২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৩৪:১১ অপরাহ্ন


দেশকে ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ
সরকার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৬-২০২২
সরকার অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত   করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ /ফাইল ছবি


মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ বলেছেন, দেশে বর্তমান সরকারের আমল হচ্ছে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির মহোৎসব। জবরদখল, লুটপাট, অর্থপাচার, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নিজেদের সমস্ত প্রকার কুকীর্তি বৈধ করতে সংবিধান যথেচ্ছা সংশোধন করেছে। আর এর মাধ্যমে সরকার অবৈধ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘায়িত করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত তারা। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ এসব কথা বলেন। 

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ  সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আজিজ সামাদ। আর মাতা মরহুম সাদেকা সামাদ। ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের একজন প্রখ্যাত আরবান গেরিলাযোদ্ধা (ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য)। তার চার ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে জ্যেষ্ঠভ্রাতা স্বাধীনতাযুদ্ধে শহিদ হন। শহিদ লে.  আশফাকুসসামাদ ১৯৭১ সালে রংপুর জেলার ভূরুঙ্গমারীতে পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে শহিদ হন। তাঁকে বাংলাদেশ সরকার বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করেন।মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎকে গ্রেফতার করতে এসে পাকবাহিনী তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবা আজিজুসসামাদকে গ্রেফতার করে নিয়ে ১৭ দিন আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করেন। 


সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ /ফাইল ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ২০১৯ সালে বিভিন্ন ধরনের সাহসী কর্মসূচি নিয়ে ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ দলের নেতাকর্মীদের কাছে প্রশংসিত যেমন হয়েছেন, তেমনি দলের মধ্যে রাখঢাক না করেই কথার বলে ফেলার ব্যাপারেও তার জুড়ি নেই। তবে বিএনপির অঙ্গসংগঠন মুক্তিযোদ্ধা দলকে নিয়েই তিনি বেশি ব্যস্ত থাকেন। কেননা এমনিতেই বিএনপির ভেতরে-বাইরে নানাধরনের সমালোচনা আছে যে, দলটিতে দেশের এসব সাহসী সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের যখাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। 

এমনকি বিএনপির কমিটির বিভিন্ন পদে রাখতেও কার্পণ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এজন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ বিএনপি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমনকি সরেজমিন দেখা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ পুরানা পল্টনস্থ  মুক্তিযোদ্ধা দলের কার্যালয়ে দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণায় সবসময় মুখর থাকে। এছাড়া দেশে মহান সন্তান এসব মুক্তিযোদ্ধার তিনি এই বয়সেও নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা দলের কার্যালয়ে আসতে উৎসাহিত করেন। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে সাহসী ভূমিকা রাখা মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ শতপ্রতিকূলতার মধ্যেও এমন পরিণত বয়সেও সংগঠনে সময় দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে সারাবছরই দেশের গর্বিত এসব মুক্তিযোদ্ধার জীবন-সংগ্রাম তুলে ধরতে তিনি মুক্তিযোদ্ধা দলের ব্যানারে নানাধরনের আয়োজন করে থাকেন। নতুন প্রজন্মের কাছে তাদের যথাযথ স্থানে সম্মান দিতে নানাধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যা অন্য দলের কাছে ঈর্ষনীয় হয়ে উঠছে। ইশতিয়াক আজীজ উলফাতের সাক্ষাৎকারটি নিচে তুলে ধরা হলো। 

দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ:বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে কিছু নেই। সবটাই ফাঁকা বুলি। সাধারণ মানুষের নামে রাজনৈতিক দলগুলো অপরাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতার উৎস ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে শাসনের নামে দেশ ও জাতির সর্বস্ব লুণ্ঠন করেছে। এর পাশাপাশি নিজেদের বিলাসবহুল জীবন নিশ্চিত করতে বিদেশে পাচারসহ নানাবিধ লুটপাটকে বৈধতা দিচ্ছে রাজনীতির ছদ্মাবরণে।

দেশ: এজন্য আপনি বা আপনারা কি কম দায়ী না?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ: অবশ্যই যারা রাজনীতিবিদ তারাই দায়ী। এর সাথেও দায়ী বুদ্ধিজীবীরা এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। এই সমাজব্যবস্থায় যারা দেশ সেবার ব্রত নিয়ে সরকারে অবস্থান করে তারাই অর্থাৎ আমলা ও অসৎরাজনীতিবিদদের সাথে সমভাবে সুবিধাভোগী এবং দায়ী।

