠে কর্মসূচি দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরাও। এটাও একধরনের রাজনীতি। 

কূটনীতিদের সঙ্গে নিয়মিত লিয়াজোঁ

আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা ব্যস্ত আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে লিয়াজোঁ বৃদ্ধিতে। কোথায় ভুলত্রুটি থাকলে সেগুলো নিয়েও তারা পর্যালোচনা করে যাচ্ছে। চলছে ম্যানেজ করার চেষ্টা। পশ্চিমা জোটের সঙ্গে কিছু সময়ে মতবিরোধ ঘটলেও সেটা আবার নিরসনে চেষ্টা চলে। তবে বড় সমস্যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের ম্যানেজ কীভাবে করা যায়, সেটাও তাদের বোঝানোর মাধ্যমে কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে দলটি। ক্ষমতায় থাকলে কাজ করলে ভুলত্রুটি হবে এটাই স্বাভাবিক। সেগুলো যারা শুধরে নিতে পারবে তাদের সফলতা না হওয়ার কারণ নেই। যদিও বাংলাদেশ জটিল এক ভূরাজনীতির কবলে। সেটাও বড় সমস্যা। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায় ম্যানেজটাই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে। ওনাদের বোঝাতে সক্ষম হলে যে একটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে পারে আওয়ামী লীগও, তাহলেই অনেক সমস্যা কেটে যাবে অনায়াসেই। নতুবা সমস্যার বড় একটা কারণ এ ভিনদেশিদের ম্যানেজ। 

সমস্যার মূলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ 

মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ অত্র অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যাপারে উসখুস করছে বলে অনেকে মনে করছে। তবে দেশটির সঙ্গে প্রকাশ্যে যতটা বিরোধ বলে মনে করা হচ্ছে বাস্তবে দুইয়ের মধ্যে সম্পর্কটা ভালই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বারবার যোগাযোগ করছেন। তারা আসছেন। তবুও কিছু যদি গ্যাপ থেকে যায় সেটুকু বিরোধও রাখতে চায় না ক্ষমতাসীন দল। যদি একাবারেই সেটুকু ম্যানেজ সম্ভবপর না হয়, তবে এটা ম্যানেজ করার জন্য পার্শ্ববর্তী বন্ধুপ্রতিম দেশও রয়েছে। তারা এখানে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে সেটাই এখন মুখ্য। এখানে ওই বন্ধু রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। মার্কিনিরা যদি তাতে আশ্বস্ত হয়, তাহলে সবকিছু অনুকূলেই থেকে যাবে। নতুবা ঝামেলা তৈরি হতে পারে। 

কারণ মার্কিনীরা হয়তো সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা দেবে না। কিন্তু এরপর যদি সমস্যা করে বসে? 

বড় রেফারেন্স এখন কম্বোডিয়া 

সম্প্রতি কম্বোডিয়ার বেলায় কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বাংলাদেশের মতো সে দেশেও ভিসানীতি দিয়ে রেখেছে মার্কিনিরা। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় এবার সহায়তা স্থগিত করেছে। খবরে প্রকাশ, কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই রোববার ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এক ঘোষণা দেয়। এতে বলা হয়, কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার কোনোটাই হয়নি। এমনকি নির্বাচন শুরুর আগ থেকেই ক্ষমতাসীন সরকার বিরোধী দল, মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটিসহ সংবিধানকে অবজ্ঞা করে আসছিল। আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচনের ধারে কাছেও যায়নি। এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কিছু বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করলো।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছে, এখনো সময় আছে তারা আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচনের আয়োজন করতে পারে। তারা পুনরুদ্ধার করতে পারে বহুদলীয় গণতন্ত্র। রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা বন্ধ করতে হবে। মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের ওপর হস্তক্ষেপ নয়। বলে রাখা ভালো, ২৩ জুলাই কম্বোডিয়ার নির্বাচনে কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল না। যেমনটা বাংলাদেশে। একই একটা পরিস্থিতির অবতারণা হতেই পারে। কারণ কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একই রকম। ফলে শক্তিশালী বিরোধী দলকেও নির্বাচনে নেওয়ার একটি শর্ত রয়েছে। এটা বিএনপি ও সমমনাকে বাদ দিয়ে হবে কী এটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।

