১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১০:২৬:২৩ অপরাহ্ন


আইসিটি কনটেইনার দুর্যোগ একটি ‘ওয়েকাপ কল’
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৬-২০২২
আইসিটি কনটেইনার দুর্যোগ একটি ‘ওয়েকাপ কল’


চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম আইসিটি কনটেইনারের অগিকাণ্ডে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে। শনিবার মাঝ রাতে শুরু হওয়া অগ্নিকান্ড , রাসায়নিক বিস্ফোরণ জনিত ধ্বংসযজ্ঞ দেশ জুড়িয়ে আতংক ছড়িয়েছে।  শেষ খবর জানা পর্যন্ত ১০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী সহ ৫০ জন মৃতুবরণ করেছে প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে সুশ্রষাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে কাজ করছে সেনাবাহিনীর কেমিকাল দুর্ঘটনা মোকাবিলা কাজে প্রশিক্ষিত ইউনিট। দেশের প্রধানতম বন্দর নগরীর স্পর্শকাতর এলাকায় রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃত্ত গুরুপূর্ণ স্থাপনার দুর্যোগ বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনামে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর কারিগরি এবং সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা নাজুক তা এই ঘটনায় আরো একটি ‘ওয়েকাপ কল’ দিয়েছে। 

প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে হাইড্রোজেন পার অক্সসিড বোঝাই কনটেইনার বিষ্ফোরোন থেকেই অগ্নুৎপাত ঘটেছে। মূলত তৈরী পোশাক রপ্তানি মালামাল কনটেইনার গুলো জাহাজীকরণের জন্য স্থাপিত টার্মিনালে রাসায়নিক গুদামজাত  করার অনুমতি ছিল কিনা বা থেকে থাকলে যথাযথ অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কিনা সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে| কেউ কেউ সন্ত্রাস বা অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও দেখছেন।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট।  বিভিন্ন ঘনত্বের এই রাসায়নিক দ্রব্য বিভিন্ন কাজে ব্যাবহৃত  হয়. টেক্সটাইল , তৈরী পোশাক রং করার কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সন্ত্রাসীরা এটি বিস্ফোরক তৈরীর কাজেও ব্যবহার করে থাকে। ব্যাক্তিখাতের এই টার্মিনালের মালিক আর হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্রস্তুত করি কারখানা একই গ্রুপের।  হালকা নীল প্লাস্টিক আঁধারে থাকা রাসায়নিক দ্রব্বাদী রপ্তানির জন্য াণ হয়েছিল। স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে অগ্নিৎপাত বা বিস্ফোরণ ঘটার সময় কেউ ফায়ার সার্ভিসকে রাসায়নিক দ্রব্বাদী থাকার কথা বলে নি অথবা ওরাও আগুনের লেলিহান শিখা দেখে বুঝতে পারে নি। তবুও কর্তব্যের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে ওদের কয়েকজন আগুনে পুড়ে মৃত্যু বোরন করেছে।

ঘটনাটি অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে।  হয়তো কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে।  কিন্তু মিডিয়া থেকে মনোযোগ চলে গেলে আর বিশেষ কিছু হবে না। এটিই এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা। আমি সর্বসাধারণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নিবেদন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সম্মান জানাচ্ছি। 

আমার কিছু প্রশ্ন আছে-

আইসিটি কনটেইনার টার্মিনালটির রাসায়নিক দ্রব্য গুদামজাত করার অনুমতি ছিল কিনা ? যারা দিয়েছে তারা টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিশেষত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করেছেন কিনা? 

বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্যাদি গুদাম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থকা বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড বা বিস্ফোরক আইনে গ্রহণযোগ্য না।  তা সত্ত্বেও কিভাবে এগুলো এখানে থাকলো?

কনটেইনার টার্মিনাল তদারকির দায়িত্ব কাদের ?

পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন এবং নৌ বন্দর মন্ত্রণালয়, জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় , স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটুকু দায় দায়িত্ব পালন করেছে? 

যাহোক এই দুর্যোগ প্রমান করেছে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর এবং শিল্প শহর আদৌ এই ধরণের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তত নয়। নেই কোনো বার্ন ইউনিট , বিশেষায়িত হাসপাতল। ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃপক্ষের নাই রাসায়নিক বিস্ফোরণ জনিত অগ্নিকান্ড সামাল দেয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা , প্রশিক্ষিত   জনবল। মালিকপক্ষ অবশ্যই বারো ধরণের গাফলতি আছে। 

বাংলাদেশ যখন একটি জাতীয় প্রতীক ধরণের মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তত হচ্ছে তখন এই ধরণের দুর্যোগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। রানা প্লাজার মতোই এটি যুদ্ধ প্রস্ততি নিয়েই সামাল দিতে হবে।

শেয়ার করুন