২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০২:১৩:০০ অপরাহ্ন


সাজুফতা সাহিত্য ক্লাবের সংবর্ধনা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
সাজুফতা সাহিত্য ক্লাবের সংবর্ধনা শান্তনু ভৌমিককে সংবর্ধনা প্রদান করা হচ্ছে


 গত ১৮ জুন শনিবার। সাজুফতা সাহিত্য ক্লাবের প্রেসিডেন্ট কবি জুলি রহমান আয়োজিত কলকাতার বিখ্যাত শিল্পী শান্তনু ভৌমিক অন্তুর সংর্বধনা অনুষ্ঠান। নিউইয়র্কের গুণি শিল্পী ও কবিদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি কাব্য সুরে জমজমাট হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানটি দুটি পর্ব ছিলো- কবিতা ও গান। প্রথমে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মোঃ ফজলুর রহমান নন্দী। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অতিথিদের আগমনে কবি জুলি রহমান।

দু’জন বাচিক শিল্পীর কবিতা দিয়ে কবিতা পর্বের সূচনা। এম এ সাদেক আবৃত্তি করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা। মোঃ ইলিয়াস হোসেন পড়েন কবি জুলি রহমানের কবিতা। কথা বলেন বিজনেস ওম্যান বি. মেহের চৌধুরী, ডঃ দলিলুর রহমান,  কবি ও প্রাবন্ধিক এবি এম সালেহ উদ্দিন, মোঃ ইলিয়াস হোসেন। কথা বলেন অনুষ্ঠানের মধ্যমনি তথা সংবর্ধিত সম্মানিত শিল্পী শান্তনু ভৌমিক অন্তু। তিনি বলেন, গীতিকার ও সুরকার জুলির গান নিয়ে। তিনি বলেন, জুলির পাঁচটি গানে মিউজিক সুর ঢেলে যেমন সুখ পেয়েছি মনে, তেমনি গানের বাণী তাল লয়ে হয়েছি মুগ্ধ। কলকাতায় আমার পরিচিত মহলসহ আমার ছাত্রছাত্রীবৃন্দ জুলির গান করছে। এবং তাঁরা একটা সাড়া জাগিয়ে তুলছে। তিনি জুলি রহমানের লেখা গানগুলোর প্রশংসা করে বলেন,  ভবিষ্যতে জুলির লেখা গানগুলির সুর করবেন। তিনি আশা ব্যক্ত করেন যে তার সুর করা জুলির পাঁচটি গান কলকাতায় যেভাবে সমাদৃত হয়েছে তাতে তিনি আশাবাদী, জুলি রহমান একজন ভালো গীতিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবেন। জুলির তৃতালের  ছন্দে যে কথ্থক তা যেমন ডঃ নীলা জেরিন প্রাণ উজার করে নৃত্য করেছেন তা যেমন দৃশ্যবহুল এবং আনন্দের। তেমনি জুলির চিন্তাশীল সৃজনকে শ্রদ্ধা না জানিয়ে দর্শক যেতে পারেন না।

শিল্পীর এই কথার জের টেনে কথার মালা গাঁথার সুবচনীয় সঞ্চালক রেজা আব্দুল্লাহ বলেন, তবে কী আমরা এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলা বা কাঁটাতার উতরে উঠলাম? শিল্পী এ কথার সদত্তোর সুনিপুন মানব বন্দনায় বলে গেলেন। ধর্ম জাতিভেদ যেমন কোন কবির থাকতে নেই তেমনি একজন শিল্পীরও থাকতে নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে তার নাড়ির টান রয়েছে। তিনি কলকাতায় জন্মেছেন বটে, তবে তার পূর্বপুরুষরা সবাই বাংলাদেশের। তারা ১৯৬৫ সনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। সংগীতের কাজে তিনি খুব ঘনঘন ঢাকায় যাতায়াত করেন, যেমনটি করেন আমেরিকা, কানাডা ও ইংল্যান্ডে।

বিজ্ঞানী, কবি ও চিত্রকর ডঃ দলিলুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন,  শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় ধর্মীয় কারণে আমাদের পরিবারে বিশাল প্রতিবন্ধকতা ছিল। আমরা গ্রাম থেকে এসেছি, সেখানে এক সময় এসব চর্চা অকল্পনীয় ছিল। সেই সময়েও আমার মা অবশ্য চমত্কার ছবি আঁকতেন। এখন আমরা সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সম হয়েছি। আমাদের পরিবারের বহু সদস্য ও সদস্যা এখন সাহিত্য, শিল্প, ও সঙ্গীত চর্চা করে। আমার ছোট বোন জুলি রহমান আমাদের পরিবারের জন্য আশীর্বাদ। সাহিত্য চর্চায় তার একাগ্রতা, অধ্যবসা আমাদের পরিবারকে একটি বিশেষ জায়গায় উন্নীত করেছে। আজকে আমার একটি স্বপ্ন সফল হল। আমি আগে কখনো ভাবতে পারিনি, কলকাতার একজন বিখ্যাত শিল্পী ও সুরকার, মিউজিক ডিরেক্টর, আমার বোনের লেখা গানে সুর করবেন, ভিডিও করবেন এবং তারই ঘরে এসে সেই গান গাইবেন। এ ব্যাপারটা আমার ভাবনার ঊর্ধ্বে ছিল- আমি ভাবতেই পারিনি, এখন আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি। যারা কষ্ট করে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে আমি স্বাগত জানাই ধন্যবাদ জানাই। আর শান্তনু বাবুকে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একজন সত্যিকারের শিল্পীর কোনো জাত ধর্ম নেই । তিনি একজন মানুষ এবং তিনি সকল মানুষের। শান্তনু ভৌমিকের বিশাল মনের ছোঁয়ায় আমরা সেই জিনিসটি অনুভব করতে পারি এবং সে রকম একজন মানুষকে আমাদের মাঝে পেয়ে ধন্য হই।

সময়ের রেশ ধরে রাখতেই আগত শিল্পীদের সম্মানার্থে শুরু হলো গানের আসর। শান্তনু ভৌমিক গীতিকার ও সব্যসাচী লেখক কবির দুটো গান পুনরায় করেন। এর পর যথাক্রমে শিল্পী ও গীতি কবি ননী মল্লিক করেন গান, নাসরীন চৌধুরী, ভারতী রায় ও শিল্পী শাহরীন সুলতানা। এর পর কথা বলেন কবি ও প্রাবন্ধিক এবি এম সালেহ উদ্দীন। শুরু হলো আবার শিল্পী শান্তনু ভৌমিকের গান। গানে তবলায় সংগত করেন সকলের পরিচিত মুখ খুশবু আলম। অক্টোপ্যাডে জয়।       

অংশগ্রহণকারী গুণিজনেরা ছিলেন বিজ্ঞানী কবি ও চিত্রকর ডঃ দলিলুর রহমান, বাচিক শিল্পী এম এ সাদেক, কবি প্রাবন্ধিক এ বি এম সালেহ উদ্দিন, মোঃ ইলিয়াস হোসেন, মেহের চৌধুরী, নাসরীন চৌধুরী, ননী মল্লিক, শিল্পী শাহরীন সুলতানা, পারভীন গাজী, কামরুন নাহার খানম, সাদিয়া আফরীন তন্বী, নজমুল ফেরদৌস নাজ, সাবিহা ফারাহ, তারিন নাসরীন মিতু, নেওয়াজ রয়েল, ইশতিয়াক হোসেন হৃদয়, সায়াম হোসেন, ইমরান রাব্বি, লাকী ইসলাম, জিনাত ফিরদৌস, নাফিসা, রানা, রাইনা, গহনা, লিডিয়া রহমান, নাসরীন নীরু, ফজলুর রহমান নন্দী, রেজা আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ সাখাওয়াত সেলিম, জয় প্রমুখ। দর্শকদের মূহূর্মূহূ করতালিতে মুখর গান কবিতার জমপেশ আড্ডা বাড়িয়ে চলে রাতের প্রহর। রাতের ডিনার করে পান খেয়ে ঠোঁট রাঙিয়ে ঘরে ফিরেন অতিথিবৃন্দ। কবি জুলি ও মিঃ রহমান পুনরায় কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন সম্মানিত শিল্পী ও আগত অতিথিদের ।

সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক রেজা আব্দুল্লাহ। রেজা আব্দুল্লাহ তাঁর সুনিপুন দতায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।


শেয়ার করুন