২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৪৬:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


রহস্যে ঘেরা বাংলাদেশের রাজনীতি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
রহস্যে ঘেরা বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনীতির দাবা


১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটের দিকে কেন্ত্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে নেতাকর্মীদের নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। অর্থ্যাৎ দুই মাস ১৪ দিন পর খুললো বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। অপরদিকে প্রায় একটু এদিক সেদিক সময় আর দিনের ব্যবধান হবে। খবর বের হয় যে ৫ মাস পর বাসায় ফিরলেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজনৈতিক মহলে বেশ কৌতুহল আর রহস্যের জন্ম দিয়েছে এমন ঘটনা। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দলীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ করলোই বা কে? আর চাবি বা কার কাছে ছিল? যা রহস্যাবৃত্তও থেকে যাচ্ছে। যদিও তালা চাবি আর দরজা ভেঙ্গে খোলার বিষয়টি নিয়ে শেষমেষ পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। এ নিয়ে প্রথম থেকেই পুলিশ এবং বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছে। বিএনপি বলছে, পুলিশ তাদের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে। আর পুলিশ বলছে, বিএনপি নিজেরাই তাদের কার্যালয়ে তালা দিয়েছে। সুতরাং চাবিও তাদের কাছেই আছে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে ২৮ অক্টোবরে ঘটনার পর থেকে বিএনপি অফিসের নিরাপত্তাকর্মীদের একজন এই চাবি নিয়ে যান। কিন্ত প্রশ্ন হলো এই অফিস খুলতে বিএনপি কি গিয়েছিল ১১ জানুয়ারির আগে? কোনো চেষ্টা ছিল অফিসটি মুক্ত করতে? তাহলে ১১ জানুয়ারি কারা জানাল বিএনপি’র অফিসটি এখন খোলা যাবে। একথা পরিষ্কার যে পুলিশ না চাইলে কোনো দিনই এই তালা ভেঙ্গেও বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মী ঢুকতে পারতো না। আবার এই অফিসের চাবি যদি বিএনপি’র কেউ নিয়ে যেতো, তা ফিরে পাওয়া যেতো। কিন্ত দৃশ্যত তা দেখা যায়নি। 

যা অনেকটা রাজনৈতিক কৌশল বা এর পেছনে কোনো গোমড় হয়তবা আছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আবার এমন প্রশ্নও করে বসেছেন যে প্রায় একই সময়ে বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াই বা কি করে ঘরে ফিরলেন? এসব কিছুর পেছনে কোনো কৌশলির সুক্ষ কৌশল কাজ করেছে বলেই অনেকে মনে করেন। বিষয়গুলি একটু ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক মহলে। কারণ সবদিক থেকেই বিবেচনা করলে খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। কিন্ত ঠিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হলো আর এরপরেই একেবারে নিরুত্তাপ পরিস্থিতিতে দু’টি ঘটনা? কেমন জানি রাজনৈতিক কৌশলীরই মারপ্যাচ বলেই মনে করেন কেউ। রয়েছে আরো প্রশ্ন। কেনোইবা খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বিদেশে হচ্ছে না? কেনোইবা তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছেনা-এমন বিষয়গুলি যখন সরকারের কঠোর মনোভাব হিসাবে ধরা হচ্ছে ঠিক তখনই দেখা গেলো অন্য ধরনের ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে আক্রান্ত ৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিন্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তার পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্ত গত বছরই টান টান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধেই ২৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি নেত্রীর রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। এমন বিষয়ের পেছনে কি আসলে ঘটে যাচ্ছে তা হয়তো কোনো এক সময় গবেষণা বিষয় পাশাপাশি নেপথ্যটা বেরিয়ে আসবে। 