দেশ: বিএনপির শাসনামল কি খুব ভালো ছিল?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ :এই প্রশ্নের জবাব দেয়ার আগে আমি বিএনপির শাসনামলকে তিনভাগে ভাগ করতে চাই, স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামল, তার পরবর্তী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদকাল, সর্বশেষ দ্বিতীয় মেয়াদে বেগম জিয়ার শাসনামল নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করি।শহিদ জিয়ার শাসনামল, পরবর্তীতে বেগম জিয়ার রাজনীতিতে পদার্পণ ও ক্ষমতায় আরোহণে জনগণের যে বিপুল সমর্থন ও অংশগ্রহণ একথা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে এযাবৎকালে বাংলাদেশে যতো ধরনের সরকার ক্ষমতাসীন হয়েছে, তন্মধ্যে শহিদ জিয়ার শাসনামল অনেক বেশি জনবান্ধব ও জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমে স্পষ্ট ছাপ ছিল। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণে তার দেশপ্রেম ও ব্যক্তিগত সততা ছিল প্রশ্নাতীত।শহিদ জিয়ার শাসনামলে সফলতার ধারাবাহিকতায় বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদের শাসনামল ছিল অধিক প্রভাবিত। সেখানে যৎসামান্য ভুলত্রুটি বিচ্যুতি বাদ দিলে অবশ্যই বলতে হবে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ধ্যান-ধারণার সাথে ছিল সামঞ্জস্যময়।

বিএনপির শাসনামল অর্থাৎ খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদের ক্ষমতা আরোহন হয়েছিল জনগণের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে। লক্ষণীয় যে, নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ থাকা সত্ত্বেও শহিদ জিয়ার শাসনামল এবং খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদের শাসনামলের প্রতি খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনামল সুবিচার করতে পারেনি যেমন, তেমনি সেই সফলতার ধারাবাহিকতাও ধরে রাখতে পারেনি।

দেশ: আওয়ামী লীগ কি ভালো কাজ করেনি? তারা কি জনপ্রিয় দল না?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ : আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে। ২০০৮ সালে কতিপয় আমলার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন করে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ, তারপর ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কথিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্যেরনির্বাচিত হওয়া এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার কথা অবশ্যই বলতে হবে। যেখানে নির্বাচনে বা ভোটে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততাই নেই, সেখানে জনপ্রিয়তার প্রশ্নটাই অবান্তর।মনগড়াভাবে সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা, মামলা, গুম ও হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে থাকা নিশ্চয় জনপ্রিয়তা নয়। অন্যদিকে দৃশ্যমান উন্নয়ন বলতে আমাদের যা দেখানো হচ্ছে তা হলোÑ মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতির মহোৎসব। উদাহরণসহ বলতে পারি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকার লুটপাট করেছে।

দেশ: আওয়ামী লীগের দোষ কি?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ : ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন-বহির্ভূতভাবে ক্ষমতা দখলই সবচেয়ে বড় দোষ এবং এটাই আওয়ামী লীগের ক্ষমতা দখলের ঐতিহ্য এবং ধর্ম। আওয়ামী লীগ কখনই জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছার তোয়াক্কা করেনি। এহেন কোনো অপকর্ম নেই যা এই আওয়ামী সরকার করেনি। এই সরকার গুম, খুন, নিপীড়ন, নির্যাতন, হামলা, মামলা এমনকি গায়েবী মামলাতেও এই সরকার খ্যাতি অর্জন করেছে।বর্তমান আওয়ামী সরকার প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।জবরদখল, লুটপাট, অর্থপাচার, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নিজেদের সমস্ত প্রকার কুকীর্তি বৈধ করতে সংবিধান যথেচ্ছা সংশোধনের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ও দীর্ঘায়িত করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত তারা।

দেশ: তাহলে দেশের জনগণ বিএনপি কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে না কেন? তারা তো এসরকারের পতনের ঘণ্টাই বাজিয়ে দিতো?

ইশতিয়াক আজীজ উলফাৎ : বিএনপির তৃতীয় মেয়াদের শাসনামলের ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং বর্তমান আওয়ামীলীগের দূরভিতায়িত অপরাজনীতির কারণে জনগণ রাজনীতির প্রতি হতাশ এবং আস্থাহীন। সে কারণেই জনগণ আন্দোলন এবং সংগ্রামে নিরুৎসায়িত। লক্ষ করবেন, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বিএনপির ডাকা কর্মসূচিতে জনগণের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু প্রতিটি কর্মসূচির পরে সাধারণ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা, হামলা, গুম, হত্যা নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এক বিভীষিকাময় ভয়ের সংস্কৃতি প্রচলন করেছে সরকার। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে ভিন্নমত পোষণকারীদের দমনের জন্য সরকার নগ্নভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে যথেচ্ছা ব্যবহার করে থাকে, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।


শেয়ার করুন