৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৬:১০:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


২০২৪-এ ভারতের নির্বাচন সমীক্ষা
কলকাতা থেকে সুপর্ণা চক্রবর্তী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৪
২০২৪-এ ভারতের নির্বাচন সমীক্ষা নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী


নির্বাচন জনগণের অধিকার। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন জনগণের লক্ষ্য। তাই তো ভারতের আকাশে বাতাসে খবরে এখন একটাই শব্দ- ভোট। দেশ সেজে উঠেছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য। সেই সময় আগত। ১৯ এপ্রিল ২০২৪-এ শুরু হচ্ছে ভারতের প্রথম দফা লোকসভার নির্বাচন। চলবে পয়লা জুন পর্যন্ত। ৭ দফা নির্বাচন। ১৩ জুনের মধ্যে গঠিত হবে কেন্দ্রে নতুন সরকার । 

চিনের পরই দ্বিতীয় গণতান্তিক দেশ হিসেবে ভারতের স্থান। ১৪০ কোটির কাছাকাছি মানুষের বসবাস এখানে। বিভিন্ন ধর্ম ও ভাষার সমাহার এই দেশে। তাই ভারতীয় নির্বাচন বরাবরই বিশ্ব দরবারে জনপ্রিয় ও সমাদৃত। আলোচিত এ বছর নির্বাচনের রূপ পুরোপুরি ভিন্ন। বর্তমানে সমগ্র ভারতে ৬টি জাতীয় দল, ৫৭ রাজ্য দল এবং ২৫৯৭টি অঘোষিত দল রয়েছে। তবুও ২০২৪-এর নির্বাচন আটকে গেছে তিনটি প্রধান দলের মধ্যে বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস। বাকি দলগুলো নিজেদের অস্থিত্ব ঠিকেয়ে রাখার খেলায় মত্ত। বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) তারা স্বমহিমায় এগিয়ে চলছে তৃতীয় বার সরকার গঠনের আশায়। কংগ্রেসও বসে নেই। বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেস সেজে উঠেছে তাদের নিজস্ব কায়দায়। তবুও এবারের লোকসভা নির্বাচন ২০১৮ বা তার আগের নির্বাচনগুলির থেকে অনেক কঠিন। ভিন্ন ধারায় ভিন্নভাবে প্রভাবিত হবে।

এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রের (বিজেপি সরকার) কাছে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তিনটি বিষয়-মূল্যবৃ্দ্ধি, বেকারত্ব ও উন্নয়ন। যদিও বিজেপি সরকারের দাবি গত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা অতুলনীয়, আকর্ষণীয়। ২৫ কোটি দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষকে দরিদ্রতা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে নরেন্দ্র মোদি ( বিজেপি) সরকার। কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন দুর্নীতি দমনে। যুবসমাজে হাতে তুলে দিয়েছেন কর্মসংস্থানের বিভিন্ন দিক। মহিলাদের করেছেন ক্ষমতায়ন। বিরোধীদের দাবি-এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা। ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ জনগণ মনে করছেন গত পাঁচ বছরে দুর্নীতি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ।

