০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৪১:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সমাচার
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোর সমাচার


গত কিছুদিন যাবৎ বাংলাদেশ মিডিয়ায় পেট্রোবাংলার গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বিষয়ে কিছু সংবাদ আমার নজরে এসেছে।  দেশজুড়ে যখন তীব্র গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে শিল্প কারখানাগুলোর পরিচালনা সংকটের মুখে তখন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে আসছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদ এবং তিতাস গ্যাস সঞ্চালন এবং বিতরণ কোম্পানির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুন রশিদের বিরুদ্ধে কথিত মহাদুর্নীতির অভিযোগ। মাজেদের বিরুদ্ধে অভিযোগসমূহ পেট্রোবাংলার দুটি কমিটির অনুসদ্ধানে প্রমাণিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আরো একটি কমিটির মাধ্যমে ফরমায়েশি দণ্ড করে তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগ সংবাদপত্রের বরাতে জানা গেছে। সম্প্রতি দেখলাম, তিতাস গ্যাসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে তদন্তের খবর। পেট্রোবাংলার গ্যাস সেক্টরের তিন দশকের প্রাক্তন পেশাদার হিসেবে বিষয়গুলো আমাকে ক্ষুব্ধ, আহত এবং হতাশ করে। তবে একই সঙ্গে বার্ষিক কর্ম সম্পাদনে বাখরাবাদ গ্যাস, জিটিসিএলের সাফল্য আমাকে উৎফুল্ল করে। 

২০০৯-২০২৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায়।  এই সময়ে বিদ্যুৎ সেক্টরে অন্তত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন এবং দেশব্যাপী এই উন্নয়নের কারণে অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান দৃশ্যমান।  কিন্তু একই সঙ্গে জ্বালানি ক্ষেত্রে জ্বালানি মন্ত্রণালয় তথা, পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে সাফল্য ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ।  অথচ এই ব্যার্থতার সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নিয়ন্ত্রণাধীন জ্বালানি মন্ত্রণালয় দীর্ঘ দেড় দশকে কোনো দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করেনি। গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে কাজ হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল, আবিষ্কৃত কয়লাক্ষেত্রসমূহ উন্নয়ন জুজুর ভয়ে আটকে আছে শূন্যতায়। প্রয়োজনীয় এবং গ্যাস উৎপাদন না বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় গ্যাস সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে বিপুল বিনিয়োগ করে জিটিসিএলকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করা হয়েছে। একই সঙ্গে গ্যাস বিতরণ এবং বিপণনে ব্যাপক দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বানানো হয়েছে। অথচ পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিসমূহের পরিচালকম-লী মূলত সরকারি আমলানির্ভর। জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরামর্শক আছেন, আরো আছেন একজন নির্ভীক সাংসদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে। গ্যাস বিতরণ কোম্পানিসমূহে ব্যাপক দুর্নীতির দায়দায়িত্ব কি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের ওপর বর্তায় না?

মিডিয়া থেকেই দেখেছি, এই সরকারের সময়কালে কর্ণফুলী গ্যাসে একজন কথিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যাবহার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছিল। তাকে আইনের আওতায় না এনে বরং পেট্রোবাংলার পরিচালক করে সেক্টরের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলা হয়। তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বার বার প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে সুপারিশ করা হলেও প্রধানমন্ত্রী নানাভাবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান করে পাকিস্তানের পতিত সেনাশাসকের নামে নাম দুর্নীতিবাজের চাকরিকাল মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব বাতিল করে দেন। অভিযোগ আছে, উক্ত ব্যক্তি বিপুল কালো টাকা বিনিয়োগ করে দুর্নীতি দমন সংস্থা থেকে সব অভিযোগ থেকে পরিত্রাণ নিয়েছেন। নিজে চাকরিতে থাকা অবস্থায় উক্ত ব্যক্তি পেট্রোবাংলার কোম্পানিসমূহে তার মতোই দুর্নীতিবাজদের পদায়ন করে গেছে। যাদেরই একজন ছিল কর্ণফুলী গ্যাসের অভিযুক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদ। কর্ণফুলী গ্যাসের কুকীর্তিসমূহ দুর্নীতি দমন কমিশনের একসময়ের সাহসী কর্মকর্তা শরীফের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছিল। এখনো সেসব দুর্নীতির প্রমাণ বিদ্যমান। 

আমি তিতাস গ্যাসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ বিষয়ে হতাশ। একজন বুয়েট প্রকৌশলী হয়ে তিনি যদি এহেন জঘন্য কাজে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন, সেটি হবে চরম হতাশাজনক। তবে তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটি যথাযথ অনুসন্ধান করলে তিতাস পরিচালকম-লীর গাফলতিকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

গ্যাস এখন অনেক মূল্যবান। এই সংকট মুহূর্তে গ্যাস চুরি, অবৈধ সংযোগ রীতিমতো পাপ। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী জ্বালানি সেক্টরকে কলুষমুক্ত করতে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করবেন।

শেয়ার করুন