০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫০:৩১ পূর্বাহ্ন


সব ঠিক থাকলে ২৯ ডিসেম্বর রওয়ানা
প্রথমে ছেলের কাছে যাবেন, পরে উন্নত চিকিৎসা নেবেন খালেদা জিয়া
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১২-২০২৪
প্রথমে ছেলের কাছে যাবেন, পরে উন্নত চিকিৎসা নেবেন খালেদা জিয়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান


আবারও এক নতুন তারিখ স্থির হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য। এবার ২৯ ডিসেম্বর তার রওয়ানা হওয়ার কথা। ঢাকা থেকে তিনি লন্ডনে যাবেন প্রথমত। সেখান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে যাবেন তিনি, সেটা আমেরিকা বা জার্মানিও হতে পারে। মূলত খালেদা জিয়ার মালটিডিসিপ্লিনারি চিকিৎসা প্রয়োজন। সেটা ওই দুই দেশ বা তৃতীয় যেখানে ভালো হবে সে স্থানেই তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। তবে প্রথম যাবেন তিনি লন্ডনে। সেখান রয়েছে তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবারবর্গ। পরের সিদ্ধান্ত সেখান থেকে হওয়ার সম্ভাবনা।

ওদিকে দীর্ঘদিন ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গেও খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার রোষানলে লন্ডনে নির্বাসনে কাটাতে হয়েছে তারেক রহমানকে। যেতে দেওয়া হয়নি খালেদা জিয়াকেও। প্রচণ্ড অসুস্থ হয়েছেন খালেদা জিয়া হাসপাতাল ও বাসায় আসা-যাওয়া করেছেন, আইসিইউ, সিসিইউতে পর্যন্ত ক্রিটিক্যাল সময় অতিক্রান্ত করতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। কিন্তু করুণ সব ওই মুহূর্তেও ছেলে তার কাছে উপস্থিত হতে পারেননি। জিয়া পরিবারের কঠিন সব সময় অতিক্রান্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলের এ বছরগুলোতে। বিশেষ করে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে এক কাপড়ে অনেকটা টেনেহিঁচড়ে বেড় করে দেওয়ার পর থেকে। এরপর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু। ফলে দীর্ঘ ওই সময়ের পর মা ও ছেলে অপেক্ষায় সাক্ষাতের। 

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব ভালো না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বহুবার তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার আবেদন করে তার পরিবার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ পর্যন্ত করেছে, অনুমতি নিয়ে করেছে টালবাহানা, হাসি তামাশা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতনের পর তার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রসঙ্গ উঠলেও দেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে নানা জটিলতায় তিনি বাইরে যাওয়াটা সমীচীন মনে করেননি বা তার চিকিৎসার জন্য বোর্ড তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়াটা যথার্থ মনে করেনি। 

তবে এসব জটিলতা এখন দূর হয়েছে। ফলে শারীরিকভাবে নতুন কোনো সমস্যা উদয় না হলে আগামী ২৯ ডিসেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সঙ্গে যাচ্ছেন তার ব্যক্তিগত ও মেডিক্যাল বোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ চিকিৎসক।

এ ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৯ ডিসেম্বর যাবেন। ম্যাডামের সঙ্গে তার চার-পাঁচজন চিকিৎসক যাবেন। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সবশেষ পরিস্থিতি বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।’

সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। যদিও তিনি দীর্ঘদিন পর জনসম্মুখে গিয়েছেন, সেনাকুঞ্জের এক অনুষ্ঠানে। সেখানে তার সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যসব উপদেষ্টামণ্ডলী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান অফিসারসহ বিভিন্ন মহলের লোক তার সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। খালেদা জিয়া হুইল চেয়ারে বসেই এ অনুষ্ঠানে যান এবং যতক্ষণ ছিলেন সেভাবেই সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দাঁড়াতে খুব একটা সক্ষম হননি। 

জানা গেছে, গত আগস্টের শুরুতে নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) খালেদা জিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর নভেম্বরে তিনি যুক্তরাজ্যের ভিসার কাজ শুরু করেন।

গত ৩০ অক্টোবর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং ওই দেশের ভিসা পাওয়ার জন্য সহায়তা দেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সফরকারীদের মধ্যে বেগম জিয়ার পরিবার ও তার সহকারী রয়েছেন। এর আগে সর্বশেষ, ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই লন্ডন যাত্রা করে চারটি মামলার পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া। ওই সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

শেয়ার করুন