২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৫১ পূর্বাহ্ন


তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল দেশ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে উত্তাল দেশ তারেক রহমান


দেশের পরবর্তি রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে উত্তাল দেশ। সর্বত্রই এক ধরনের স্বস্তির নিঃশ্বাস। এ কথা বলতে আর দ্বিধা নেই- খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের নেতৃত্ব দেয়ার একজনই যোগ্য- তারেক রহমান। বিএনপি তো বটেই, প্রবল প্রতিপক্ষ আওয়ামীপন্থীরাও বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে তারেক রহমানের উপস্থিতি চাচ্ছেন। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে অভিন্ন এ মত জানা গেছে। এক সময় তারেক রহমান ছিল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ। খালেদা জিয়া বয়সের ভারে ন্যুয়ে যাওয়ায় সম্ভব্য রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান- সেটা ধরেই অমন বৈরিতা। মামলা মকদ্দমা থেকে হেন প্রতিবন্ধকতা বাকি নেই- তারেক যেন দেশে পা রাখতে না পারেন, সে বাঁধা তৈরিতে। ২০২৪ এর ৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে বালুর বাঁধের সে বাধা ধুয়ে মিশে গেছে। 

কিন্তু গণঅভ্যুত্থান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর সময়ে বিএনপি খালেদা জিয়ার শারিরীক অসুস্থতা ও তারেক রহমানের নানা বাঁধা পেরিয়ে দেশে ফেরা বিলম্ব হওয়ার সুযোগে যা যা ঘটেছে, সেটা বাংলাদেশের মানুষের কারোরই অজানা নেই। দেশে স্বাধীনতা বিরোধী একটি দল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অস্থিত্ব বিলীনেও সুকৌশলে চেষ্টারত। ইতিমধ্যে প্রতিবাদও করেছে বিএনপি। কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এ ব্যাপারে নিশ্চুপ আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য ধরে রাখা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য তারেক রহমানই ‘ত্রাণকর্তা’ বলে স্বীকার করে দেশে তারেকের উপস্থিতি আওয়ামী লীগও কামনা করছে। কারণ যে দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ, বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা পালিয়ে গেছে দেশ থেকে। অবশিষ্টরা বিভিন্ন অপরাধে জেল হাজতে, তাদের এখন দলের ইতিহাস ঐতিহ্য বিলীন হওয়া থেকে মুক্তি পেতে কারো না কারোর উপর ভরসা করতেই হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে দলটির এমনই বেহাল অবস্থা, এমন অবস্থায় কিছুটা হলেও ভরসা রাখতে চান তারেকের উপর। 

এর আগে ওয়ান ইলেভেনের বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতিতে মুচলেকা দিয়ে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারেক রহমান। স্বাক্ষরও দিতে হয়েছিল, আর কোনোদিন রাজনীতি করবেন না। জীবন বাঁচাতে তারেক সে কাজটা করেছিলেন। যে ভাবে তিনি স্বাক্ষর দেন, সেটাও তিনি উঠে বসে দিতে পারেননি। বিছানায় শুয়ে। তার মেরুদন্ডের হাড় শত্রুর বিষাক্ত ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। উঠে দাঁড়ানোরও উপায় ছিল না। সেটা দীর্ঘ ইতিহাস। সকলেরই জানা! তবু তার দেড় যুগ সময়ে পরবাসে কাটাতে বাধ্য হয়ে যখন দেশে ফিরছেন, তখন তার দেশ ছেড়ে যাবার ক্ষণ অনেকেই মনে করতে চাইবেন। তরুণ প্রজন্মও জানতে চাইবে- যার জন্য গোটা দেশ এখন উদগ্রীব, কেন তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ওয়ান ইলেভেনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির শিকার হয়ে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকেও কারাবরণ করতে হয়েছিল। এরপর শেখ হাসিনা অনেক কিছু বিষয় সমঝোতা করে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করলেও খালেদা জিয়া ও বিএনপি এখনও নির্যাতন নিপিড়ন সহ্য করে টিকে রয়েছে। তারেক রহমান তারই অংশ বিশেষ উদহারণ নিয়ে লন্ডনে কাটিয়ে দিলেন জীবনের একটা বড় সময়। এ দীর্ঘ সময় বিএনপির অগণিত নেতাকর্মীর মত তারেক রহমানেরও অনেক আক্ষেপ, আবেগ রয়েছে। সে সব কিছুর এখন অবসান হতে চলছে। 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আসছেন, বা এ লেখা পাঠকের কাছে যখন পৌঁছে যাবে, তখন হয়তো তিনি ফিরতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশের মাটিতে। এরমাধ্যমে অবসান ঘটলো দীর্ঘ ১৭ বছরের। পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে যে তারেকের জন্য শুধু বিএনপিই বা খালেদা জিয়া নয়-গোটা বাংলাদেশের মানুষ উদগ্রীব। তাকিয়ে, কখন আসবেন তিনি। যে শত্রুপক্ষ ছক এঁকেছিল তার দেশ ত্যাগের। তারাও এখন বলছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরা বড্ড দেরি হয়ে গেছে। আরেকটু আগে আসলেই সম্ভবত ভাল হতো!

