০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:২২:৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


নিউ ইয়র্কের লালন উৎসবে মানুষের ঢল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৪
নিউ ইয়র্কের লালন উৎসবে মানুষের ঢল অনুষ্ঠানে সুধীর একাংশ


গত ২৬ অক্টোবর শনিবার জ্যামাইকার ম্যারি লুইস একাডেমিতে দ্বিতীয় বারের মতো আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসবের আয়োজন করে লালন পরিষদ ইউএসএ। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দুপুর ২ টা থেকে শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। এবারের উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, লন্ডন, ক্যানাডা ও অ্যামেরিকার বিভিন্ন স্টেইট থেকে প্রায় ২০০ শিল্পী ও কলা কুশলী অংশ নেন।

দুপুরে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন কিংবদন্তি শিল্পী নীনা হামিদ। এসময় তাঁর পাশে ছিলেন একাত্তরের কন্ঠ যোদ্ধা রথীন্দ্রনাথ রায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নূরুন নবী, ড. সিদ্দিকুর রহমান. ডা: মাসুদুল হাসান. রাশেদ আহমেদ, মিনহাজ আহমেদ জাবেদ. কমরেড জাকির হোসেন. উৎসবের প্রধান উপদেষ্টা নুরুন আমিন বাবু, লালন উৎসবের আহবায়ক আব্দুল হামিদ, গোপাল সান্যাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, মিডিয়া সমন্বয়ক পিনাকী তালুকদারসহ আয়োজকরা। উদ্ধোধনী বক্তব্যে প্রবীন শিল্পী নীনা হামিদ বলেন, প্রবাসে বাংলা সংস্কৃতির এই নান্দনিক বিকাশ দেখে ভীষণ ভালো লাগছে। আয়োজকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরো বলেন, নতুন প্রজন্মকে আরো বেশি করে আমাদের বাংলা সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

এবারের উৎসবমুখর ও নান্দনিক এই অনুষ্টানে নতুন প্রজন্মের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। উৎসবে বাংলাদেশ থেকে আসা লালন কন্যা খ্যাত লায়লা, নৃত্য শিল্পী মন্দিরা চক্রবর্তী, নিউ ইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, শাহ মাহবুব, আলভিন, মাইশা জেরিন ও সাগনিক মজুমদারদের পরিবেশনা দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। উৎসবে ওয়াশিংটন ডিসি থেকে যোগ দেন দিনার মনি। লন্ডন থেকে আসা অদিতি রায়ের বিশেষ আলেখ্য হু এম আই, দর্শকরা প্রাণভরে উপভোগ করেন। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো রোড আইল্যান্ড থেকে যোগ দেয়া মহিতোষ তালুকদার তাপস ও তার দলের বিশেষ পরিবেশনা। নিউজার্সির চন্দ্রা ব্যানার্জির দলের দলীয় নৃত্য পরিবেশনা উৎসবটিকে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়। আন্তর্জাতিক মানের এই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাদিয়া খন্দকার, স্বাধীন মজুমদার ও সেঁজুতি তালুকদার। এবারের লালন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক নিউ ইয়র্কের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার। ওয়াহিদুজ্জামান লিটন. এস্টোরিয়া হোম কেযার। মহামানব লালন কোনো জাতিভেদ মানতেন না। তাই তিনি গেয়েছেন, 'সব লোকে কয় লালন কি, জাত সংসারে/ লালন কয় জাতির কি রূপ দেখলাম না এ নজরে।' এরূপ সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধিমুক্ত এক সর্বজনীন ভাবরসে সিক্ত বলে লালনের গান বাংলার হিন্দু- মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নিকট সমান জনপ্রিয়। তাঁর 'খাঁচার ভিতর অচিন পাখি, বাড়ির কাছে আরশী নগর, আমার ঘরখানায় কে বিরাজ করে- ইত্যাদি গান বাউল তত্ত্বাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। লালনের গান এক সময় এতই জনপ্রিয় ছিল যে, তা সাধারণ মানুষ ও নৌকার মাঝি-মাল্লাদের মুখে মুখে শুনা যেত। এমনকি বর্তমানেও সকল মহলে এ গানের কদর বাড়ছে। লালন ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামে পরিচিত। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক ফকির সাধক, মানবতাবাদী, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। লালনকে বাউল গানের অগ্রদূতদের অন্যতম একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয় এবং তার গান উনিশ শতকে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

লালন ছিলেন একজন মানবতাবাদী সাধক। যিনি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রসহ সব প্রকার জাতিগত বিভেদ থেকে সরে এসে মানবতাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছিলেন। অসাম্প্রদায়িক এই থেকেই তিনি তার গান রচনা করেছেন। লালন শাহ এমন একজন মানুষ যিনি সংগীতের মাধ্যমে সারাবিশ্বে প্রচার করে গেছেন মানবধর্ম। দুই বছর পর আবারও ইতিহাসের স্মরণীয় এই অনুষ্ঠান ঢাকা ও কলকাতার বাইরে সবচেয়ে বড় আয়োজনে আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব। দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব কমিটিতে আছেন, প্রধান উপদেষ্টা নুরুল আমিন বাবু, আহবায়ক মো: আবদুল হামিদ, সমন্বয়কারী গোপাল সান্যাল, স্বীকৃতি বড়ুয়া, সুখেন জোসেফ গমেজ ও হাসানুজ্জামান সাকী, শিল্প নির্দেশনা জাহেদ শরীফ, মিডিয়া সমন্বয়ক পিনাকী তালুকদার, অনুষ্ঠান সহযোগী: শুভ রায় ও সাহানা ভট্টাচার্য। উৎসবের বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন উষ্ণীষ কিশোর চক্রবর্তী।

শেয়ার করুন