পিটার হাস-সাবের হোসেন বৈঠক ও মন্ত্রী হওয়া 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বর্জন করবে না-কি দেশে কোনো একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে টান টান উত্তেজনা ঠিক তখনই দেখা গেলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ৭ নভেম্বর সাবের হোসেন চৌধুরীর পরীবাগের বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ২ ঘণ্টা অবস্থান করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে তিনি বেরিয়ে যান। তবে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি পিটার হাস। অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ অংশীদারত্বকে আরো গভীর ও সমৃদ্ধ করার বিষয়ে কথা হয়েছে।’ 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এর আগে ৩ নভেম্বর পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। প্রশ্ন হচ্ছে যদিও দীর্ঘদিন পর সাবের হোসেন চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত কিন্ত তার আগে বেশ দূরে ছিল তার অবস্থান। কেননা তাকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের গুঞ্জন ছিল, যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে তাকে একটু দূরে দূরে দেখা গেছে। সে-ই গুঞ্জন শেষ না হতেই তিনি ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত’ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে সাবের হোসেন চৌধুরী যাকে বলা হয় একদম নির্লোভ এবং অতিমাত্রায় একজন ভদ্রলোক এর পাশাপাশি সজ্জন ব্যক্তি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে এবং বিশ্ব ক্রিকেটে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০২ সালের অক্টোবর মাসে লন্ডনে মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব তাকে আজীবন সদস্যপদ প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ২০০৩ সালের জানুয়ারি এবং অক্টোবর মাসে তিনি কারান্তরীণ থাকেন। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা তাকে আখ্যায়িত করে ‘বিবেকর বন্দি’ হিসেবে। সেই সময় এই সংস্থাটি তার মুক্তির দাবিতে ‘আর্জেন্ট অ্যাকশন’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রচার চালিয়েছিল। তবে ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে বৈঠকের পর থেকে সাবের হোসেনের নাম একটু অন্যভাবে উচ্চারিত হতে থাকে। ধারণা করা হছ্ছে তিনি একটি শক্তিশালি দেশের পছন্দের সব্বোর্চ পর্যায়েই চলে আসে। এরই মধ্যে চমক দেখানো খবরটি হলো পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী দায়িত্ব পেলেন সাবের হোসেন চৌধুরী। 

প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয় 

বাংলাদেশের ইতিহাসে পঞ্চমবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এবার রাখা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীসহ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য ৩৭ জন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলে উৎসক্য হলো যে বেশ কিছু স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয় এবার প্রধানমন্ত্রীর নিজ হাতে রাখলেন তা খুবই ইঙ্গিতপূর্ণ। এই মন্ত্রণালয়গুলি হচ্ছে আগামী দিনে ভূ-রাজনৈতিক দাবার চালের অন্যতম গুটি। ভূ-রাজনীতির পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে এসব মন্ত্রণালয়ের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। তাই এগুলিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে রেখে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিচ্ছেন সবার কাছে। তবে পরবর্তিতে নতুন মন্ত্রিসভায় বিদ্যুৎ বিভাগের পর এবার গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়েরও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নসরুল হামিদকে। 

দুর্ভিক্ষ না অন্য কিছু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি সম্প্রতি এক আশঙ্কার কথা বলেছেন। তা হলো আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের দিকে বাংলাদেশে এমন অবস্থা করবে, দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের (ধারণা করা হচ্ছে বিএনপি’কে লক্ষ্য করে) পরবর্তী পরিকল্পনা। আবার এ-ও বলেছেন, এটা শুধু দেশের না, বিদেশি একটা প্ররোচণাও আছে। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি আসলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার কথা জানালেন? না রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা বললেন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে আসলে দুর্ভিক্ষ নয়। প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সঙ্কট বা একটি বড়ো ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলনে ইঙ্গিতই করেছেন। কেননা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দু’টি শক্তিধর দেশসহ পশ্চিমারা বলেই দিয়েছে যে বাংলাদেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদন্ড অনুযায়ী হয়নি বলে অভিমত দিয়েছে যুক্তরাজ্যও। তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের দিকে যে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর আশঙ্কা করেছেন আর এর পেছনে আশঙ্কা করে বলেছেন বিদেশি প্ররোচণার। তাহলে কি তারা কারা? আর দল হিসেবে তো ধরেই নেয়া যায় মাঠের প্রধান বিরোধী দল যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় মার্চে বড়ো ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলনে আভাস রয়েছে দেশে, যাকে বলছেন দুর্ভিক্ষ? আবার প্রধানমন্ত্রী আমেরিকার উদ্দেশ্যে বলছেন, তাদের লজ্জা নেই। যে কাউকে তারা ক্ষমতায় বসাতে পারে। আরেকটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, নির্বাচন শেষ হলেও ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে।

কে পেলো জাপা? কারা ছিল নেপথ্যে?