শুধু বিএনপিই নয়, অমন প্রত্যাশা দীর্ঘ দুইযুগ যারা তারেক রহমানকে চিরশত্রু হিসেবে দেখেছিলেন, কুৎসা রটিয়ে চেয়েছিল, তারেক নিঃশ্বেস হয়ে যাক- তারাও এখন তারেক বন্দনায়। তারেক বিদ্বেষী অনেকের মুখেও এখন প্রশংসা। তারেক- দেশে ফিরে গণতন্ত্র রক্ষা করুন, দেশকে স্বাধীন বাংলাদেশ যারা চায়নি, গণতন্ত্রের যারা শত্রু, তাদের হাত থেকে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে নিয়ে দেশের অস্থিত্ব রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করুন- এ যেন মনের অজান্তে বেড়িয়ে পরা এক নিঃস্বার্থ আবেদন। 

বাংলাদেশের মানুষের তারেকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে শুরু করেছে ৫ আগস্ট দীর্ঘ দেড়যুগ ক্ষমতায় আঁকড়ে থেকে ফ্যাসিস্ট আকার ধারণ করাদের স্বদলবলে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর। তবে তখনকার পরিবেশ অনুকূলেও ছিল না। তারেকের নামে বহু মিথ্যা মামলা। আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী। সেসব মিথ্যা মামলা রাষ্ট্র কতৃক প্রত্যাহার হতেও সময় লেগেছে। এছাড়াও আরো একটা কারণ রয়েছে। 

বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশের পলিটিক্স দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে দূরদূরান্ত থেকেও অনেকটা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। এ কথা দেশের মানুষেরও অজানা নয়। ফলে যে ভবিষ্যতে দেশের দায়িত্ব নেবেন। দেশকে সঠিক উপায়ে চালাতে মনস্থির করবেন। তাকে অবশ্যই বন্ধুভাবাপন্নদের অনেক আবদার, পরামর্শ মেনেই তার চলার পথ মসৃণ করতে হয়। সেটা দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই। কারণ বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। অনেকক্ষেত্রেই অন্যদেশের উপর নির্ভরশীল। তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। সাহায্য প্রয়োজন। আছে দেন দরবার, অনেক কিছু। সম্ভব্য রাষ্ট্রনায়ককে সে সবেও মনোনিবেশ করতে হয়েছে।

তবে এটাও ঠিক, যতটা সহজেই তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক ভাবা হচ্ছে ততটা কিন্তু সহজ নয়। কারণ তারেক নিজেই ৫ আগস্টের পর থেকে নেতাকর্মীকে অনলাইন প্লাটফর্মে যেভাবে তিনি দীর্ঘ দেড়যুগ ধরে বলে আসছেন সেভাবেই জানিয়েছেন যে আওয়ামী লীগ নেই তবু বিএনপি সহজেই রাষ্ট্রক্ষমতা পেয়ে যাবে এটা ভাববার সুযোগ নেই। প্রচন্ড প্রতিযোগিতা করে তবেই হয়তো ওই লক্ষ্যে যাওয়া যেতে পারে। এ জন্য সকল নেতাকর্মীকে সাবধানের সঙ্গে পা ফেলতেও তিনি নিদের্শনা দিয়েছেন এবং মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে বলেছেন।

