০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৩:১৩:৪১ অপরাহ্ন


৮ মে থেকে ভোট শুরু
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৪
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ার পাশাপাশি দলটির অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে কঠোরতম বার্তার দেয়ার পরও মাঠে কাজে আসেনি। বরং দেখা গেছে বিএনপি’র সাবেক-বর্তমান নেতা এবং তাঁদের স্বজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। তোয়াক্কা করছে না হাই কমান্ডের নির্দেশ। তবে এই না মানা নিয়ে পরস্পরবিরোধী কথা শোনা যাচ্ছে। কারো কারো মতে, প্রশাসনের অদৃশ্য চাপ যেমন রয়েছে অবার তেমনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদেরও কঠোর নির্দেশ আছে। আছে স্থানীয় পর্যায়ে নানান ধরনের কূটকৌশল। যার কারণে আন্তরিকতা থাকলেও বিএনপি’র হাই কমান্ডের নির্দেশ মত অনেকে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে অংশগ্রহণ থেকে সরে আসতে পারছে না। এমনটাই মিলেছে মাঠ পর্যায়ের বিএনপি’র বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে।

ঘটনার কিছু বাস্তবতা

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে সারা দেশের ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। সর্বশেষ খবর পর্যন্ত জানা গেছে, বিএনপি’র প্রায় ৩৮ জন সাবেক-বর্তমান নেতা এবং তাঁদের স্বজন চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। প্রথম দফার নির্বাচনে তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এই ৩৮ জনের মধ্যে ১৮ জন বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের পদধারী নেতা। বাকি ২০ জনের মধ্যে ১১ জন দল থেকে বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত, অব্যাহতিপ্রাপ্ত এবং বিএনপির সাবেক নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতা রয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির নেতাদের আত্মীয়স্বজন বা এই দলের লোক হিসেবে পরিচিত আরও ৯ জন নির্বাচনে রয়েছেন। এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে। তবে আরেক খবরে জানা গেছে, আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে সারা দেশে যে ১৬০ উপজেলায় নির্বাচন হবে তাতেও বিএনপির অন্তত ৩৫ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এসব তথ্যে বোঝা যাচ্ছে বিএনপি’র হাই কমান্ডের নির্দেশ কেউ মানছে না। 

কিন্তু কেনো

মাত্র কয়েকদিন আগেই শেষ হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে বিএনপি শুধু বর্জনই করেনি তারা জনগণ যেনো ভোট কেন্দ্রে না যান সেভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছেন। লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ছাড়াও মাঠ পর্যায়ে একধরনের অহিংস প্রচারণা চালায় দলটি। তাদের ধারণা বিএনপি’র প্রচারণার কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাননি। যদিও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৭ শতাংশ ভোটের কথা জানানো হলেও, কিন্তু শেষ ঘণ্টায় ১৩ শতাংশ ভোট পড়েছে, যা অস্বাভাবিক বলে নানা মহলে সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিইসি বলেন, যখন ২টা কিংবা ৩টায় তথ্য দেওয়া হয়, সেটা কোনোভাবেই সঠিক নয়। যখন রাত ১০টায় বলি, তখন সব তথ্য চলে আসে এবং সঠিক তথ্যটি জানা যায়। হবে সে যা-ই হোক বিএনপি মনে করে তারা সফল, কারণ ভোট কেন্দ্রে জনগণ ভোট দিতে যাননি তাদের সফল প্রচারণার কারণে। 

কেনো মানছে না হাই কমান্ডের নির্দেশ?

নির্বাচনের পর পরই ভোট বর্জনের আহ্বানে সাড়া দেওয়ায় দাবি করে ভোটারদের ‘অভিবাদন’ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জনগণকে ভোট বর্জন করতে বলেছি। তারা এর যথার্থতা উপলব্ধি করে এই নির্বাচন বর্জন করেছে, আমরা তাদের স্যালুট (অভিবাদন) জানাই।’ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সাধারণ জনগণ ভোট বর্জনে যদি সাড়া দিয়ে থাকে তাহলে দলটির আহবানে তাদের নেতারা কেনো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে? কেনো হাই কমান্ডের নির্দেশ অমান্য করা হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের দ্বারা? স্থানীয় এই নির্বাচনে কারা কলকাঠি নেড়ে বিএনপি’র হাই কমান্ডকে বিব্রত করছে? না-কি তৃণমূলে বিএনপি’র হাই কমান্ডের নির্দেশ কাজে লাগে না বা মানে না? কোনটা ঠিক- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মাঠে। 

তৃণমূলে বিএনপি কি চাপে আছে?

সাড়ে তিন মাস কারাগারে বন্দি থাকার পর সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগসহ ১১টি মামলায় জামিন পেয়ে মুক্তি পান তিনি। মুক্তি পেয়ে তিনি বলেন, বিএনপির সব নেতা-কর্মীকে পরোক্ষভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘খালাস নয়, সাময়িক সময়ের জন্য জামিন পেয়েছি। আমরা এখন খাঁচায় পোষা মুরগির মতো। যখন দরকার, ধরে নিয়ে জবাই করে দেবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি’র এমন সাহসী নেতার মুখে কেনো এমন ধরনের কথা শোনা গেলো? জাতীয় পর্যায়ের নেতার মুখে যদি এমন কথা শোনা যায় তাহলে তৃণমূলে কি হাল? মাঠ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন প্রেক্ষাপট। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপি’র প্রার্থীদের কয়েকজন এই প্রতিনিধি জানান, আসলে বিএনপি’র হাই কমান্ডের নির্দেশ বা অনুরোধ শুনছে না বা শুনবে না এমন কেউ-ই নেই দলে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে অবস্থা বা প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এখানে বিএনপি’র প্রার্থী জানে তারা কোনোভাবেই জয়লাভ করতে পারবে না। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনেরও পরিবেশ নেই। মাত্র কয়েকদিন আগেও বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পালিয়ে বা আত্মগোপন করেছিলেন প্রশাসনের বিভিন্ন ধরনের হয়রানি কারণে। এরা এখন উপজেলা নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া দূরে থাক এলাকাতে থাকতেই পারছেন না, নানান ধরনের হয়রানির ভয়ে। তাই অনেকে এলাকায় বিএনপি’কে টিকিয়ে রাখতে বা দলীয় নেতাদের বাঁচিয়ে রাখতে অদৃশ্য চাপের পড়ে ডামি প্রার্থী হচ্ছেন। আরেকটি সূত্র জানায়, অনেক আওয়ামী লীগ প্রার্থী চায় না তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হউক নিজ দলের কেউ। তারা চায় তাদের সাথে অন্য দলের প্রতিদ্বন্দ্বী মাঠে থাকুক। তাদের আশঙ্কা, নিজ দলের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিতে পারে, কিন্তু অন্য দলকে তো বিভিন্নভাবে দাবিয়ে রাখা যাবে। সে কারণে অনেক জায়গায় এলাকায় কার্যত ডামি প্রাথী হিসাবে বিএনপি’র নেতাদের ব্যবহার করা হয়েছে বলেও শোনা যায়। একজন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে জানান, এতে করে তারা মনে করে সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে পশ্চিমাদের বোঝানো যাবে।

শেয়ার করুন