০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:৫৪:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


তামাক টেকসই উন্নয়নে একটি বড় বাধা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২২
তামাক টেকসই উন্নয়নে একটি বড় বাধা তামাক নিয়ন্ত্রণ সভায় নেতৃবৃন্দ


তামাক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে সংশোধনীর মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের কোন বিকল্প নেই। 

গত ২৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স -আত্মা আয়োজিত ‘টেকসই উন্নয়নে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিশেষজ্ঞগণ এই পরামর্শ প্রদান করেন।

ভার্চুয়াল বৈঠকে জানানো হয়, দেশে তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং পঙ্গুত্ববরণ করে আরো কয়েক লক্ষ মানুষ। তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু এবং অসুস্থা এসডিজি’র ৩য় লক্ষ্যমাত্রা- সুস্বাস্থ্য অর্জনের একটি বড় বাধা। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারকারী পরিবারগুলোর মাসিক খরচের ৫ শতাংশ তামাক ব্যবহারে এবং ১০ শতাংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। তামাক ব্যবহারের স্বাস্থ্য ব্যয় ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে তামাক ব্যবহারে দরিদ্র মানুষ, আরও দরিদ্র হয়ে পড়ছে, যা এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা-১ অর্জনে বড় বাধা। তামাক চাষে ব্যবহৃত মোট জমি এবং উৎপাদিত তামাক পাতার পরিমাণ- এই দুই বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে ১৪তম এবং ১২তম। ক্রমবর্ধমান তামাকচাষের কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি (লক্ষ্যমাত্রা-২) ক্রমশঃ হুমকির মুখে পড়ছে। লিঙ্গ সমতা (লক্ষ্যমাত্রা-৫) টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলেও বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার না করেও, পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে বিপুল সংখ্যক নারী। এছাড়াও তামাকচুল্লিতে পাতা পোড়াতে গিয়ে উজাড় হচ্ছে দেশের ৩০ শতাংশ বন। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের (লক্ষ্যমাত্রা ১৩) ঝুঁকি ক্রমশ: বেড়ে চলেছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে দেশে মোট ৭১ বিলিয়ন সিগারেট শলাকা উৎপাদিত হয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ সিগারেটের অবশিষ্টাংশসহ গুল ও জর্দার কৌটা প্রতিবছর জমা হচ্ছে সমুদ্র তলদেশে (লক্ষ্যমাত্রা ১৪)। সুতরাং তামাক চাষ, তামাকজাতপণ্য উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট এর সমাপনী বক্তব্যে তামাককে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর আলোকে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।

অনুষ্ঠানে আলোচকবৃন্দ বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের প্রেক্ষাপটে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া সংশোধনীর বিভিন্ন ধারা ভুলভাবে উপস্থাপন করে জনগণ, নীতিনির্ধারক এবং এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। কোম্পানির অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হয়ে খসড়াটি দ্রুত চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান তারা। 

ভার্চুয়াল বৈঠকে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, “আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আমি ধন্যবাদ জানাই। সংশোধনী প্রস্তাবগুলো যেন শেষ পর্যন্ত বহাল থাকে। কোম্পানিগুলোর লম্বা হাত যেন সেখানে না ঢুকতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি আরো বলেন, “তামাক কোম্পানিতে সরকারের যে মালিকানা আছে সেটা ছেড়ে দিতে হবে এবং যারা নীতিনির্ধারণ করেন তারা যেন রাজস্বের দিকে না তাকিয়ে তামাকের কারণে স্বাস্থ্যখাতে যে ব্যয় হয় সেই দিকটা দেখেন।” প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, “আমাদের তরুণদেরকে বোঝাতে হবে ধূমপান ছেড়ে দিলে তারা ভালো থাকবে। হার্টের অসুখ, ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যাবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও দায়িত্ব রয়েছে। আমি মনে করি ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাইলে আইন শক্তিশালী করার পাশাপাশি এরকম কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।” সিটিএফকে- বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজর মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলোর জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির বিপরীতে কোন যৌক্তিক বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ নেই। তাই তারা আইন সংশোধন ঠেকাতে মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, সরকার রাজস্ব হারানো ইত্যাদি ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে নীতিনির্ধারকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন প্রমুখ। আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল বৈঠকে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান হাসান শাহরিয়ার। অনুষ্ঠানে প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়েরসহ বিভিন্ন তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশ নেন।

শেয়ার করুন