৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০১:১৬:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


স্বাধীনতার একান্ন বছর, মানুষের প্রত্যাশার সিঁড়ি
ফকির ইলিয়াস
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২২
স্বাধীনতার একান্ন বছর, মানুষের প্রত্যাশার সিঁড়ি


বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে। সেই সংখ্যা ৫০ বছরে প্রায় সাড়ে সতেরো কোটি। কিন্তু ভূমির পরিমাণ বেড়েছে কি? না বাড়েনি। বরং কমেছে। বাংলাদেশের গ্রাম-গ্রামান্তরে এখন বড় বড় স্থাপনা। উচ্চ ভবন। অপরিকল্পিত নগরায়ন! হাস-মুরগি কিংবা মাছের খামার! কমেছে ফসলি জমির পরিমাণ। তারপরেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ! কীভাবে তা সম্ভব হচ্ছে!

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ছিল বাংলাদেশের প্রধান শক্তি। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমশ বেরিয়ে এসেছে দেশ। শিল্প ও সেবাখাতমুখী হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশেও একটি ছোটখাটো শিল্পবিপ্লব হয়েছে। বিস্ময়কর অগ্রগতি ঘটেছে কৃষিখাতে। করোনার দুঃসময়ে বাংলাদেশের রফতানি আয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, বরং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হার বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও বেড়েছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় হয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ ডলার।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ সব খাতেই পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় ভালো অগ্রগতি করেছে। বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর এক দেশ। আর্থিক ও সামাজিক সূচকে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে আরো কিছু সূচকের তুলনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশ অনেকটাই সমৃদ্ধির পথে এগিয়েছে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল ফাইন্যান্সের দ্রুত বিকাশ ঘটেছে গত এক দশক সময়ে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ ব্যাংকিংসেবার আওতার বাইরে থাকলেও ডিজিটাল ফাইন্যান্স তাদের আর্থিক লেনদেনের চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। অতীতে বাংলাদেশের ব্যাংকিংসেবার পরিধি শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা গ্রামাঞ্চলেও বিস্তৃত হয়েছে। এখন বেসরকারি ব্যাংকগুলো শাখা খোলার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের মানুষকে তাদের আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে বেশ তৎপর হয়েছে।

স্বাধীনতার পর দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ কৃষির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে এ হার ৪০.৬ শতাংশ। ১৯৭৩-৭৪ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৫৮.০৪ শতাংশ, ২০১৯-২০ সালে জিডিপিতে কৃষির অবদান ১৩.৩০ শতাংশ, জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদানের হার কমলেও মোট অবদান বেড়েছে প্রায় ৬.০ গুণ। দেশের মেধাবী কৃষিবিজ্ঞানীরা গবেষণা করে বিভিন্ন ফসলের ৯৭২টি জাত ও ১৩৯২টি উন্নত কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, যা দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে মুখ্য ভূমিকা রেখে চলেছে। এর ফলে দেশের কৃষি গবেষণা, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষিশিক্ষায় এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। জনসংখ্যা ২.৫গুণ বৃদ্ধি পেলেও তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫গুণ। আর কৃষিবিজ্ঞানীদের বিরামহীন প্রচেষ্টা ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মাছ ও চা উৎপাদনে চতুর্থ, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় এবং পাট রফতানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম স্থান অর্জন করেছে।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যান্ত্রিক চাষাবাদ ছিল না বললেই চলে। গরু দিয়ে সনাতন পদ্ধতিতে কৃষক হালচাষ করতো। বর্তমানে পাওয়ার টিলার, কম্বাইন্ড হারভেস্ট, রিপার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি চাষাবাদ করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের বিভিন্ন কৃষি যান্ত্রিকীকরণ কর্মসূচির ফলে দেশে কৃষি জমি চাষে ৯০ শতাংশ, আগাছা দমনে ৬৫ শতাংশ, কীটনাশক প্রয়োগে ৮০ শতাংশ, সেচকার্যে ৯৫ শতাংশ এবং ফসল মাড়াইয়ের কাজে ৭০ শতাংশ যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব হয়েছে।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে ঈর্ষণীয় সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত। স্বাস্থ্য সেক্টরে জনবল বৃদ্ধি, অবকাঠামোর উন্নয়ন, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস, ওষুধের সরবরাহ বৃদ্ধি, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি ক্লিনিক চালু, স্বাস্থ্যখাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম ইত্যাদি উন্নয়নমূলক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সফলতা পেয়েছে সরকার। কিন্তু সর্বজনীন স্বাস্থ্যসুরক্ষা অর্জনে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি রয়েছে। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। আর্থিক সংকটে জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীর অকালে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। যার দিকে সরকারের আরো মনোযোগী হওয়া উচিত। কারণ বিশ্বে আধুনিকতার উন্নয়ন হলে, রোগবালাইও নতুন রূপে আবির্ভূত হয়। কোভিড-১৯ এর ধকল আমাদের সেটাই মনে করিয়ে দিয়েছে।

বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। প্রতি বছর গড়ে ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছেপে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে দেশে নিরক্ষরতা কমেছে আশানুরূপ গতিতে। বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থী এখন বাড়ছে। প্রাথমিক স্তরে প্রায় শতভাগ এনরোলমেন্ট, ঝরেপড়ার হার দিন দিন হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়া, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে লিঙ্গ সমতা অর্জন, উচ্চশিক্ষা স্তরে নারী শিক্ষার্থীর হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, কারিগরি শিক্ষার হার ১৪ শতাংশে উন্নীত হওয়া, ব্যাপকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মাদরাসা শিক্ষাধারার আধুনিকায়নসহ গত অর্ধশতকে শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তবে শিক্ষার মানের প্রশ্নে শিক্ষাবিদদের অতৃপ্তি রয়েই গেছে। সংখ্যাগত দিক থেকে শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি হলেও মানের দিক থেকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এখনো পৌঁছানো যায়নি বলে মনে করছেন অনেকেই।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাবনা ও নির্দেশনা ১৯৭৪ সালেই ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। শিক্ষার ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অধিগ্রহণে, যা জাতীয়করণ হিসেবে সমধিক পরিচিত, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া আর কেউই সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেয়নি। বঙ্গবন্ধু ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছিলেন। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তিত হয়েছে। এতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, বস্তিবাসী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা পাঠ্যসূচি ও কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা উল্লেখ করার মতো। এ ধারাবাহিকতায় শিক্ষায় নারীর ক্ষমতায়ন বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় উপাচার্য ও উপউপাচার্য পদে নিয়োগ থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় নারীর অবস্থান এখন চোখে পড়ার মতো।

শিক্ষার সহজলভ্যতা ও প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সংকট ও গ্রাম-শহর বৈষম্য কমে যাওয়া এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি এখন শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্য ও অবিচ্ছিন্ন উপাদান। ২০১১ সালে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়নের মধ্য দিয়ে শিক্ষার সঙ্গে দক্ষতাকে যুক্ত করার প্রয়াস নেয়া হয়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির বিশেষ করে এর ৪ নম্বর অর্জনে জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সদস্য সংগঠন ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা দ্বারা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

    বাংলাদেশে অনেক উন্নয়নই দৃশ্যমান। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল বড় উদাহরণ। আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু যে কালোসাপের ফণা বাঙালি জাতিকে তাড়া করে ফিরছে, তাহলো লুটেরা শ্রেণির ক্রমাগত উত্থান।

বাংলাদেশের রাজনীতি এখন আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই! এমন অভিযোগ আমরা প্রায়ই শুনি। ব্যবসায়ী, আমলা, প্রাক্তন সেনাকর্মকর্তা, পেশাজীবীরা রাজনীতিতে আসতে পারবেন না- তেমন কোনো কথা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, দেশ দুর্নীতিমুক্ত, স্বজনপ্রীতিমুক্ত, লুটপাটকারীদের দখলমুক্ত আছে কী না!

