১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৬:৫৪:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


আইওয়ার বিতর্কিত এসএফ ২৩৪০-এর কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আদেশ বহাল
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
আইওয়ার বিতর্কিত এসএফ ২৩৪০-এর কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আদেশ বহাল ইউএস ফেডারেল আপিল আদালতের অষ্টম সার্কিট


ইউএস ফেডারেল আপিল আদালতের অষ্টম সার্কিট গত ২৪ জানুয়ারি আইওয়ার বিতর্কিত অভিবাসনবিরোধী আইন এসএফ ২৩৪০-এর কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আদেশ বহাল রেখেছে। ২০২৪ সালে আইওয়া স্টেট আইনসভায় গৃহীত এসএফ-২৩৪০ আইনটি আদালতের আদেশে গৃহীত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই স্থগিত করা হয়। এ আইন ফেডারেল আইনবিরোধী এবং আইওয়ার মানুষের জন্য গভীর সংকট তৈরি করতে পারে। এটি এমন একটি আইন, যা আইওয়ায় অবস্থানরত কোনো ব্যক্তি-এমনকি শিশু যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর পুনরায় অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করে আইওয়ার স্টেটে বসবাস করলে তারা অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। ফেডারেল ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের মতোই আপিল আদালতও এই আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে এবং মামলার বিচারাধীন থাকা পর্যন্ত আইনটির কার্যকারিতা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। আইনটির অধীনে যে কোনো ব্যক্তি এমনকি শিশু, যারা নির্বাসনের পর পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, তাদের জন্য নতুন অপরাধ নির্ধারণ করা হয়। এমনকি যদি তারা পরবর্তীতে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পেয়ে থাকে, তবুও এই আইনের আওতায় তাদের বিচার এবং কারাবাসের শিকার হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারা ফেডারেল অভিবাসন আইনের সঙ্গে সরাসরি বিরোধপূর্ণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ক্ষমতার ভারসাম্যকে চ্যালেঞ্জ করে।

এই আইনটির আরো একটি বিতর্কিত দিক হলো, এটি শুধু অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ করে নয়, বরং পূর্বে নির্বাসিত কিন্তু পরবর্তীতে বৈধ অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিদেরও এর আওতায় নিয়ে আসে। এর ফলে অভিবাসী পরিবার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের রাজ্য কারাগারে বন্দি বা তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাসিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

এসএফ ২৩৪০-এর বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা করা হয়েছিল। একটি মামলা দায়ের করে মার্কিন বিচার বিভাগ, আরেকটি করে আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিল, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) এবং এসিএলইউ অব আইওয়া। এই মামলায় আইওয়া মাইগ্র্যান্ট মুভমেন্ট ফর জাস্টিস এবং সংগঠনটির মাধ্যমে সহায়তা প্রাপ্ত হাজারো অভিবাসীর পক্ষে মামলা করা হয়, যার মধ্যে দুইজন ব্যক্তি আইওয়ানের পক্ষেও মামলা হয়।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের ডেপুটি লিগ্যাল ডিরেক্টর এমা উইঙ্গার বলেন, বর্তমানে সারা দেশে অভিবাসী পরিবারগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সৌভাগ্যবশত, আপাতত আইওয়ার মানুষদের এই নিষ্ঠুর আইন নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। এই আইন এমন লোকদের, যারা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন, তাদেরও গ্রেফতার ও বহিষ্কারের মুখে ফেলতে পারতো। দুঃখজনকভাবে দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এমন কঠোর অভিবাসনবিরোধী আইন পাস করার চেষ্টা চলছে, যা রাজ্য ও ফেডারেল সরকারের ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট করছে।

আইওয়া মাইগ্র্যান্ট মুভমেন্ট ফর জাস্টিসের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক এরিকা জনসন বলেন, এই অমানবিক আইন মানুষের জীবন ও পরিবারগুলোর জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে। এটি এমন লোকদের, যারা বহু বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে এখানে বাস করছে এবং সমাজে অবদান রাখছে, তাদের কারাগারে পাঠাবে এবং প্রায়ই তাদের মাতৃভূমি থেকে হাজার মাইল দূরে সীমান্তে বহিষ্কৃত করবে। আমাদের এমন আইন দরকার যা কার্যকর, সুশৃঙ্খল এবং মানবিক অভিবাসন ব্যবস্থা তৈরি করে। এসএফ ২৩৪০ ঠিক উল্টো কাজ করে।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ইমিগ্র্যান্ট রাইটস প্রজেক্টের সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি স্পেন্সার আমডুর বলেন, এই রায় নিশ্চিত করে যে, অভিবাসন আইনের নিয়ন্ত্রণ রাজ্যগুলোর হাতে থাকা উচিত নয়। তারা ফেডারেল আইনে থাকা অভিবাসীদের অধিকার কেড়ে নিতে পারে না। আমরা এই ধরনের আইনগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবো।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন অব আইওয়ার লিগ্যাল ডিরেক্টর রিটা বেটিস অস্টিন বলেন, এসএফ ২৩৪০ আইওয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অভিবাসনবিরোধী আইন। এই আইন বৈধ স্থিতি থাকা ব্যক্তিদের, এমনকি শিশুদেরও, গ্রেফতার, আটক, বহিষ্কার, পরিবার বিচ্ছিন্নতা এবং কারাবাসের ঝুঁকিতে ফেলেছে। আজকের আদালতের রায়ের ফলে আপাতত এই আইনটি স্থগিত রয়েছে এবং আইওয়ার মানুষ এই অসাংবিধানিক আইন থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এসএফ ২৩৪০-এর বিরুদ্ধে আদালতের সাম্প্রতিক এই রায় অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এটি স্পষ্ট যে, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং মানবিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল আইন তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

শেয়ার করুন