০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৩০:৫৯ পূর্বাহ্ন


হাসিনা সরকারের পতন : পালিয়েছেন ১০০ মন্ত্রী-এমপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৮-২০২৪
হাসিনা সরকারের পতন : পালিয়েছেন ১০০ মন্ত্রী-এমপি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পালিয়ে যাওয়া তার কয়েকজন মন্ত্রী


শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তার মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়েছে। কেউ দেশ ছাড়ছেন একা, কেউ আবার সপরিবারে। অনেকে ভয়ে দেশের অভ্যন্তরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। শুধু মন্ত্রী-এমপি বা প্রভাবশালীই নয়, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শীর্ষনেতারাও ভয়ে আত্মগোপনে গেছেন।

এ তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় গত ১৪ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ২৭ দিনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রায় ১০০ জন সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও রাজনৈতিক নেতা। এছাড়া বিমানবন্দরে আটক করা হয়েছে অন্তত ১০ জন মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীদের। বিমানবন্দরে এসেও পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ফিরে গেছেন কমপক্ষে ২৫ জন মন্ত্রী-এমপি, রাজনৈতিক নেতা ও দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা। শাহজালাল বিমানবন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে সরকার পতনের একদিন পর থেকে ৬ আগস্ট শাহজালালসহ দেশের সব বিমানবন্দরে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সব ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট একাধিক তালিকা পাঠানো হয়। এ তালিকায় হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও জেলা কমিটির নেতাদের নামও রয়েছে।

এছাড়া হাসিনা সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, জাতীয় সংসদের এমপি, সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতি এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা দলবাজ কর্মকর্তাদের নামও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছে।

হাসিনা সরকারের পতনের পর ৬ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালানোর সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হন সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। কিন্তু ওইদিন দেশ ছাড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। ইমিগ্রেশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান ৬ আগস্ট সোমবার দুপুরে। তার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষনেতা, আইনপ্রণেতা ও মন্ত্রী।

৫ আগস্ট রোববার রাতেই সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দেশ ছাড়েন বলে জানা গেছে। তিনি সদ্য সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। রোববার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ হাসিনার আত্মীয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

আন্দোলনের শুরু থেকেই নানা তৎপরতায় ব্যস্ত ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। সোমবার সকাল থেকে তাকে দেখা যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। তিনিও দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসভবন সোমবার ভাঙচুর করা হয়। তবে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, জানা যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

সোমবার সারাদিন রাজধানীর বনানীর বাসায় অবস্থান করলেও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এদিন রাতে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে। তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাতের ফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৪ জুলাই ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইনসে দেশ ছাড়েন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ নজরুল ইসলাম বাবু। ওইদিন বেলা ২টায় থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ ফ্লাইটে ব্যাংকক যান কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. কামরুল আরেফিন। একই বিমানে ব্যাংকক যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ মালেক।

পরের দিন ১৫ জুলাই রাত ১২টা ১৭ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের এসকিউ-৪৪৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন। একই ফ্লাইটে আরো পালান দিনাজপুর-৬ আসনের শিবলী সাদিক, টাঙ্গাইল-৫ আসনের মো. সানোয়ার হোসাইন ও নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল।

এদিন সকাল ৭টা ৩৯ মিনিটে বিমান বাংলাদেশের বিজি-৩৯১ ফ্লাইটে কলকাতা পাড়ি জমান ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান মোল্লা সজল।

এছাড়া ১৬ জুলাই বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসে (ইকে-৫৮৩) দুবাই চলে যান সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি মুজিবুল হক। ওইদিন বেলা ১২টা ৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বিজি-৩০৮ ফ্লাইটে ম্যানচেস্টারের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা।

বেলা ১১টা ২৬ মিনিটে বিমানের বিজি-৩১৫ ফ্লাইটে মালয়েশিয়া যান সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী। ওইদিন দুপুর আড়াইটায় দেশ ছাড়েন নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলম, ১৭ জুলাই রাত আড়াইটায় ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইনসে (সিএক্স-৬৬২) হংকং যান ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য ফায়জুর রহমান।

