১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৫:৫৩:১৮ পূর্বাহ্ন


নিউলাইন : রোহিঙ্গা গণহত্যার বদলা কি সশস্ত্র সংগ্রাম
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৬-২০২২
নিউলাইন : রোহিঙ্গা গণহত্যার বদলা কি সশস্ত্র সংগ্রাম


আরব নিউজ নামক সৌদি আরবের অন্যতম সরকারি মুখপত্র বলে কথিত সংবাদপত্র গত ২৪ জুন প্রকাশিত এক নিবন্ধে উল্লেখ করেছে রোহিঙ্গা দুর্গতির সমস্যা সমাধানে তাদের নিজেদের দ্বারা নতুন করে উদ্ভাবিত পন্থায় প্রয়োজন রয়েছে। 

ড. আজিম ইব্রাহিম লিখিত প্রবন্ধে জানানো হয়েছে, রোহিঙ্গারা যুগ যুগ ধরে নিজেদের দেশ মায়ানমারে একের পর এক সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়ে আসছেন। তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত। জাতীয়তা ও নিরাপত্তা পর্যায়ক্রমে ভূলুণ্ঠিত, সহিংসতার নিগড়ে সামরিক জান্তা, যারা গত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অস্থায়ী বেসরকারি সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েেেছ, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে তারা তাদের সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সিস্টেমেটিকভাবে তাদের যন্ত্রণা দেখার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অধিকার খর্ব করছে। তাদের শান্তিতে বাস করতে দিচ্ছে না। তাদের পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। 

দিন দিন এ অত্যাচার বাড়ছে। তাদের যেসব স্থান থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। সে সব স্থান, বসতবাড়ি অন্যদের দিয়ে দেয়া হচ্ছে। মায়ানমারের সামরিক জান্তা ভারতীয় নির্মাণ সংখ্যার সঙ্গে মিশে সেখানে তৈরি করেছে সরকারি আস্তানা। সেখানে অত্যাচারের ভয়ে রোহিঙ্গারা যাচ্ছে না। তাদের যে অত্যাচার করা হবে না তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিচ্ছে না। এর মধ্যে মায়ানমার সেখানে ভারতীয় বস্তিখানা বা সøাম বাসিন্দাদের এনে বসবাস শুরু করিয়েছে। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি সংস্থা আরকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংস্থা গজিয়ে উঠেছে। তারা রাখাইন স্টেটের ভেতরে ও বাইরে অপারেশন শুরু করেছ্।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তারা নতুন করে বসতি স্থাপনকারীদের ওপর আক্রমণ করছে। সুযোগ বুঝে রাখাইন মিলিশিয়াদের ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। অধিকাংশ নতুন বসতি স্থাপনকারীরা ভারতীয় হিন্দু আর সুকৌশলে মায়ানমারের জান্তা সরকার তা হিন্দু-মুসলিম বিরোধে রূপান্তরের চেষ্টা করছে। একশ্রেণির ভারতীয় প্রভাবাধীন মানবাধিকার সংগঠনসমূহও বিষয়টাকে ফুঁ দিয়ে চলছে। যাতে তা আরো শতধা হয়ে জ্বলতে থাকে।

সঙ্গে আছে ভারতীয় চানক্য নীতি। যে ভারত রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা না করে, তাদের যন্ত্রণা দিয়ে মারার ব্যবস্থা করছে, তাদের ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ না নিয়ে এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে হিন্দুদের পাঠাচ্ছে রাখাইন স্টেটে (পূর্বেকার আরাকান স্টেট)। কি জঘন্য মনোবৃত্তি। কিছু কিছু রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের বাসের পরিবেশ আরব নিউজের ভাষায় আন্তর্জাতিক মানবিক অধিকারের আইনসম্মত পরিবেশ নেই। আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারকে নিন্দা করেছে। আমেরিকা বলেছে, রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার। আমেরিকা তাদের মানবিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ব্যবস্থা এখনো হাতের নাগালের বাইরে। রোহিঙ্গাদের প্রতি অনাচার-অবিচার দিন দিন বেড়েছে। মায়ানমার সেনাপতিদের ওপর নির্ভর করছে তাদের আস্থা ও অবস্থান। সমস্যা হচ্ছে তারা হুমকি থেকে নিরাপদে কীভাবে বসবাস করতে পারে। কিন্তু এখন চলছে তাদের ওপর নির্যাতনের ও তাদের শেষ করে ফেলার খেলা। তাদের সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চোখে পড়ে না। 