দ্য সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব ডেভেলাপিং সোসাইটিস (সিএসডিএস)-এর সমীক্ষকরা তাদের প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা থেকে বলছেন, এবারের লোকসভা ভোটে মোদি সরকারের প্রধান মাথাব্যথার কারণই হলো বেকারত্ব এবং মূল্যবৃদ্ধি। গত পাঁচ বছরে যুবসমাজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় অন্ধকারে তলিয়ে গেছে প্রায়। সরকারি চকরি এখন আকাশ-কুসুম কল্পনা। সরকার থেকে ২ লাখ চাকরি পদ ঘোষণা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এখন পর্যন্ত ২ হাজার চাকরিও দিয়ে উঠতে পারেনি মোদি সরকার। প্রাইভেট সেক্টরেও মিলছে না অথবা ১০ বছরের অ্যাগ্রিমেন্টে অস্থায়ী চাকরি। ২০১৮-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় এই বেকারত্বের সংখ্যা ছিল ৫-৫ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২৪ এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮-৯ শতাংশ, যা প্রায় ৩-৪ শতাংশ বেশি। সিএসডিএসের সমীক্ষকদের বক্তব্য ৮৩ শতাংশ যুব সম্প্রদায়ের কাছে ‘চাকরি’ ভীষণ জটিলতার সৃষ্টি করছে। আবার ১২ শতাংশ যুব সম্প্রদায়ের বক্তব্য তারা খুব সহজেই চাকরি পেয়ে গেছেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নের দিকটা আবার আলাদাভাবে আলোকপাত করেছেন সমীক্ষকরা। গত পাঁচ বছরে যেভাবে মহিলারা নিগৃহীত হচ্ছে তা সমগ্র দেশের লজ্জা। গত ৫ বছরে মানুষের নৈমিত্তিক ব্যবহৃত জিনিসপত্রের যে হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে, তাতে সবার নাভিশ্বাসের জোগাড়। ভাতের চাল থেকে রান্নার গ্যাস সবেতেই গুনতে হচ্ছে কর। কংগ্রেস সরকারের সময় নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও তা ছিল নাগালের মধ্যে। অর্থাৎ অল্প বিস্তর দাম বাড়িয়ে বাকিটা সরকারের থেকে ভর্তুকি দিতো। কিন্তু মোদি সরকার সেটা বন্ধ করে বসিয়ে দিলো জিএসটি (গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স)-তা সে পাঁচ রুপি দিয়ে একটা কলাই কিনুন বা আড়াই রুপি দিয়ে একটা ডিম গুনতে হবে জিএসটি। সমীক্ষকরা মূল্যবৃদ্ধি জনগণের কাছে প্রশ্ন করলে ৮০-৯০ শতাংশ মানুষের বক্তব্য ‘হ্যাঁ’। কিছু মানুষের বক্তব্য মূল্য হ্রাস হয়েছে। সাধারণ জনগণ বিজেপি সরকারকে নাম দিয়েছে ‘বড় লোকের সরকার’।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থান করুণ হলেও ভালো অবস্থানে নেই তৃণমূল (টিএমসি) সরকারও। একের পর এক প্রথম সারির মন্ত্রীদের গ্রেফতারি প্রমাণ করে দিয়েছে দুর্নীতি তৃণমূলের শিরায় শিরায়। শিক্ষা থেকে রেশন সবেতেই মুক্ত মন্ত্রীবর্গ এবং তাদের ডান-বাম হাত। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে না হয়েছে কোনো শিল্পের উন্নয়ন, না নিয়োগ, না সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি। দুর্নীতি, উন্নয়ন, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি সবদিক দিয়ে তৃণমূল সরকারের পশ্চিমবঙ্গবাসীকে আশার আলো দেখাতে না পারলেও আশাহত অতি অবশ্যই করতে পেরেছে। সেই তুলনায় বিজেপি সরকার কিছুটা হলেও সক্ষম।

তৃণমূল বা বিজেপি থেকে কংগ্রেস সরকারের সময়ে জনগণের জীবনযাত্রা ছিল স্বাচ্ছন্দ্য, নিরাপদ, কিন্তু বর্তমানে কংগ্রেস নিজেই ডুবে আছে নিরাপত্তাহীনতার বেড়াজালে। তার প্রধান কারণ নেতৃত্বের অভাব। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমানে কংগ্রেসের অস্তিত্ব ভীষণই নরম। এবার লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে আসতে পারে ২৫-২৭টি আসন। তৃণমূলের দখলে ১৫-১৭টি আসন, কংগ্রেসের দখলে ১-২টি আসন, সমীক্ষা অনুযায়ী। দোষগুণ সবার মধ্যেই থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো তার ব্যতিক্রম নয়। মোদি সরকারের ভুলত্রুটি অনেক। কিন্তু তারপরও নরেন্দ্র মোদি জনগণের কল্যাণার্থে এমন কিছু জনহিতকর কাজ করেছেন বা এমন কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন যা সত্যি অতুলনীয়। সেই কারণে জনগণ বিজেপি বিপক্ষে গিয়েও যেতে পারেনি। সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সেই তুলনায় বিরোধীদলগুলো ব্যর্থ।

ভোট মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেই অধিকারকে কায়েম রাখার জন্য নির্বাচনের মাধ্যমে নিতে হবে একটি দলকে। জনগণের প্রশ্ন সব দলই তো ভক্ষক, রক্ষক কে? সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। সব দলই কমবেশি এগিয়ে পিছিয়ে। এখন শুধু এটা দেখার- কোন দল হাসবে জয়ের হাসি?

শেয়ার করুন