২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:২৫:০৯ অপরাহ্ন


জনমনে হতাশা প্রতিনিয়ত
টেষ্ট ক্রিকেটের মানের অব্যাহত নিন্মগতির অংক মিলছে না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২২
টেষ্ট ক্রিকেটের মানের অব্যাহত নিন্মগতির অংক মিলছে না টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের ব্যার্থতাচ্ছন্ন একটি মুহুর্ত/ছবি সংগৃহীত


২২ বছরে বিশ্ব ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশের তলানিতে অবস্থানের মূল কারণ ২০০০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত বিসিবির সকল পরিষদের পর্যায় ক্রমিক ব্যার্থতা। পুঞ্জীভূত ব্যার্থতার জঞ্জাল পরিষ্কার করে আগামী এক দশকেও  অন্যান্য ৯ দেশের সঙ্গে সামাল দিতে আগাতে পারবে বলে মনে হয় না। স্বীকার করতে দ্বিধা নাই ১৯৯৯ আইসিসি বিশ্বকাপ চলা কালে তৎকালীন ক্রিকেট কোচ কিংবদন্তি স্যার গর্ডন গ্রিনিজের মূল্যায়ন উপেক্ষা করে টেস্ট ক্রিকেট দূতিয়ালি করা হিতে বিপরীত হয়েছে। ১৯৯৯ যেমন বাংলাদেশ ক্রিকেটে টেস্ট ক্রিকেট মানসিকতা ছিল না, এখনো সেটি নেই। বলা চলে টেস্ট ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টাই হয়নি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু মানুষ চর দখলের মতো দখল করেছে বিসিবি।

এর মাঝেও যৎ কিঞ্চিৎ অর্জন হয়েছে তার মুলে আছে বিকেএসপির অবদান এবং আশরাফুল, মাশরাফি , সাকিব , তামিম , মুশফিক , মাহমুদুল্লাহ;র নেচারাল ট্যালেন্ট ও কিছু বিশ্বমানের ক্রিকেটারদের একসঙ্গে পারফর্ম করা। স্থানীয় ক্রিকেটের বিশ্বের সেরা তারকাদের অংশগ্রহণ , নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট অনেক অনুকূল ছিল। কিন্ত এখন যেভাবে বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণীর লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেট খেলা হয় সেখান থেকে টেস্ট ক্রিকেটে ধারাবাহিক সাফল্য লাভ করা প্রায় অসম্ভব। এখন ক্রিকেট পরিকল্পনার থেকে ক্রিকেট কর্মকর্তারা কথা বলেন অনেক বেশি। ক্ষনে ক্ষনে ক্রিকেটারদের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। 

মান সম্পন্ন সেরা ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে ধীরে ধীরে গোধূলি ঘনিয়ে আশায় এবং ওদের ফেলে যাওয়া শুন্য স্থানে যোগ্য উত্তরসূরি উঠে না থাকায় সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। ক্রিকেটের টেকসই উন্নয়নে বিসিবির না আছে লাগসই পরিকল্পনা।  না আছে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো যোগ্যতা দক্ষতা। একসময় বাংলাদেশের কয়েক জন উদীয়মান ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণে যেত।

ভারতের আঞ্চলিক ক্রিকেট দল বাংলাদেশে খেলতে যেত। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড়া অন্য সব দেশের মানসম্পন্ন বিকল্প (এ দল) জাতীয় দল আছে। তারা নিজেদের মধ্যে সফর বিনিময় করছে। অস্ট্রেলিয়া , ইংল্যান্ড , ভারত , নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এখন যোজন যোজন এগিয়ে গাছে। পাকিস্তান , শ্রীলংকা এবং ওয়েস্টইন্ডিজের সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাবধান বাড়ছে। নবীন আফগানিস্তান দল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে গেছে। যেভাবে চলছে সেই ধারায় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সকল পর্যায়ে মানসিকতার পরিবর্তন না হলে গভীর গিরিখাত থেকে সহজে পরিত্রান পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।

আমি মনে করি না, বাংলাদেশে প্রতিভার কমতি আছে। ব্যাটসম্যানদের টেকনিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর। মুমিনুল হকের কথায় ধরা যাক। একজন ক্রিকেটারের টেকনিকে সমস্যা থাকলে ১১ টি সেঞ্চুরি করতে পারে না। স্বীকার করি, অন্তর্মুখী ছেলেটির দলকে নেতৃত্ব দেয়ার সীমাবদ্ধতা আছে। যদি প্রশ্ন করি কেন তাকে তার প্রিয় পসিশন ৩ নম্বর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল? 

কেন বিকল্প থাকা সত্ত্বেও তাকে কঠিন সময়ে অধিনায়ক করা হয়েছিল? এই ধরণের একজন ব্যাটসম্যানের বর্তমান নড়বড়ে ব্যাটিং অবথার জন্য ব্যাটিং কোচদের ব্যার্থতা মুখ্য। কেন নাজমুল শান্তর মতো তরুণ ক্রিকেট প্রতিভাকে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রস্তত না করে ৩ নাম্বার পসিশনে আগুনের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল? কি কারণে মাহমুদুল্লার মতো মানসম্পন্ন ব্যাটসম্যানকে ৭ , ৮ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হতো? কেন স্থানীয় ক্রিকেটে ক্রমাগত সাফল্যের পরেও ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, নাঈম ইসলামদের ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে? কেন বাংলাদেশ একজন মানসম্পন্ন লেগ স্পিনার খুঁজে পেলো না? লিখন ছিল। তাকে কী নার্সিং করা হয়েছে? কই সেই লিখণ? কে খুজবে তাকে?

বাংলাদেশ ছাড়া সব টেস্ট দলে এমনকি নেপাল দলীয় বিশ্ব মানের লেগ স্পিনার আছে? শুনি আইপিএল , বিগ বাশ ছাড়া অন্য কোনো ফ্রাঞ্চাইস ক্রিকেটের নাম নাকি শুনেননি বিসিবি কর্তারা। তাহলে বাংলাদেশ টি ২০ ক্রিকেটেও তলানিতে কেন? অর্থের অভাব বলা যাবে না। তাহলে ঢাকা , চট্টগ্রাম ,সিলেট ছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ক্রিকেট আইসিইউতে শয্যাশায়ী কেন?

দেশে ক্রিকেট বোদ্ধার অভাব নেই। বাংলাদেশ দল যা কিছু সাফল্য পেলে- সেটার ক্রেডিট নেয়ার লোকেরও অভাব নেই। বাংলাদেশ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশ থেকে বেশি বিশেষজ্ঞ দেখা যায়। সবাই খারাপ উপদেশ দেয় বলছি না।  কিন্ত মাঠের ক্রিকেট নিশ্চিত ভাবে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে। কেন সেটি অনেকেই জানেন। বাংলাদেশ অর্গান অন্তত এক ডজন ক্রিকেট ব্যাক্তিত্বের নাম আমি বলতে পারি- যারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমাদৃত। বিসিবির বর্তমান পরিষদে ক্রিকেট পরিকল্পনা এবং পরিচালনা করার মতো মানুষদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। ‘উঠ ছেরি তোর বিয়ে’র মতো এনামুল, শরিফুলকে তাড়া হুরো করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাঠানো হলো। শুনছি ইমরুল কায়েসকেও সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে। 

আশা করি বোধোদয় হবে সবার। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সম্মানের সঙ্গে পদত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারন এক ক্রিকেট এমনই এক খেলা, যার সাফল্যে দলমত,জাতি বিভেদ ভুলে একাকার হয়ে যায় বাংলাদেশ। সেখানে রয়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধাও। ক্রিকেটের ব্যার্থতা দেশের প্রতিটি মানুষকে ভীষন পীড়া দেয়। এ বাস্তবতাটুকুন বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই। তাদের প্রস্থান উত্তম। এখনও যথেষ্ট সময় রয়েছে- বাংলাদেশ ক্রিকেট সমাজকে জেগে উঠার সময় এখন। না হয় ক্রিকেট গর্ব অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বেশী সময় লাগবে বলে মনে হয়না। 

শেয়ার করুন