৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:০৩:১১ অপরাহ্ন


দুর্বল অন্তর্বর্তী সরকার তালগোল পাকিয়ে ফেলছে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৭-২০২৫
দুর্বল অন্তর্বর্তী সরকার তালগোল পাকিয়ে ফেলছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক


অনভিজ্ঞতা আর প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ একবছর সময়ে সেনাবাহিনী সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিরাপত্তা প্রদান করতে পারেনি। আগের সরকারের মতোই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, খুন, ধর্ষণ রাহাজানি এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। জুলাই-আগস্টে নিহত-আহতদের আর্তনাদ এখনো শোনা যাচ্ছে। আগস্ট ২০২৪ সময়ে কিছু সুনির্দিষ্ট জাতীয় লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে অঙ্গীকার দৃশ্যমান ছিল এনজিও ভাবাদর্শের কারণে সরকারের পক্ষে তার সামান্যই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। মবতন্ত্রকে আস্কারা দিয়ে সরকার নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরেছে। এখন কথায় কথায় ঘেরাও, আন্দোলন নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। সব কিছুর দায় পতিত সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। নানা কারণে পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসন হতাশ, বিক্ষুব্ধ। বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী। 

সরকার যে অর্থনীতির হাল ঠিকমতো ধরতে পেরেছে বলা যাবে না। হাক ডাক করে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হলেও কোনো বড় ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ আসেনি। বরং ভারত বৈরিতার কারণে ভারত সহায়তার অনেক প্রকল্প স্থগিত হয়ে গাছে। গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট অব্যাহত থাকায় অনেক শিল্প বন্ধ হয়ে গাছে। অনেক মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে। তদুপরি কার্যকরি দ্যূতিয়ালি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ বড় ধরনের মার্কিন শুল্ক বাধায় পড়তে যাচ্ছে। সরকার জ্বালানি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির কথা নানাভাবে প্রচার করলেও এক বছর সময়ে একটি দুর্নীতি প্রমাণ করে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে পারেনি। দেশীয় কয়লা অনুসন্ধান এবং ব্যবহারের সম্ভাবনা ঝুলে আছে। সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়া আদৌ এগোয়নি। স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে সনাতনী গতিতে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার হুমকি আরো ঘনীভূত হচ্ছে। 

মূলত প্রবাসে জাতীয়তা নেওয়া বাংলাদেশিদের দিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে প্রয়োজনীয় এবং অপ্রোজনীয় সংস্কারের নাম করে অযথা সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। সরকারি প্রশ্রয়ে স্বাধীনতার সব স্মারক ধ্বংস করে ২০২৪ গণবিস্ফোরণকে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। 

সরকারের দুর্বলতার কারণে অথবা কিছু মানুষের দূরভিসন্ধির কারণে অনেক ঘটনাই ঘটছে। যাতে সাধারণ মানুষ বিরক্ত। ব্যাক্তির বা সংস্থার ব্যর্থতার কারণে বিমান বাহিনীর যুদ্ধজাহাজ উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর ভেঙে পড়ায় বহু শিশু-কিশোর শিক্ষকের মৃত্যু ঘটেছে। সরকার এবং সরকার সমর্থক গোষ্ঠী এসবের মধ্যেও আওয়ামী ভূতের ষড়যন্ত্র দেখছে। সোশ্যাল মিডিয়া গুজবে সয়লাব। কেন ঘটনাটি ঘটেছে তার কূলকিনারা আদৌ উদঘাটিত হবে কি না সন্দেহ আছে। তবে দেশ-জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে নিষ্পাপ শিশু-কিশোরদের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটায়। গোটা জাতি শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে। 

সরকারের উপদেষ্টারা কিন্তু মাঝেমধ্যেই জনরোষের মুখোমুখি হচ্ছে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এবং ব্যর্থতার অভিযোগ উঠছে। একটি প্রধান রাজনৈতিক দল অভিযোগ তুলেছে সরকার একটি বিশেষ দলকে বুকে আর অন্য একটিকে কাঁধে তুলে বহন করছে। খারাপ লেগেছে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পর জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেও সরকারপ্রধান কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সভা করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একজোট থাকার বিষয়ে আলোচনা করেছে। 

ক্ষমতার নেশায় উন্মত্ত রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। এমন দুর্বল সরকার হতাশ, দ্বিধাগ্রস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসন নিয়ে সংস্কার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। সচেতন বা অচেতনভাবে সরকার সবকিছুতেই তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।

শেয়ার করুন