ছোটবেলায় একটা গান শুনেছিলাম, ‘নামের বড়াই করো নাকো নাম দিয়ে কি হয়/ নামের মাঝে পাবে নাকো আসল পরিচয়।’এই গানটাই অনেকদিন পর মনের মধ্যে নতুন করে বাজছে।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশি গ্রোসারিগুলোকে পাওয়া যায়, ‘পদ্মা ইলিশ’। অন্তত কভারে বড় করে তাই লেখা আছে। আরো লেখা আছে ‘হাওর ব্র্যান্ড’। নিচে লেখা-দেশি মাছের সেরা স্বাদ।
পদ্মা আর হাওর দুটিই বাংলাদেশের অংশ। এ দুটি নাম দেখার পর কারো বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই। আর কিছু খুঁজে দেখার প্রয়োজন হয় না। চোখ বন্ধ করে যে কেউ কিনে নেবেন এই ব্র্যান্ডের মাছ। কিন্তু আসলে কি এটা নিজের দেশের মাছ? এটাতে কি দেশি মাছের সেরা স্বাদ পাওয়া যাবে?
অনুসন্ধিৎসু কেউ যদি একটু খুঁটিয়ে দেখেন, দেখতে পাবেন প্যাকেটের গায়ে অত্যন্ত ছোট করে প্রিন্ট করা আছে একটা মানচিত্র। পাশে লেখা মায়ানমার। অপ্রাসঙ্গিক মায়ানমায়ের মানচিত্র এই প্যাকেটে কেন? সোজা উত্তর, মায়ানমারের মাছই আমরা পদ্মা ইলিশ নামে খাচ্ছি। আইন থেকে বাঁচতেই এই মানচিত্রটা বসানো হয়েছে। ভোজন রসিকরা বলেন, মিয়ানমারের মাছ পদ্মার মাছের নামে খাওয়ানো হচ্ছে, তা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পদ্মার ইলিশের মতো মায়ানমারের ইলিশে গন্ধ নেই। আকারে অনেকটা মিল আছে বটে। তবে মায়ানমারের ইলিশের পিঠ চওড়া হয় না, লম্বাটে হয়। পদ্মার ইলিশ গোলগাল, পেট একটু ভারী হয়।
বই পুস্তক ঘাঁটলে জানা যায়, পৃথিবীর মোট ইলিশের প্রায় ৬০ শতাংশ উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারসহ নানা দেশে ইলিশ উৎপাদিত হয়।
এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ। পদ্মার ইলিশের এই ব্যাপক খ্যাতির কারণ প্রসঙ্গে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ড. আনিসুর রহমান বলেছেন, পদ্মা-মেঘনা অববাহিকায় যে ধরনের খাবার খায় ইলিশ এবং পানির প্রবাহের যে মাত্রা, তার ফলে এর শরীরে উৎপন্ন হওয়া চর্বিই এর স্বাদ অন্য যে কোনো জায়গার ইলিশের চেয়ে ভিন্ন করেছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশের অনেক মাছ যেমন-বোয়াল, আইড়, শিং, মাগুর, টেংরা ইত্যাদি অনেক মজাদার মাছ যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি হয় না। আর এগুলো না খেয়ে আমরা অভ্যস্তই হয়ে গেছি। এমনিভাবে পদ্মার ইলিশ যদি অফিশিয়ালি আমদানি না করা যায়, তাহলে ক্ষতি কি? না হয় আমরা মায়ানমারের ইলিশেই অভ্যস্ত হয়ে যাবো। কিন্তু মায়ানমারের ইলিশ পদ্মার ইলিশ নামে চালিয়ে দেওয়ার এই অপপ্রয়াস কেন? আর যা কি না করছেন আমাদের বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা? এটা কি দেশীয় ভাইদের সঙ্গে একধরনের প্রতারণা নয়?
ইলিশ নিয়ে এতক্ষণ তো কথা শুনিয়েছি। এবার মন ভালো করা একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি-
এক বর্ষার দিনে দরদাম হচ্ছিল চতুর ইলিশওয়ালা আর অফিসের বাবুর মধ্যে।
বাবু: মাছটায় ডিম হবে নাতো??
মাছ বিক্রেতা : হে.. হে.. হে.. কি যে বলেন কর্তা!
একেবারে কুমারী মাছ!
বাবু : নে কাট, ডিম না হলে যা দাম পুরোটাই দেবো!
কিন্তু বিধি বাম, বিক্রেতা মাছ যেই না কেটেছে..
বাবু : তোর মাছে তো ডিম ভর্তি রে..!! তুই যে বললি কুমারী মাছ..!!
মাছওয়ালার মাথা নিচু..
কিছুক্ষণ চুপ থেকে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার মতো ছলছল চোখে বলে উঠলো,
মাফ করে দেন কর্তা,
আপনার বড় মন, আজকাল ঘরের মেয়েদেরই ঠিক রাখা যায় না, এতো গভীর জলের মাছ, যে অন্যায় সে করে ফেলেছে, তার তো আর মাফ নেই, গরম কড়াইতে ফেলে ওকে শাস্তি দেবেন একটা কথাও বলবে না।
এবারের মতো তাকে ক্ষমা ঘেন্না করে ঘরে তুলে নিন কত্তা!
ঘটনা দেখে মধ্যবয়স্ক একজন মহিলার মন্তব্য-
শালারা মাছেও ভার্জিন চায়..!!
ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি গায়েব!
নতুন রোগের আবির্ভাব হয়েছে নিউইয়র্কে। আওয়ামী লীগ অনেক নেতার প্রোফাইলের ছবি রাতারাতি গায়েব হয়ে গেছে ভোজবাজির মতো। ছবির জায়গায় বসানো হয়েছে ফুল, পাখি ইত্যাদি। আর এই প্রোফাইল নিয়ে তারা অন্তর্র্বর্তী সরকারের নানান সমালোচনায় মেতে ওঠেন নিত্যদিন। কিন্তু নামে তারা অনেকেই পরিচিত। নাম পরিবর্তন না করায় অথবা তাদের প্রোফাইল স্ক্রল করে নিচে গেলেই তারা কোন ধর্ম আর গোত্রের (!) তা বেরিয়ে পরে নিমেষেই।
এসব দেখে অনেক রসিকজনের মন্তব্য, কাক যেমন চোখ বন্ধ করে কিছু লুকিয়ে মনে করে আর কেউ দেখতে পায়নি এদের অবস্থা হয়েছে অনেকটা তার মতোই।
আংটিওয়ালা প্রতারক!
নিউইয়র্কে এক নতুন প্রতারকের আবির্ভাব হয়েছে সম্প্রতি। দেখা গেল ঝকঝকে একটি গাড়ি এসে হঠাৎ থামলো আপনার পাশে। সালাম দেবে। তারপর জানালা দিয়ে একটা আংটি বের করে দিয়ে বলবে এটা তোমার। আমি দুবাই থাকি। বেড়াতে এসেছি। আবার চলে যাবো। এটা তুমি নাও। তুমিও মুসলমান আমিও মুসলমান, তাই ভালোবেসে তোমাকে দিলাম। তারপর বলবে আমাকে ২০টা ডলার দাও তো আমার গাড়ির তেল ভরার জন্য। ওয়ালেটটা বাসায় ফেলে এসেছি। তার বাচনভঙ্গি, চেহারা, চকচকে গাড়ি ইত্যাদি দেখে সহজেই সন্দেহ হওয়ার কথা নয়। তা-ও আবার ২০টি ডলারের জন্য। অনেকে তা দিয়েও দেন। সামান্য ২০টি ডলার দিয়ে দুবাইয়ের শেখকে উপকার করে অনেকে আত্মতৃপ্তিও অনুভব করেন। পরে দেখা যায়, আংটিটার দাম ২ ডলারও নয়।
ব্রঙ্কসে এবং ম্যানহাটনে দু’জন বাংলাদেশি একই প্রতারকের শিকার হয়েছেন। এই প্রতিবেদকের সঙ্গেও এই আংটিওয়ালা প্রতারকের দেখা হয়েছে একদিন। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
চায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে চাকরি শেষ!
বিশ্বে প্রতি পাঁচজন মানুষের একজনের সকালটা শুরু হয় চা দিয়ে। আবার গোটা পৃথিবীতে প্রতিদিন কত কাপ চা বানানো হয় জানেন? সারা পৃথিবীতে একদিনেই প্রায় ৩ বিলিয়ন কাপ চা তৈরি হয়। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন চায়ের প্রতি আসক্ত। তবে চা নিয়ে অনেক মজা এবং বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে।
চায়ের কাপে শুধু রীতিনীতি বা সামাজিকতাই জড়িত নয়, বরং রাজনৈতিক নানা কলাকৌশলের উদাহরণরূপেও তুলে ধরা যায় একে। চাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ আসলে যে কথাটি না বললেই নয়, তাহলো আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন। ১৭৭৩ সালে আমেরিকার জনগণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে ফুঁসে ওঠে।
ব্রিটিশ সরকার চায়ের ওপর কর বসালে আমেরিকার বোস্টন শহরের বাসিন্দারা সে সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আর এরই মাধ্যমে ‘বোস্টন টি পার্টি’ গড়ে ওঠে। এ পার্টির সদস্যরা ব্রিটিশ জাহাজে আসা ৩৪২ কনটেইনার চা সাগরে ফেলে দেন। চা-কেন্দ্রিক শুরু হওয়া এই প্রতিবাদ, আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলনের গতিকে আরো বেগবান করে তোলে।
শুধু ভিনদেশিদেরই নয়, বাঙালির অনেক উপাখ্যানের রচয়িতা এই চা। চা শুধু একটি পানীয় নয়, কতশত আবেগমাখা, কত উচ্ছ্বলতা, কর্মব্যস্ত দিন বা একাকীত্বে পার করা অবসন্নতার স্মৃতিবিজড়িত চুমুক। চা সর্বজনীনভাবে থাকে বাঙালির প্রতিটি আড্ডায়, আপ্যায়নে ও আভিজাত্যে।
আবার চা অনেক সময় অনেক অঘটনও ঘটায়! গত সপ্তাহে বাংলাদেশে চায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে চাকরি হ্যারিয়েছেন হাইকোর্টের ১২ বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের চায়ের আমন্ত্রণে ডাক পাওয়া ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই ১২ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। পরবর্তীতে তাদের চাকরি থেকে বাদ যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও রয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।