একই তারিখ রাত ১১টা ৫০ মিনিটে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসে (সিজেড-৩৯১) চীনের গুয়াংজুর উদ্দেশে দেশ ছাড়েন কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মোহাম্মদ শফিউদ্দিন। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে (এসকিউ-৪৪৭) সিঙ্গাপুর পালান ময়মনসিংহ-৮ আসনের মাহমুদুল হাসান সুমন।

১৮ জুলাই সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৫৮৪ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরে যান সাতক্ষীরা-৩ আসনের এমপি ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ এফ এম রুহুল হক।

বিসিবির প্রেসিডেন্ট, ক্রীড়ামন্ত্রী ও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের এমপি নাজমুল হাসান পাপন গত ২০ জুলাই বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে শ্রীলংকান এয়ারলাইনসে (ইএল-১৯০) দেশ ছাড়েন।

২১ আগস্ট রাত ১১টা ৪০ মিনিটে দেশ ছাড়েন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের এমপি সৈয়দ এ কে এম একরামুজ্জামন, ২২ আগস্ট বিজি ৫৮৪ যোগে সিঙ্গাপুর যান নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলম, ২৫ জুলাই বেলা ১২টা ১০ মিনিটে ব্যাংককের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন কুমিল্লা-৫ আসনের এমপি এ এম তাহের। ওইদিন দুপুর ১টা ৫৫ মিনিটে ব্যাংককে যান ময়মনসিংহ-৭ আসনের এ বি এম আনিসুজ্জামান। বিকাল ৬টা ১০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসে করে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন সংরক্ষিত নারী আসনের নীলুফার আনজুম। সন্ধ্যা ৭টা ৪৮ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসে করে কানাডা পালান অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশা খান। ২৬ জুলাই ভোর ৫টা ২০ মিনিটে কাতার এয়ারলাইনসে (কিউআর-৬৪৩) গ্রিসে পালান কুমিল্লা-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ।

সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ২৭ জুলাই সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসে ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাইয়ের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। ৩ আগস্ট দেশ ছাড়েন ঢাকা-৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা। ৪ আগস্ট এমিরেটস এয়ারলাইনস ইকে ৫৮৫ যোগে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে সাবেক এমপি নুর ই হাসনা চৌধুরী লিলির পরিবারের একজন সদস্য দুবাই যান। একইদিন সাবেক এমপি মোহাম্মদ হাবিব হাসানের মেয়ে বিজি ৫৮৪ যোগে দেশ ছাড়েন।

৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর স্ত্রী, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের মেয়ে ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ।

আলোচিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চৌধুরী ২৮ জুলাই ২টায় এমিরেটস এয়ারে (ইকে-৫৮৫) নেদারল্যান্ডসে যান। তিনি আবার ৩ আগস্ট ফেরত আসেন। ৬ আগস্ট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় তাকে আটক করা হয় বলে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। ২৮ জুলাই রাত সাড়ে ১০টায় ইউএস-বাংলার বিএস-৩০৭ ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর যান কুমিল্লা-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম।

২৯ জুলাই বেলা ১১টা ১০ মিনিটে এমিরেটসে (ইকে-৫৮৩) তেহরান যান সাবেক বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। ওইদিন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে নভোএয়ারে কলকাতা যান যশোর-৩ আসনের কাজী নাবিল আহমেদ। একই দিন বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে বিমানের বিজি-৩৩৭ ফ্লাইটে মদিনা যান বরগুনা-৫ আসনের মো. মজিবুর রহমান মজনু।

৩০ জুলাই ২টা ৪০ মিনিটে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে (এমএইচ-১৯৭) ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহাজাদা। ৩১ জুলাই বেলা ২টায় এমিরেটস এয়ারলাইনসে (ইকে-৫৮৫) নিউইয়র্ক যান ঢাকা-১৮ আসনের খসরু চৌধুরী।

