০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২২:১৯ পূর্বাহ্ন


সাকিব এক চাঁদের কলঙ্ক
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
সাকিব এক চাঁদের কলঙ্ক সাকিব আল হাসান


৫১ বছরে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন খেলায় অনেক তারকা-মহাতারকা নানাভাবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রক্তমূল্যে কেনা বাংলাদেশের লাল-সবুজ জাতীয় পতাকাকে সমুজ্জ্বল করেছেন। আমি বর্তমান ফ্রাঞ্চাইজ ব্যক্তিগতভাবে কখনো একযুগের খেলোয়াড়কে অন্যযুগের খেলোয়াড়ের সঙ্গে অনিঃসন্দেহে তথা, এক খেলার খেলোয়াড়কে অন্য খেলার খেলোয়াড়কে তুলনীয় বলে মনে করি না। তবুও কিছু কিছু খেলোয়াড় অর্জন দিয়ে নিজেদের নামের চেয়েও বড় হয়ে ওঠে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল করে।  বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ক্রিকেটের সকল ফরম্যাটে বিভিন্ন সময়ে শ্রেষ্ঠ চৌকস খেলোয়াড় হিসেবে নন্দিত সাকিব আল হাসান- এমনি এক জনপ্রিয় খেলোয়াড়ের নাম। 

তবে ভিন্নযুগের ভিন্নমাত্রার চৌকস ক্রিকেটারের তুলনায় সাকিবের অবস্থান কোথায়, সেটি সাকিব যখন ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করবেন, তখন আলোচিত হওয়া সমীচীন হবে। বিশ্বসেরা চৌকস ক্রিকেটারদের কুলিন তালিকায় সাকিবের নাম এখন স্যার গারফিল্ড সোবার্স, স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, জ্যাক কালিস, ইমরান খান আর কপিল দেবের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। আর বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটে এই মুহূর্তে সাকিবের কাছাকাছি আলোচিত বেন স্টোকস ছাড়া আর কেউ আছে কি? 

স্মরণে রাখুন, বাংলাদেশে ক্রিকেট এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, যদিও বাংলাদেশ এখনো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট ছাড়া বিশ্ব পর্যায়ে কোনো টুর্নামেন্ট সেরা হয়নি। অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে বাংলাদেশের ক্রীড়া খেলোয়াড়রা সাকিব আল হাসানকে শ্রেষ্ঠতম ক্রীড়াবিদের পুরস্কার দিয়ে কিছুটা আলোচনা উপহার দিয়েছে। নিঃসন্দেহে ব্যক্তিগত অর্জন আর বিশ্বজোড়া ফ্রাঞ্চাইজ ক্রিকেট যুগে অন্যতম ফেরিওয়ালা হয়ে সাকিব এপার বাংলা ওপর বাংলা তো কথাই নেই, বিশ্বজোড়া বাঙালি সমাজের গর্বের কারণ হয়েছে। কিন্তু একইসঙ্গে বেটিংসহ নানা বিতর্কে জড়িয়ে সাকিব ‘ব্যাড বয় অব ক্রিকেট’ চরিত্র অর্জন করেছে। জানিনা অন্য কোনো বিশ্বসেরা খেলোয়াড় খেলোয়াড়ি সময়ে অর্জন আর বিতর্ক নিয়ে সমভাবে নন্দিত এবং নিন্দিত হয়েছে কিনা? যখন কোনো ক্রীড়াবিদকে কোনো দেশের অর্ধশতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়, তখন তার মাঠের ভেতরের এবং একইসঙ্গে বাইরের ভূমিকা একইভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।

শেষবার যখন বাজিগরদের সঙ্গে সংযোগ প্রসঙ্গে আইসিসি কর্তৃক শাস্তি পেলো-আমি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ‘সাকিবনামা’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। অস্ট্রেলিয়ায় একটি প্রদর্শনী ম্যাচে সাকিবকে আমন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এতো কিছুর পরেও আমি আমার এক সময়ের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি (এখন বিএসপিএ ) নির্বাচন বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছি। বিসিবির দুর্বলতার কারণেই সাকিব খেলোয়াড়দের কোড অব কন্ডাক্ট বারবার ভেঙে পার পেয়ে যাচ্ছে।  

কেউ কি কখনো মাইকেল ফেদেরারের সঙ্গে লিওনেল মেসির তুলনা করবেন? অথবা ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে টেন্ডুলকারের? নাকি পেলের সঙ্গে তুলনা হবে মাইকেল ফেলপসের?

সাকিবের চেয়ে কোনো বাংলাদেশি ক্রিকেটার অবশ্যই এতো বিশাল আন্তর্জাতিক অর্জন করেনি অনস্বীকার্য। কিন্তু যাকে কোটি কোটি শিশু অনুসরণ করে বীরের ভূমিকায় তার মাঠের আচরণ বা মাঠের বাইরের ক্রোম পুঞ্জিত কাজগুলো কি অনুসরণযোগ্য মনে হয়? আমি বিসিবির নানা অনিয়ম, ব্যর্থতা নিয়ে সাকিবের প্রতিবাদ, ন্যায্য অভিযোগে দোষের কিছু দেখি না। কিন্তু এগুলো বলার বা জানানোর মাধ্যমে বা সময় নিয়ে আমার ভিন্নমত আছে। 

খেলার জীবন শেষে সাকিব অবশ্যই ক্রিকেট নিয়ে অবদান রাখার যোগ্যতা রাখেন। কিন্তু বিশ্বমানের খেলোয়াড় হলেই সেরা সংগঠক বা প্রশাসক হবে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেয়ার কোনো কারণ নেই। নন্দিত সাকিবের নিন্দিত দিকগুলো আড়ালে রেখে (চাঁদের কলঙ্ক) সবাই ভালোবাসুক। সাকিব সংশোধিত হোক ক্রিকেটীয় ঔদার্য্যে কামনা করি।

শেয়ার করুন