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল চুন্নুকে এখন দায়ী করে ক্ষোভ ঝাড়ছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) পরাজিত প্রার্থীরা। কিন্ত কেউ এখান থেকে প্রশ্ন খোঁজার চেষ্টা করছে না কেনো দলের এই দু’জন বিশেষ করে চেয়ারম্যান জি এম কাদের রাজনৈতিক ধরা খেলেন? প্রশ্ন হচ্ছে কারা তাকে কোনো দেশ তাকে বিশাল বুকভারা আশ্বাস দিয়েছে? অধিক সংখ্যক আসন দিয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল করা হচ্ছে বলে কারা তাকে আশ্বস্থ করেছে? আবার কারা পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে এমন মনোবল দিল যে জাতীয় পার্টি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসীনও হয়ে যেতে পারে? 

দলের অনেকে বলে যাচ্ছেন যে তৃণমূলের নেতাদের মতামতের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও তাঁর স্ত্রী শেরীফা কাদের। আবার এমন অভিযোগও প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে তা জন্য আসন বাগাতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বলি দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বা কারো মনে জাগছে না একটি বিষয়- তা-হলো সংসদে বেশি আসন দিয়ে প্রধান বিরোধী দল আবার এর পাশাপাশি ক্ষমতায় আসীন হয়ে যাওয়া বা বসতে হচ্ছে জাপা- এমন পুরো নির্বাচনী প্যাকেজটা কে দিলো দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে? কেনোই বা তিনি এমন গ্যাড়াকলে নিজেই পড়লেন? আবার সাথে করে আবার জাপা’কেও ডোবালেন? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এসবের ব্যাপারে এখনো কেনো মুখ খুলছেন না চেয়ারম্যান জি এম কাদের? 

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে ভোটে ভরাডুবি নিয়ে জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা-কর্মীদের একটা অংশের নানা অভিযোগের ব্যাপারে দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘যারা বলছে, আমরা টাকা পাইছি, টাকা যে পাইছি, এর সাক্ষী-প্রমাণ কী। বললেই হলো টাকা পাইছি।’ জি এম কাদের আরও বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এর বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য আরও কী কী হয়েছিল, সেটা তিনি বলতে চান না। প্রশ্ন হলো জি এম কাদের আর কখন বলবেন? এর আগে ভারত থেকে ফিরেও বলেছিলেন কিছু বলবেন না। গত বছর টান টান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে চার দিনের ভারত সফরে গিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ফিরে জানান ভারতীয় কর্মকর্তারা জাতীয় পার্টিকে উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়ার কথাও বলেছেন। বলেন, তাঁরা বলেছেন, যেহেতু জাতীয় পার্টির সবার কাছে একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তাই সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, সবাইকে একসঙ্গে করে, সুন্দর একটা নির্বাচন করতে পারলে তারা খুশি হবেন। এসময় সাংবাদিকদের এর প্রশ্নের এসবের পাশাপাশি একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভারতে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিন্ত কার কার সঙ্গে সে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং কী বিষয়ে হয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না। প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি প্রতিবেশী দেশটির বড়ো ধরনের আস্থায় আস্থাশীল হয়েই নির্বাচনে গিয়েছেন? কবে এসব ব্যাপারে তা পার্টি বা দেশবাসীকে বলবেন? না-কি সব কিছু রহস্যের মধ্যেই থেকে যাবে? জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিএনপি’র মুক্ত অফিস, খালেদা ঘরে ফেরা আর মার্চে বিক্ষোভের আভাস-এসব বিষয়গুলি আসলে রাজনৈতিক মহলে বেশ রহস্যঘেরা।

শেয়ার করুন