০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২২:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


জ্বালানিতে ভর্তুকির সামর্থ্য আছে কী?
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২২
জ্বালানিতে ভর্তুকির সামর্থ্য আছে কী?


বাংলাদেশের মিডিয়ায় পরস্পর-বিরোধী সংবাদ দেখে প্রতিনিয়ত বিভ্রান্তি হচ্ছি। কিছুদিন আগে দেখলাম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃতি করে বলা হলো জ্বালানি বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি কমানোর উপদেশ। বিদ্যুত, জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলো গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির আবেদন করলো। বিপিডিবি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিলো বিইআরসির কাছে। অর্থমন্ত্রীর মুখে শুনলাম সরকার থেকে জ্বালানি বিদ্যুত মূল্যবৃদ্ধির কথা বলা হয়নি। ইতিমধ্যে রাশিয়া ইউক্রেণে আক্রমণ করে বিশ্ববাজারে কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মূল্য আকাশের সীমানায় চলে গেলো। 

এই পরিস্থিতিতে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জ্বালানি রিপোর্টার্স ফোরামের অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে জানালেন, গ্যাস- বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বিইআরসি তাদের ম্যান্ডেট অনুযায়ী বিবেচনা করে নির্ধারণ করবে। কিন্তু দাম বাড়াবে কিনা সিদ্ধান্ত নিবে সরকার। তিনি আরো জানালেন, এই মুহূর্তে সরকার মূল্যবৃদ্ধির কথা ভাবছে না। কাকতালীয় বিষয় মন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া জ্বালানি মন্ত্রণালয় জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলাকে নিশ্চিতভাবে নির্দেশ দেয়নি। প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃতি দিয়ে আরো বলা হয়েছে সরকার ভর্তুকি বৃদ্ধি করবে। 

এখন প্রশ্ন হলো- করোনার কারণে সরকারের ব্যয় এমনিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের ঋত বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বাড়ায় সরকারকে খাদ্যপণ্য আমদানির জন্য বাড়তি অর্থের সংস্থান করতে হচ্ছে। এ মুহূর্তে বিশ্ববাজারে আকাশচুম্বী জ্বালানি মূল্য সামাল দিতে সরকারকে অবশ্যই ভর্তুকি বাড়াতে হবে যেহেতু সরকার উত্তরোত্তর আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কিন্তু এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে- কতটুকু বাড়ানোর সামর্থ্য রাখে সরকার? নিশ্চয়তা নেই কতদিন যুদ্ধ চলবে, বা যুদ্ধের ফলে অস্থির হয়ে থাকা বিশ্ববাজারে মূল্য আকাশছোঁয়া থাকবে? 

আরো শুনলাম বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, জাপানে নাকি ১০০% বিদ্যুতের রিজার্ভ মার্জিন। কোথা থেকে পেলেন এই ভুল তথ্য? কোনো উন্নত দেশে ১৫-২০% এর অধিক রিজার্ভ মার্জিন নেই। বাংলাদেশে বিশেষ পরিস্থিতিতে ৩০% মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এটি এখন ৪৪%। যার ফলে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদান করতে হচ্ছে। এমনিতেই পেট্রোবাংলা এবং মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুত উত্পাদনের জন্য ১৪০০ এমএমসিএফডির বিপরীতে ৮৫০-৯০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ দেয়া হয়। এখন প্রায় ৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উত্পাদন করতে হয় তরল জ্বালানি দিয়ে যার অধিকাংশ ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়ার কথা ছিল।  

জানি না, সরকার কীভাবে আসন্ন সেচ মৌসুম, গ্রীষ্ম এবং রোজার মাসের বাড়তি চাহিদা সামাল দিবে। যদি ঠিকঠাক মত না দেয় তাহলে তো কথাই নেই। কিন্তু যদি না পারে? তাহলে কি দেশ আবার ২০০৯-২০১০ পরিস্থিতির দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে এটাই দেখবো? কি হবে শতকরা শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের সরবরাহের আওতায় এনে। যদি তাদের মানসম্মত বিদ্যুত সুলভ মূল্যে সার্বণিকভাবে সরবরাহ করা না-ই যায়? যাই হোক, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরস্পর-বিরোধী কথা না বলাই ভালো। বিশ্ব পরিস্থিতিতে সকল দেশ সংকটে আছে। বাংলাদেশ ওই সংকটের বাইরে যেয়ে কোনো বিশেষ কিছু করতে পারবে না এটাই মেনে নেয়া উচিত।

বাংলাদেশকে নিজেদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, সিস্টেম লসের নামে চুরি, তার মানে অদতাও। বিদ্যুত ব্যবহার সীমিতও করতে হবে, ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট ভালোভাবে করেই আপদ সময় পার করতে হবে। প্রয়োজনে জ্বালানি এবং বিদ্যুত মূল্য সহনীয় পর্যায়ে সমন্বয় করতেই হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ (দ্বাদশ) নির্বাচন সামনে রেখেছে সরকার কি করবে সেটি এখন ভাবনার বিষয়।


শেয়ার করুন