বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাড়ছে রিজার্ভ। কিন্তু এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা নিজ মাতৃভূমিসহ বিভিন্ন দেশে নানা সমস্যায় জর্জরিত। তাদের এসব সমস্যা সমাধানে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করেছে প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরাম। দাবি সংবলিত একটি স্মারকলিপি নিউইয়র্ক সফররত বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের হাতে তুলে দেওয়া হয় গত ২৭ জুন ম্যানহাটনের মিলিনিয়াম হোটেলে।
প্রবাসীদের পক্ষে স্মারকলিপিটি তুলে দেন প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরামের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল আলম এবং ডা. নার্গিস রহমান ও শামীম আহমেদ।
এর আগেও কয়েকবার এ দাবিগুলো সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে তুলে ধরেছিলেন ফখরুল আলম। এবার তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবিগুলো তুলে ধরেন।
দাবির মধ্যে রয়েছে : ১. নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট চালু। ২. নিউইয়র্কসহ-সারা বিশ্বের বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) চালু করা, যা ব্রিটেনে চালু রয়েছে। ৩. বাংলাদেশ কনস্যুলেট ও দূতাবাসের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ৪. দেশের ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রবাসীদের রক্ষা করা। বিশেষ করে চুক্তি মোতাবেক ক্রয় করা জমি, প্লট, অ্যাপার্টমেন্ট সহজে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীর কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। ৫. ঢাকাস্থ শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা। ৬. দ্বৈত নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে হয়রানি বন্ধ করা। ৭. বাংলাদেশের অফিস-আদালতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য বন্ধ করা। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য ঢাকায় চালু করা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। ৮. প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সের অর্থে গড়ে ওঠা অর্থনীতির লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার বন্ধসহ পাচারকারীদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। ৯. জন্মভূমি সফরকালে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। ১০. বাংলাদেশে প্রবাসীদের ঘরবাড়ি ও স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রক্ষার ব্যবস্থা করা। ১১. কনস্যুলেট সেবা বৃদ্ধি করে প্রবাসীদের পাসপোর্ট নবায়ন, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, দেশের সম্পত্তি হস্তান্তরে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদানের মতো কাজগুলো সহজ করা। ১২. যে কোনো প্রবাসীর মরদেহ বিনা খরচে দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা। এর আগে দাবিগুলো উত্থাপন করে ফখরুল আলম বলেছিলেন, প্রিয় জন্মভূমি ত্যাগ আসলে একটা রক্তক্ষরণের মতো বিষয়। প্রবাসীরা সেই তীব্র ব্যথাকে উপেক্ষা করে প্রবাস জীবনযাপন করার পাশাপাশি নানাভাবে নিজ নিজ পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসীরা আজ দেশে-প্রবাসে নানা সমস্যায় জড়িত। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আবার বিদেশে পাচার হয়ে আসছে। অথচ তার কোনো প্রতিকার বা বিচার নেই। তিনি আরো বলেন, ভূমিদস্যুরা প্রবাসীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করছেন। প্রবাসীদের অর্থ নিয়ে জায়গা-জমি, ভূমি, অ্যাপার্টমেন্ট, প্লট বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। আত্মীয়স্বজন ও প্রবাসী ভাইবোনের সম্পত্তি গ্রাস করে নিচ্ছে। নিজেদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সময় এসেছে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার।