২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৫:২০:৩৫ পূর্বাহ্ন


৫১ বছর পরে স্মৃতিময় সাতক্ষীরায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৮-২০২২
৫১ বছর পরে স্মৃতিময় সাতক্ষীরায়  মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা স্মৃতিময় স্থান ভোমরা স্থল বন্দর পরিদরশনে লেখক /ছবি সংগৃহীত


একাত্তরের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম সময় ছিল আমার কৈশোর পেরোনো যৌবনের দুয়ারে নাড়া দেয়ার সময়। রঙিন চশমা পরে পৃথিবী দেখতাম,বুকে ছিল অনন্ত দেশ প্রেম। ঘর পালিয়ে সীমানা পেরিয়েছিলাম যে পথে সেই সাতক্ষীরার ভোমরা গিয়েছিলাম কাল..।

৫১ বছরের ব্যবধানে সবকিছু পাল্টে গেছে। সবুজ প্রান্তরের বুখতা আরোপ্রসারিত। সীমান্তে গড়ে উঠেছে সুরক্ষিত সীমান্ত চৌকি। জোনাকি আলোর স্থান নিয়েছে বিদ্যুৎ। সেখানে থাকা সীমান্ত প্রহরীদের কাছে ওই অঞ্চলে আমার ৭১ স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিতেই অধীর আগ্রহে শুনলো ওরা। দেখলাম, মেয়ে-পুরুষ নির্বিশেষে পালা করে সীমান্ত পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা। সীমান্তে বিজিবি আছে, আছে সীমান্ত পুলিশ, শুল্ক অফিসার।

ক্ষুদ্র আকারে ক্রসবর্ডার বাণিজ্য চলছে। যা যাচ্ছে সীমানা পেরিয়ে বৈধপথে তার অনেক বেশি আসছে। মনে পড়ছে পাশের গ্রামে ১৯৭১ কয়েকদিন অবস্থান করেছিলাম। পাকিস্তান সীমান্ত প্রহরীদের ওপর কয়েকটি চোরাগোপ্তা হামলায় অংশ নিয়েছিলাম। গ্রামবাসীর আন্তরিকতা ভালোবাসার কথা ভুলবো না কোনোদিন। এখানেই পরিচয় হয়েছিল একজন বিদেশি সাংবাদিক মহিলার, যার সঙ্গে পরবর্তীতে যুদ্ধ সংবাদ সংগ্রহ আর প্রচারে অংশ নিয়েছিলাম।

এবারের বাংলাদেশ সফরে সাতক্ষীরা পরিকল্পনায় ছিল। করোনার গৃহবন্দি সময়ে মেলবোর্ন,ব্রিসবেন থেকে বহুবার ওয়ালী,মিলন, আফজাল, মোস্তাকদের সাথে ডিজিটালি সংযুক্ত থেকেছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশু-কিশোররা আমার সাথে কথা বলেছে।তবুও কিন্তু নিশ্চিতভাবে মনে হয়নি জীবনে আবারো কখনো অন্ত ফায়ার যাবার সুযোগ হবে ভোমরা সীমান্তে। কাল কাকডাকা ভোরে ঢাকা থেকে রওয়ানা হবার সময়েই পরিকল্পনা করেছিলাম শুরুতেই ছুঁতে যাবো কৈশোরের সেই স্মৃতিময় স্থানে। মানুষের জীবনে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যা পূর্ণিমার আলো দিয়ে ধরে রাখতে হয় হৃদয় গহীনে। ঘর পালিয়েছিলাম হানাদার পাকবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করার দুরন্ত নেশায়। 

প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় মূর্তি কমিশনে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ মেলেনি। কয়েকদিন কলকাতায় অবস্থানের পর তাই ভোমরা সীমান্ত দিয়েই দেশে ফিরেছিলাম। কয়েকদিন সেখানে অবস্থানের পর আবারো যোগ দিয়েছিলাম ভাই-ভাবি আর শিশু ভাতিজি মালার সঙ্গে। সেই দিনগুলোর কথা কাউকে বলিনি। আজ যখন আবারো শেকড়ের সন্ধানে ভোমরা নিয়ে গেলো ওয়ালী, ইমরান স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলাম। মনে পড়ছে রোজি, রত্না,স্বপ্না তিন কিশোরীর কথা। পুরো কাহিনি আরেকদিন লিখার প্রতিশ্রুতি দিলাম।

কাল বিলাসবহুল বাসযোগে পদ্মা সেতু পেরিয়ে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা ভ্রমণ আনন্দদায়ক ছিল। দুপুরে পৌঁছে প্রথমে উপাদেয় খাবার খেলাম ওয়ালীসহ।সাতক্ষীরা মাছ, মিষ্টি দই, ছানার মিষ্টির শহর। আসলাম স্মৃতিময় সার্কিট হাউসে। ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধকালে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রঙ্গমহল, টর্চার সেল।১৯৭২ জানুয়ারি মাসে খুলনার মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুদের নিয়ে প্রবেশ করে মানুষের মাথার খুলি পেয়েছিলাম। কিছু সময় চামেলী কক্ষে বিশ্রাম নিয়ে ছুটলাম ভোমরার উদ্দেশ্যে। ছায়া সুনিবিড় গ্রামের আঁকাবাঁকা সীমান্তপথ পেরিয়ে সীমান্তে পৌঁছতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগেছিলো। ধূলিময় পথ, গ্রামের পথে পাট পচানো গন্ধ কিছুই বাধা হতে পারেনি। দেখলাম, পায়ে হাঁটা মেঠোপথগুলো পাল্টে গেছে। 

তবে সাতক্ষীরা গ্রামাঞ্চলে মাছ চাষ, সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি পালনের ঐতিহ্য তেমনি আছে। বিদ্যুৎ পৌঁছে গাছে ঘরে ঘরে। সবাই কিছু করছে। ২০১৮ কয়েকবার সীমান্তের ওপর পারে থাকার সুযোগ হয়েছে। ওখানের তুলনায় সাতক্ষীরার স্বর্ণালি সম্ভাবনা আছে। জানি, ভোমরা বন্দরকে পরিপূর্ণ স্থলবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলছে। এখান দিয়ে বাংলাদেশে গ্যাস আমদানির পরিকল্পনা আছে।

কাল বেশ পরিশ্রান্ত ছিলাম। প্রচণ্ড গরম ছিল। তবু ভালো লেগেছে ১৯৭১ স্মৃতি রোমন্থনের। সীমান্তে নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেছি যুদ্ধে জীবন দেয়া বন্ধু নাসিম নৌফেলকে।

 

শেয়ার করুন