এদিন দুপুর ১টা ১৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৩৯৭ ফ্লাইটে দিল্লি পাড়ি দেন শরীয়তপুর-৩ আসনের নাহিম রাজ্জাক। একই দিন রাত ১১টা ২০ মিনিটে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসে (সিএস-৩৯২) চীনের গুয়াংজু যান কুমিল্লা-৮ আসনের আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন।

২ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা ২৩ মিনিটে টার্কিশ এয়ারের টিকে-৭১৩ ফ্লাইটে ইস্তাম্বুল যান ঝিনাইদহ-২ আসনের নাসের শাহরিয়ার জাহিদী। এদিন রাত ১০টা ৫০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসে (বিএস-৩০৭ ফ্লাইটে) সিঙ্গাপুর যান সংরক্ষিত মহিলা আসনের পারুল আক্তার।

একই দিনে সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানে (বিজি-৫৮৪) সিঙ্গাপুর যান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। ৪ আগস্ট বেলা ১২টায় বাংলাদেশ বিমানে (বিজি-৩৯৭) ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সচিব নেত্রকোনা-৪ আসনের সাজ্জাদুল হাসান।

৫ আগস্ট রাত ১২টায় সিঙ্গাপুর এয়ারে (এসকিউ-৪৪৭) সিঙ্গাপুর গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। একই দিন রাত ২টা ৩৫ মিনিটে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে (এমএইচ-১৯৭) মালয়েশিয়া যান সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। এদের মধ্যে কয়েকজন দেশে ফিরে আসার কথা থাকলেও জানা গেছে সরকার পতনের পর তাদের অনেকে আর ফিরে আসেননি।

এছাড়া দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতা ও এমপি-মন্ত্রীদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনোভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, এদের অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দেশ ত্যাগ করেছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাদের মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যে দেশ ছেড়েছেন বলেও জানা গেছে।

৬ আগস্ট বিকালে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজ মাহমুদকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক করা হয়।

দেশ ছেড়ে পালানোর পাশাপাশি আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশির ভাগ প্রভাবশালী নেতা এবং এমপি-মন্ত্রীরা। অনেকেই চেষ্টাও করছেন দেশ ত্যাগের। দলের সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গা-ঢাকা দিয়েছেন। সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। হামলা-মামলার ভয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।

সর্বশেষ ৪ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশেই মাঠে ছিল আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দেশে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও করেছিলেন তারা। সোমবার সকাল থেকে পালটে যায় দৃশ্যপট। ক্ষমতা থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দিন সকাল থেকে দলটির নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। শুধু তাই নয়, দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়, তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলার কার্যালয় ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেও দলের কাউকে তা প্রতিরোধ করতে দেখা যায়নি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার পর্যন্ত শতাধিক মন্ত্রী, এমপি ও নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তারা ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। অনেকেই নিজে যেতে না পারলেও পাঠিয়ে দিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের।

সূত্রে জানা গেছে, এখনো দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-মন্ত্রী। চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ আসনের সাবেক এমপি মাহফুজুর রহমান মিতা সপরিবারে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া পালানোর জন্য শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গিয়েও ছাত্র-জনতার দৌড়ানি খেয়ে ফিরে আসেন। দ্বিতীয় দফা কলকাতা যাওয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।

এদিকে দলীয় প্রধান, দলের শীর্ষনেতা এবং এমপি-মন্ত্রীদের দেশ ছাড়া ও আত্মগোপনের বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

তারা বলছেন, যারা দলের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন, সবাই কর্মীদের বিপদের মুখে রেখে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ কর্মীরা এখন হামলার শিকার হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মারপিট করা হচ্ছে। অনেকে হামলা-মামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা জানেন না এমন অবস্থায় কী করতে হবে? একই সঙ্গে এ সংকটে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তারা।

শেয়ার করুন