২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৭:৩৮:১৩ অপরাহ্ন


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২২
কথার কথকতা


‘বিধি বাম’ কথা বাংলা ভাষায় কবে অনুপ্রবেশ করেছে, আমার জানা নেই। ইন্টারনেটে এর অর্থ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, ওরা এর অর্থ বলছে ‘প্রতিক‚ল’, ‘বিমুখ’ ইত্যাদি। শব্দ দুটোকে আলাদা বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে আগ্রহ বেশি পরিলতি হলো। যা-ই হোক, এর পেছনে সত্যিকারের ভাবার্থ যা আছে, তাতো আর সহজ কিছু হতে পারে না! পরিস্থিতিটা এমন যে, তাতে বিধিকেও বাম হতে হয়! আমরা জানি যে, বিধি বা বিধাতা হচ্ছেন ধর্মভেদে আল্লাহ, গড বা ঈশ্বর যিনি সর্বদাই ডান। তার মানে বিধিপরে সবকিছুই ডান আর এর উল্টো দিকটি হচ্ছে বাম। আমরা জানি যে, যারা বিধিকে না মেনে অন্যকিছুর পে থাকে, তাদেরকে বামপন্থী বলা হয়। কিন্তু বিধি নিজেই বাম হয়ে যাওয়া, তাতো অবশ্যই কঠিন এক পরিস্থিতি হবে নিঃসন্দেহে। অবশ্য আমরা যারা বিধিকে মানি, তারা অবশ্যই জানি বিধি কখনো বামপন্থী হন না। তারপরও প্রতিক‚ল পরিস্থিতিকে যখন ‘বিধি বাম’ বলা হয়, তখন আমরা তেমন মাইন্ড করি না আর সেই লেখা পাঠ করে আমরা পরীা দিয়ে পাসও করি। তো গতকাল আমাদের জন্য সম্ভবত একটা ‘বিধি বাম’ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিলো!

আমাদের ছোট ছেলে চায়, শনি ও রোববার আমি যেন কোনো প্রোগ্রাম না রাখি, ওর সাথে ঘুরতে যাই। এদিন  সে আমাকে এবং ওর মাকে নিয়ে গেলো হেমস্টিড পার্কে। ওখানে আমরা আগেও গিয়েছিলাম। অনেক বড় পার্ক, আছে একটা বিরাট লেক। লেকে সাঁতার কাটা অনুমোদিত নয়, যদিও কেউ কেউ তা করে। ছেলের সাঁতার কাটার ইচ্ছে হলো, কিন্তু নিষেধ থাকার কারণে ওখানে সে পানিতে নামেনি। বললো, পরদিন অন্য এক লেকে যাবে, দেখাও হবে সাঁতার কাটাও হবে।

পরদিন আমরা গেলাম টিওরাটি লেক পার্কে। এটি ছিলো আমাদের বাসা থেকে বিয়াল্লিশ মাইল দূরে। ছেলেই গাড়ি ড্রাইভ করেছে। সেখানে পৌঁছে আমরা ‘বিধি বাম’ কথাটার অর্থ বুঝতে পারলাম। বেলা তখন দুটা বা আড়াইটা হবে, ওখানে পৌঁছেই আমরা দেখলাম, একটা নোটিশ লেখা আছে, ‘সুইমিং ইজ কোজড টুডে’! অবাক কাণ্ড, রোববার সুইমিং বন্ধ থাকবে কেন? এদিন ছুটির দিন, মানুষ এদিনেই তো সাঁতার কাটতে আসবে! করার কিছু নেই, কারণ ‘বিধি বাম’। বামের কিন্তু এখানেই শেষ নেই। আরো বাম আছে।

এতো দূর গিয়েও সাঁতার কাটতে না পারাটা ছেলে সহজভাবে নিতে পারেনি। ম্যাপ দেখে কয়েক মাইলের মধ্যে আরেকটি সুইমিং স্পট দেখে ওদিকে ছুটিয়ে দিলো গাড়ি। ওখানে গিয়ে দেখা গেলো, এইমাত্র প্রবেশ এবং সুইমিং কোজ করা হয়েছে।

তাহলে প্রিয় পাঠক, এবার বুঝুন, বিধি কতটুকু বাম হয়েছিলেন! আপনাদের কি মনে হয়, এ অবস্থায় হতাশ হয়ে আমরা বাসায় এসে ধপাশ করে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমিয়ে যাবো? নো অ্যান্ড নেভার। এই দীর্ঘ ফিরতি পথ অতিক্রম করে আমরা সিটির প্রাণকেন্দ্রে এসে ঢুকলাম সেন্ট্রাল পার্কে, তখনো এটি প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। এই এলাকায় পার্কিং পাওয়া খুবই কঠিন, কিন্তু বিধি ক্রমশ আমাদের প্রতি ডান হতে শুরু করেছেন বলে একটা পার্কিং পেয়ে গেলাম। রোববার নামক দিবসটিও গাড়িপার্কিং স্পেস পাওয়ার জন্য কিছু কৃতিত্ব দাবি করলো।

অবশেষে আমরা সেন্ট্রাল পার্কে ঢুকলাম। ঢুকতেই লেখা দেখলাম, ‘শেক্সপিয়ার গার্ডেন’। কবি সাহেবের নাম দেখে মনটা সতেজ হতে শুরু করলো। অনেক ফুল দেখলাম। একটা প্রাচীন দুর্গ দেখলাম। কাছিম ভর্তি একটা পুকুর দেখলাম। সেই পুকুরে ছোট-বড় হাঁস দেখলাম। মানুষের গায়ে সূর্যালোক পড়লে মানুষদের কতো সুন্দর দেখায় তা দেখলাম। দেখাটাকে পরিপূর্ণ করার জন্য একটা সাদা বক উড়ে এলো এবং পুকুরপাড়ের অল্প পানিতে মাছ ধরার ধ্যানে নিমগ্ন হলো। সবকিছুর পর একটা বিষয় ল করলাম, তাহলো- পার্কে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কর্তৃপ হাজার হাজার বছরের পুরোনো লাভাসৃষ্ট বিশাল বিশাল পাহাড়সম প্রস্তর স্তুপ নষ্ট না করে চমৎকারভাবে সমন্বয় করেছে। আমি স্পষ্ট কণ্ঠে ইঞ্জিনিয়ারদের প্রশংসা করলাম। আমরা সন্ধ্যা নামার সময় পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অবশেষে দেখলাম, বিধি আর বাম হয়ে নেই, পরিপূর্ণভাবে ডান হয়ে গেছেন। আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড সেরে আমরা যখন ঘুমাতে যাচ্ছিলাম, ততোণে বিধি পুরোটাই ডান হয়ে গেছেন। আমরা দিবসের সর্বশেষ প্রার্থনা সেরে যখন মোনাজাত করছিলাম, তখন তিনি যেন বলে উঠলেন- আরে বোকা, আমি কখনোই বাম নই, ধৈর্য ধরে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবি, আমি সদা ডান- বিধি কখনো বাম হন না!

শেয়ার করুন