যেভাবে এখন দেখা যাচ্ছে বিষয়টাকে, তাহলো এক জেনারেশনের মধ্যে রোহিঙ্গা পরিচয়কে চিরতরে মুছে দেয়া। তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও তাদের শতাব্দী পুরোনো রোহিঙ্গা পরিচিতিকে মুছে ফেলাই হচ্ছে বর্তমান মায়ানমারের ‘নাৎসি’ সামরিক জান্তার কাজ। এখন দেখা যা”ে,ছ ইতিপূর্বেকার গৃহীত ব্যবস্থা দিয়ে কাজ হচ্ছে না। তাই এখন প্রয়োজন নতুন করে তাদের নীতিগত ব্যবস্থা নেয়া। এই ব্যবস্থা বর্তমান নিরিখে অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আরব নিউজ মন্তব্য করেছে। এখন রোহিঙ্গারা নিজেরাই গ্লোবাল রোহিঙ্গা ইনিশিয়েটিভ নামে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় আরো ব্যাপক সর্বজনীন ও উদ্ভাবনী পন্থার ব্যবস্থা করেছে আরো বেশি উদ্দীপনার সাথে। রোহিঙ্গা নেতাদের এ নিয়ে আরো ব্যাপকভাবে বোঝার অভিজ্ঞতা রয়েছে আর এ নিয়ে তারা তাদের অস্তিত্বের প্রতি যে হুমকি এসেছে, তা রুখে দাঁড়ানোর বাস্তবসম্মত ক্ষোভ সৃষ্টি করতে পারে। 

যদিও বিষয়টা মানবিক সহায়তা থেকে কিছুটা ভিন্ন, কিন্তু আসলে এই পরিবর্তিত পন্থায় প্রয়োজন হচ্ছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি উভয় ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও কমিউনিটির, যারা বিদেশে গণহত্যায় ক্রমাগত নিষ্পেষণ থেকে মুক্তি পেতে তাদের উদ্ভাবনী নীতির উন্মেষ ঘটাবে।

এই উদ্ভাবনার রাজনীতি অবকাঠামোতে আঘাত করা, যাতে রোহিঙ্গাদের প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়া থেকে তাদের রক্ষা করা যায়। একটা বাস্তবসম্মত সমাধান আবিষ্কারে একটি অর্থবহ নীতি চাই। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সমস্যা আরো বিশদভাবে নিরীক্ষা করতে হবে এবং সমাধান বের করে তা পদ্ধতিগতভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশেষে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও নিষ্পেষণ চালকদের অবরোধকে যথার্থ গুরুত্ব দিতে হবে আর এই উদ্যোগ রাখাইনবাসী রোহিঙ্গাদের নিরাপদ,

স্বেচ্ছামূলক ও স্থায়ী সমাধানে ইতিমধ্যে এই রোহিঙ্গা সংকটে প্রধান শরিক দলসমূহ যেমন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্স (ওআইসি), বাংলাদেশ, সিনিয়র জাতিসংঘ, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের কর্মকর্তারা তাদের সম্মতি দিয়েছে নিউলাইনস ইনস্টিটিউটের প্রতি। এই ইনস্টিটিউট রোহিঙ্গাদের নিজেদের সমস্যা নিজেরা মোকাবিলা করতে নিজেরাই পন্থা উদ্ভাবন করে এগোবে। এই ঐতিহাসিক সমস্যা সমাধানে আরো উদ্ভাবনী শক্তির প্রয়োজন। নিউলাইন তার একটি হিসেবে কাজ করবে। 


শেয়ার করুন