দেড় বছর আগের তারেকের সে কথা এখন বাস্তব 

যেভাবে বিএনপিকে নিয়ে কুৎসা রটানো হচ্ছে, সেটাতে আড়াল পরে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৬ বছরে আওয়ামী লীগের দুঃসস্মৃতিময় সেই সময়ও। যখন গুম, খুন, লুটপাট, অর্থ পাচার ছাড়াও দখল, চাঁদাবাজিতে সয়লাব ছিল রাষ্ট্র। গণতন্ত্র মিলিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল এক নায়কতন্ত্র। চব্বিশের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর এ সময় পর্যন্ত একটা স্বার্থান্বেষী মহল কৌশলে আওয়ামী লীগের সেসকল অপকর্ম আড়াল করে দিতে দীর্ঘ ১৭ বছর নির্যাতিত, নিপিড়িত, গুম খুনের শিকার বিএনপির নেতাকর্মীদেরকেই বড় সন্ত্রাস হিসেবে তকমা দিয়ে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা একটা দলকে কঠিন চাপের মধ্যে ফেলেছে। 

এমন প্রেক্ষাপটে একটা গ্রুপ মিলিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের সেই মহানস্মৃতিসমূহ। চলছে ইতিহাস পাল্টে দেয়ার চেষ্টা। বাধ্য হয়ে, উপায়ন্ত না দেখে সেই গণঅভ্যুত্থানে পরাস্ত হওয়া দল যারা বিএনপিকে প্রতিনিয়ত নিশ্চিহ্ন হওয়ার চেষ্টায় বুঁদ হয়ে থাকতেন, তারাও আজ বিএনপির জন্য শুভকামনা জানাচ্ছে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরে আসার ব্যাকুলতা তাদের মধ্যেও। কারণ আর কিছু নয়, তারেক রহমান এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নীতির ধারক বাহক। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষক, রণাঙ্গনের বীর সৈনিক সেক্টর কমান্ডার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন মানুষের রিদয়ে স্থান করে নেয়া জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পূত্র। 

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার কাছে যেমন দেশ নিরাপদ ছিল, গণতন্ত্র নিরাপদ ছিল। এ মুহূর্তে দলমত নির্বিশেষে এমনকি আওয়ামী লীগেরও বহু নেতাকর্মী বলেও ফেলছেন এ সময়ে তারেক রহমানের হাতেই দেশ নিরাপদ, গণতন্ত্র নিরাপদ। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিরাপদ। ফলে দেশের এক ক্রান্তি লগ্নে দলমত নির্বিশেষে সবার খোঁজ এক মোহনায় যেয়ে ঠেকেছে- তারেক রহমান। 

তারেকের উপস্থিতি প্রাণ ফিরে পাচ্ছে বিএনপি 

তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণার মধ্যদিয়ে নতুন করে উৎসব বয়ে যাচ্ছে নেতাকর্মীর মাঝে। প্রথমত শেখ হাসিনার রক্তচক্ষুর দেখে রাজনীতির মাঠে দীর্ঘদিন কাটানোর পর এরপর শুরু নতুন নতুন শক্তি। অহেতুক নানা তকমায় জর্জরিতও করা হয়েছে বিএনপিকে। অনেকেই ধরে নিচ্ছিলেন, তারেকের অনুপুস্থিতি বিএনপি আওয়ামী লীগের আমলের মতই দুর্বলতম অবস্থানে আটকে রয়েছে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রত্যাবর্তনে বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে যে কিছুটা ব্যালেন্ডসহীন অবস্থায় বিএনপি সেটা মুহূর্তেই কাটিয়ে উঠবে- এবং আগামী নির্বাচন ও রাজনীতির মাঠে বিএনপি একক প্রধান্য বিস্তার করবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন