০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৪:৫৭:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্টিত , সহজ গ্রুপে ব্রাজিল - যুক্তরাষ্ট্র ডি গ্রুপে স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
কথার কথকতা


দীর্ঘসময় ধরে একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চা ছেলে এক টুকরা রান্না করা গরুর গোশত চুষে খাচ্ছে, এরকম দৃশ্য কারো চোখে পড়েছে কি কখনো? আপনারা কেউ দেখেছেন কিনা জানি না, তবে আমি যখন স্কুলে পড়ি তখন এরকম দৃশ্য দেখেছি। এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের নেহায়েতই সাধারণ দৃশ্য ছিলো এবং এটা নিয়ে কিছু লেখা যায় বা স্মৃতিচারণ করা যায় এমনটি কেউ কখনো ভাবেনি। কিন্তু ইদানীং আমি ছেলেবেলায় দেখা এরকম দৃশ্যকে খুবই অর্থপূর্ণ হিসেবে দেখছি। এর মধ্যে লুকিয়ে আছে বহুমুখী তথ্য এবং সমাজ চিত্র। আমরা আজ সংক্ষেপ এর দু’একটা দিক তুলে ধরবো। সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে এ পর্যন্ত আমি শিশু বা কিশোরের দীর্ঘসময় ধরে এক টুকরা মাংস খাওয়ার চিত্র কারো লেখায় দেখিনি। আর বর্তমান সময়ে ওই রকম দৃশ্য বাস্তব জীবনে আরো ঘটবার সম্ভাবনাও সময়ের ব্যবধানের কারণে খুবই কম। তাহলে আসুন বিষয়টি একটু বিশ্লেষণ করে দেখা যাক।

আজ থেকে অর্ধশত বর্ষ আগে বাংলার গ্রামে নিম্নবিত্ত পরিবারে মাংস রান্না ছিলো একটি অসম্ভব বিষয়। কদাচিত এটা রান্না হতো মধ্যবিত্ত পরিবারে। পরিমাণ খুবই কম। সংসারে অল্পবয়সী ছেলে বা মেয়ে থাকলে তাকে ভাতের প্লেটে এক টুকরা রান্না করা মাংস আর ঝোল দেয়া হতো। আরো পাবার সম্ভাবনা নেই বলে শিশুটি ঝোল মেখে ভাত খাওয়া শেষ করে মাংসের টুকরাটি হাতে নিয়ে উঠে যেতো এবং তা চুষে চুষে খেতো দীর্ঘসময় ধরে। হ্যাঁ, কোনো একসময় মাংসের টুকরাটি শেষ হতো আর চুষতে চুষতে হাতের অবস্থা এমন হতো যে, ওই শিশুটি আর হাত ধোয়ার দরকার আছে মনে করতো না। কেউ কেউ মায়ের দাবড়ানি খেয়ে হাত ধোয়ার মতো কাজটি করতো।

আমাদের আজকের এই চিত্রটি তুলে ধরার পর ষাটোর্ধ্ব যেসব মানুষ আছেন, তাঁরা হয়তো অতীতের দিকে তাকিয়ে এরকম দু’একটা স্মৃতির টুকরো স্মরণ করেও ফেলতে পারেন। যা-ই হোক, সংক্ষেপ গোশত কাহিনিটি এ পর্যন্তই। তবে হ্যাঁ, এর সাথে জীবনের একটা খুব গভীর এবং জটিল বিষয়ের প্রসঙ্গ টেনে আমরা একটা সাহিত্যমণ্ডিত চিরন্তন কথার উল্লেখ করবো। শিশুর এই মাংস খাওয়া প্রক্রিয়ার মধ্যে বড়দের জন্য একটা শিা লুকিয়ে আছে আর তা হচ্ছে মানব জীবনের একটি মূল বিষয়। বিষয়টি উল্লেখ করলে কেউ কেউ বলবেন, এটাইতো মানব জীবনের চালিকাশক্তি আর কেউ কেউ বলবেন, এটা মানব জাতির প্রধান সমস্যা। বিষয়টি উল্লেখের আগে আমরা একটা মন্তব্য করতে চাই যে, ওই শিশুটি যদি প্রচুর মাংস খেতো, তাহলে তা তার হজম প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করতো আর মাংস খাওয়ার মজাটি বরবাদ হয়ে যেতো। তাছাড়া এর বেশি ওকে দেবার মতাও মায়ের ছিলো কিনা তাও সন্দেহের বিষয় ছিলো। এসব বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। এবার এ বিষয়টিকে মানব জাতির অপরিহার্য যে বিষয়টির সাথে তুলনা করবো তা বলছি।

শিশুর মাংস খাওয়ার এই প্রক্রিয়া, প্রলম্বায়ন এবং পরিমিতিবোধ যদি মানব জাতি প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে প্রয়োগ বা অনুসরণ করে, তাহলে মানব-মানবীর সম্পর্ক আরো মজাদার এবং বিপদমুক্ত হবে।

তাহলে মোদ্দাকথা দাঁড়ালো এই যে, হে মানবকুল, প্রেম সেবনে যদি শিশুটির মাংস সেবনের প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ বা অনুসরণ করা হয়, তাহলে প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং অতি আবেগের কারণে হার্ট ফেইল বা স্ট্রোকের মতো ঘটনাগুলো কমে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে পারিবারিক শিা থেকে একটা শিশু বড় হয়ে প্রক্রিয়াটি আয়ত্ত করে তা মানববৃে প্রয়োগ করার মতো কোনো শিা আমাদের পরিবার বা শিাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পাচ্ছে কি? মনে হয় পাচ্ছে না। এই লেখাটিকে অনেকেরই হয়তো পাগলামো বলে মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা বলবো, প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে আপনারা শিশুর মাংস খাবার প্রক্রিয়াটি প্রয়োগ করলে আপনাদের জীবন আরো মধুময় হয়ে উঠবে। মানব জনম সার্থক হয়ে উঠবে। আসুন, আমরা শিশুর গোশত খাওয়ার মতো করে ধৈর্যশীল প্রক্রিয়ায় প্রেম উপভোগ করি। তাতে সবার জীবন হয়ে উঠবে প্রশান্তিতে ভরপুর!

শেয়ার করুন