     আমাদের মনে রাখা দরকার, আমাদের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে প্রগতির পথে। এটি একটি খুব কঠিন কাজ। একাত্তরে যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করেছিল, আজকের প্রেক্ষাপটে কেবল তাদেরই স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করলে হবে না। সেদিন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থেকেও যারা আজ সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-সন্ত্রাস-দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে চলে, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে, তারাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। এরাও স্বাধীনতাবিরোধী। যারা কালোটাকার মালিক-লুটেরা ঋতখেলাপি তারাও স্বাধীনতাবিরোধী। তাই এতোগুলো শক্তির বিরুদ্ধে যুগপৎ লড়াইয়ে সফল হতে হলে প্রচণ্ড শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। এখানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঐক্যের কথাটি সামনে চলে আসে। সকল মহল থেকেই আহ্বান জানানো হচ্ছে ঐক্যের। এই ঐক্য হতে হবে সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডটি স্বাধীনতা পেয়েছিল একটি নৈতিক অবকাঠামোর ওপর। আর তা হচ্ছে, সকল মানুষের জন্য একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। যে দেশে মানুষ শান্তিতে থাকবে। থাকবে শোষণমুক্তভাবে। তা কি হয়েছে? না, হয়নি।

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি লেনদেনে কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতির ছাপ রয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় এসব দুর্নীতির প্রমাণ করা যাবে না। তবে সবাই জানেন, ঘুষ না দিয়ে বাংলাদেশে কোনো কাজ করা যায় না। বাংলাদেশে কেউ কোনো চুক্তিতে আগ্রহী হলে তাকে ধরেই নিতে হয় যে চুক্তির একটা ভাগ অন্যদেরও দিতে হবে। চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সবারই মাথায় রাখতে হয়। অন্যথায় কেউ চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে না। এটাই যদি বাংলাদেশের নিয়মিত নিয়তি হয়-

তাহলে আমাদের স্বাধীনতা তো উজ্জ্বলতা হারাবেই।

     সামাজিক বৈষম্য ও বিদেশে টাকা পাচার বেড়েই চলেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে আমদানি-রফতানির আড়ালে। দেশ থেকে এসব অর্থ যাচ্ছে পৃথিবীর ৩০-এর অধিক দেশে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে ১০ দেশে। যার বড় অংশই জমা হচ্ছে সুইস ব্যাংকে। এ ছাড়া অর্থপাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরই বাংলাদেশের অবস্থান। এসব অর্থপাচারের কয়েকটি কারণকে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে রয়েছে- বিনিয়োগের পরিবেশের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর দুর্বল নজরদারি, আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বেপরোয়া দুর্নীতি। দেশ থেকে অর্থপাচার রোধে বহু পদক্ষেপ নেয়া হলেও এ ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সুফল না পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।

কানাডার ‘বেগম পাড়া’ এখন বিশ্বে পরিচিত একটি সংবাদ। অভিযোগ রয়েছে, টাকা পাচারের বিষয়ে সরকার অবহিত থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কারণ প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের অনেকেই অর্থপাচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তবে অর্থপাচার প্রক্রিয়ায় কেবল রাজনীতিক নন; দেশের অনেক ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত, যারা নীতি-নৈতিকতা ও দেশপ্রেম ভুলে বিদেশে অর্থপাচার করছেন।

   এ প্রবণতা বন্ধ না হলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিপুল অঙ্কের টাকা পাচারের কারণে এসডিজির সফল বাস্তবায়ন ও অন্যান্য লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লে এবং দুর্নীতি কমলে বিদেশে অর্থপাচার হ্রাস পাবে। কাজেই অর্থপাচার রোধে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

গেল ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। পাশাপাশি হেঁটেছে বিসর্জনও! এই কালিমা পরিত্যাগ করা উচিত ছিল জাতির। তারা তা পারেন'নি। পারেননি বলেই অনেক অশুভ শক্তি ফুঁসে উঠেছে বিভিন্নভাবে। বাংলাদেশকে একাত্তরের চেতনায় সমুন্নত রাখতে হলে গণমানুষের আকাক্সক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস নিয়ে অনেক কাজই করছেন। এই কাজটি করতে পারলেই প্রজন্ম একটি আলোকিত স্বদেশের সূর্য উপহার পাবে- সন্দেহ নেই। 


শেয়ার করুন