৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৪১:৪৯ অপরাহ্ন


হালকা হয়ে যাচ্ছে এনসিপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
হালকা হয়ে যাচ্ছে এনসিপি এনসিপির লগো


বেশি হালকা হয়ে যাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি)। দলটির খোদ শীর্ষ বেশ কয়েকজন নেতার বক্তব্য বিবৃতির ধরণে তারা ধীরে ধীরে হালকা হয়ে যাচ্ছেন। আবার একারণে তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে যেমন এখন অনেক ধোয়াশা ও প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে, তেমনি বিভিন্ন কর্মসূচির কারণেও। কারো কারো মতে, এদের বক্তব্যে এখন যেমন দেখা যাচ্ছে অপরিপক্কতায় ভরা, তেমনি রয়েছে শালীনতারও অভাব।

এনসিপি’র কে কি বললেন?

সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, লন্ডনে সেজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এটি ঠিক হয়নি। অথচ তার জনগণের কাছে সেজদা দেওয়ার কথা ছিল। এখনো সময় আছে কেবলা পরিবর্তন করে জনগণের কাছে যাওয়ার। দেশে সংকট নিরসন করতে হলে একমাত্র সমাধান গণপরিষদ নির্বাচন।

কক্সবাজারে নাটক

সম্প্রতি ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের দিন ঢাকায় জনতার সমাবেশে যোগ না দিয়ে কক্সবাজার চলে গেলেন এনসিপি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতা। এনিয়ে সারাদেশে নানান ধরনের জল্পনা কল্পনা বাতাস ভারী হয়ে উঠে। এই পরিভ্রমণ নিয়ে নানান ধরনের বক্তব্য জনমনে নানান ধরনের প্রশ্ন দেখা দেয়। কেননা তারা সেখানে অবস্থানকালে বলেছেন একধরনের কথা আবার জানাজানি হলে হয়ে গেলে বলেছেন অন্যরকম। এদিকে ওই ঘটনায় দলটির পক্ষ থেকে হাসনাত-সারজিসসহ এনসিপি’র শীর্ষ ৫ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু দলটির পক্ষ থেকে শোকজ দেয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি পার্টির কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। এমন বিধিবহির্ভূত শোকজ দেয়া এবং অতিউৎসাহী হয়ে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা, কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ করবো।

পরে কক্সবাজারে ব্যক্তিগত ভ্রমণ করায় পাঁচ নেতাকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার করে নেয় এনসিপি। প্রত্যাহারের ব্যাপারে বলা হয় শোকজের জবাব বিশ্লেষণে এই ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলার ব্যত্যয় না ঘটায় আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নির্দেশক্রমে এসব শোকজ নোটিশসমূহ প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। 

বিশ্লেষণে যা বলে

প্রথমত আলোচনায় এসেছে যে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, লন্ডনে সেজদা দিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রশ্ন হচ্ছে এই এনসিপি’র নেতা কেনো কি কারণে এমন বক্তব্য দিলেন? অবশ্যই তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও খোচা মেরেছেন। কেননা গত জুনে লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক করেছেন। এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কি বোঝাতে চেয়েছেন যে, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে বৈঠক করে কার্যত তিনি (ড. মুহাম্মদ ইউনূস) মাথা নত করেছেন? কিন্তু সেই লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনও বৈঠকের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনও লন্ডনে সেজদা দিয়ে এসেছেন। কারো কারো মতে, এধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ফান করে বক্তব্য বা মন্তব্য করা এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর রাজনৈতিক অপরিপক্কতাই মনে করেন অনেকে। কারণ তিনি আসলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো ব্যক্তিকে সর্বোপরি দেশের এক বয়োজ্যষ্ঠ বিশিষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে মূল্যায়ন করতে পারেননি। একিইভাবে বিএনপির মতো একটি বড়ো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তিনি মূল্যায়ন করতে পারেননি এ-ই নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী । তিনি বুঝতেই পারেননি ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন লন্ডনে কোনো যেতে হলো বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে। এগুলো যে কতটা জাতীয় আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ কলাকৌশল তা এনসিপি’র এই নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বুঝতে পারেনি। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় যে, এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহসহ তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে দেয়া নোটিশ প্রত্যাহার করা হয়েছে তার পেছনে কাজ করেছে হুঙ্কার। যে হুঙ্কার দিয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ নোটিল পাওয়ার পর ফেইসবুকে পোস্টের মাধ্যমে দেন। 

এনসিপি হালকা হয়ে যাওয়ার সর্বশেষ প্রমাণ

সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তির কাউন্সিলে অংশ নিয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছিলেন, সংস্কার ও নতুন সংবিধান বাস্তবায়ন ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। একই অনুষ্ঠানে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও একই রকমের ইঙ্গিত দেন। এ ছাড়া জামায়াতও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিষয়ে সহমত নয়। সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। আর এসব বিষয় নিয়ে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এক তীক্ষè বক্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক অঙ্গনে। তিনি বলেছেন, এনসিপির কথায় কিছু যায় আসে না। প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়াী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে।

শেয়ার করুন