বিএনপির অনুপস্থিতিতে বিকল্প চিন্তা 

তত্ত্ববধায়ক সরকারের আন্দোলনে বিএনপি ও সমমনা। স্পষ্ট করে দিয়েছে তারা বর্তমান সরকারের অধীনে তথা, এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনেই যাবে না। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটের মূল প্রত্যাশা একটি অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন। বিএনপির যে দাবি আওয়ামী লীগ সেটা মানলে তো সব ওলটপালট। সংবিধানের নীতিরও ব্যত্যয়। এমতাবস্থায় বিএনপি ও সমমনা যদি শেষ পর্যন্ত না-ই আসে, তাহলে বিকল্প অনেকটাই চিন্তা করে ফেলেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির একাংশ (রওশন) তো বলেই দিয়েছেন, তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন নয়। বাকি জি এম কাদের দোদুল্যমান। প্রকাশ্যে সরকারের সমালোচনা করলেও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রতিটি নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে তারা একইভাবে সংসদেও রয়েছেন। বিএনপির মতো পদত্যাগ করে চলে আসেনি। ফলে দিন শেষে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে তারা-এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। আরেকটা বড় দল জামায়াতকেও পাশে টানার প্রাণান্তর চেষ্টা। যে জামায়াতকে মাঠেই নামতে দিতো না, সে জামায়াত এখন প্রকাশ্যে রাজনীতি করছে। 

এ নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্পও রয়েছে। অনেকেই বলছেন, জামায়াতের সঙ্গে গোপন আঁতাত হয়েছে আওয়ামী লীগের। রাজনীতিটা এমনই, যে যার স্বার্থেই সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপিও ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে বলে দিয়েছে জামায়াত আর তাদের সঙ্গে নেই। জামায়াতকে নিয়ে তারা ভাবেও না। 

এটাতে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে উপস্থাপন করতে পারবে। একই সঙ্গে বিএনপির দাবি অসাংবিধানিক সেটাও প্রচারে সুবিধা হবে। সব মিলিয়ে এখানে আওয়ামী লীগের অ্যাডভান্টেজ। 

 প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ 

আওয়ামী লীগ প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলছেন। বৈঠক করেছেন, সম্পাদকম-লীর সঙ্গে। বৈঠক করছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বতাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গেও। এদের কারো মধ্যে যদি কোনো দূরত্ব, রাগ-অভিমান থেকেও থাকে, সেগুলো দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। তৃণমূলেও সবটা খবর তিনি নিয়ে রেখেছেন। কার কোথায় সমস্যা, কার জনপ্রিয়তা কতটুকু। দলের হয়ে সংসদ সদস্য হয়ে বা দায়িত্ব পেয়ে কে সঠিকভাবে সেটা ব্যবহার করেছেন, কে অপব্যবহার করেছেন সেগুলো তো তার নিত্যদিনের টেবিলসূচি। এগুলোতে তিনি কঠোর অবস্থানে। একই সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়া অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্বকেও টিউনিং করছেন। উদ্বুদ্ধ করছেন। একজন নেতার যে গুণ, দলের মনোবল ধরে রাখা, সঠিকভাবে পরিচালনা করা, সেটার শতভাগই তিনি করছেন অনাবরত। 

তৃণমূলের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি  

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ৩০ জুলাই দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলটির উপদেষ্টা পরিষদ, জাতীয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। দলীয় সব সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার মেয়ররাও বর্ধিত সভায় উপস্থিত থাকবেন। সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদেরও এই সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি দলটির জেলা ও মহানগর শাখাগুলোতে পাঠানো হয়েছে। 

আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা 

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জানিয়েছেন, ২০২৪ সনের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে, এতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা কথা ইদানীং ভেসে বেড়াচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা কিছুটা আগেভাগেও হয়ে যেতে পারে। এর কারণ হিসেবে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনাদের সুযোগ না দেওয়া। কার্যত বিএনপি এখনো বড় ধরনের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যায়নি। দীর্ঘদিন বলার পর এক দফার সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করলো তারা সবেমাত্র। ১২ জুলাই ‘এক দফা’ দাবি ঘোষণা দিয়ে পদযাত্রা করছে বিএনপি। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ ছাড়া আগামী ২৭ জুলাই একটা মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিএনপিকে রাজপথেই মোকাবিলার উদ্যোগ ক্ষমতাসীনদের। তবে বিএনপির এসব কর্মসূচিকে তেমন আমলে নিচ্ছে না তারা। বিশেষ করে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করেছে বিএনপি তার ধারেকাছেও নেই। ৯৬-এ ওই দাবি আদায়ে মোট ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল আওয়ামী লীগ। এতেই দলটির সাংগঠনিক ভিত কতটা মজবুত তার প্রমাণ রাখে। বিএনপি এখনো সে হরতাল-ধর্মঘটেই যায়নি। তবে দিন যতো যাবে, ততোই জটিল অবস্থার রূপ নেবে। সে দিকটা চিন্তা করে আগাম নির্বাচন করারও চিন্তা মাথা থেকে ফেলতে পারছেন না তারা। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক স্থানে বলেছেনও যে, খুব শিগগিরই নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন। তার এ কথায় ওই ইঙ্গিত মিলেছে। 

সব মিলিয়ে বিএনপি ও বিদেশি বন্ধুদের যথাযথ বোঝানোর কাজের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রেখে নির্বাচনমুখী রাখতে আওয়ামী লীগ বেশ এগিয়ে গেছে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

শেয়ার করুন