২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:১৩:৫৮ পূর্বাহ্ন


অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমেরিকায় জিন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১০-২০২২
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমেরিকায় জিন সুরা আস-সাফাতের ৭৯নং আয়াত


আমেরিকায় জনৈক বাংলদেশি যে বাড়িতে থাকেন, সেখানে একসময় জিনের আড্ডা ছিল। হয়তো এখনো আছে। তাদের বিছানার গদিটা স্প্রিংয়ের। এর ওপর কেউ বসলেই শব্দ হয়। ইংরেজিতে এই শব্দটাকে স্কুইকিং বলে। বিছানার পাশে যখন নামাজ পড়তে বাংলাদেশি কিংবা তার স্ত্রী বসেন, তখন একের পর এক স্কুইকিং শব্দ তৈরি হয়। একবার বাংলাদেশি সিজদায় পড়লেন তার রাখা খাটের উত্তর-পশ্চিম কোণার নিকট আর ওখানেই সবশেষ শব্দটা বেশ জোরে হলো। ইতিমধ্যে তিন-চারটা স্কুইকিং কানে এসেছিল। অনেকের নিকট শুনেছিলেন যে শব্দ করে জিন তার উপস্থিতি জানায়। একদিন বাংলাদেশি বোধ করলেন যে, চিৎ হয়ে ঘুমানো অবস্থায় পিঠের নিচে আঙুল দিয়ে গুঁতা মারলো কীসে যেন। 

বাংলাদেশির বড় সন্তান হাজার-বারোশ ডলার মাসিক ভাড়ায় আমেরিকার জর্জিয়ার স্টেটের আটলান্টা শহরে অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া করে থাকতেন মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সময়। যখনই উনি বিছানায় ঘুমাতেন, জিনে তাকে ঠেলা মেরে তুলে দিতো। বাধ্য হয়ে তাকে প্রতি রাত শয়ন ঘরের বাইরে যেখানে টেলিভিশন লাগানো আছে, সেখানে ঘুমাতে হতো। বাংলাদেশির বাসায় আগে জিন ছিল না। আটলান্টা থেকে তার সন্তানের সঙ্গে জিন তাদের বাড়িতে এসে থাকবে হয়তো। 

জিনদের মধ্যে মানুষের মতো ভালো-মন্দ দুই রকমেরই রয়েছে। একটা অন্ধ মেয়ের বাল্যকালের ঘটনা।  মেয়ের নাম জুলেখা। জুলেখা বেশ ধার্মিক ও সাহসী মেয়ে। বাবার নাম মকবুল হোসেন আর মায়ের নাম রাশেদা বেগম। বাড়ি নীলফামারীর বাজারের বারই পাড়ায়। ২০০৯-২০১০ সালের দিকে জুলেখার বয়স দশ-বারো বছর হবে। সে সমবয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে খেলা করছিল একটা জঙ্গলের পাশে।  খেলা শেষে সবাই জুলেখাকে রেখে চলে যায়। অন্ধ মেয়ে বাড়ি যাবার পথ খুঁজতে খুঁজতে জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।  জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে হতাশায় কাঁদতে ছিল। সাপ-বিচ্ছুর কামড়ে সে মারা যেতে পারে এমন ভয় করছিলো।  হঠাৎ সে একটা সাপের ফোঁস ফোঁস শব্দ শুনতে পায়। সে অনুধাবন করতে পারে যে সাপটা একবার তার নিকট আসে আবার চলে যায়। সাপের এই কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তিতে জুলেখা বুঝতে পারে সাপটা হয়তো তাকে পথ দেখাতে এসেছে। জুলেখা সাপটার আওয়াজকে অনুসরণ করে চলতে থাকে। এভাবে সাপটা তাকে জুলেখার বাড়ির দরজায় নিয়ে যায়। তারপর সাপ জঙ্গলে চলে যায়। জুলেখার সাপকে অনুসরণের দৃশ্য জনৈক প্রতিবেশী দেখে জুলেখার মাকে বলে। 

জুলেখা এখন (২০২২ সালে) আরকানসাস স্টেটের লিটল রক শহরে অন্ধ স্কুলে অন্ধদের শেখানোর আধুনিক টেকনোলজি শিখছে। তার বাবার সঙ্গে ফোনালাপে ঘটনার সত্যতা যাচাই করা হয়েছে। 

আর একটা ঘটনা। একদিন জুলেখা তার কাজিনের সঙ্গে এক গাছের নিচে বসে গল্প করছিল। হঠাৎ করে সে বুঝতে পারে আশপাশে কোথাও সাপ আছে। জুলেখা তার কাজিনকে বলে। কাজিন বিশ্বাস করে না। ইতিমধ্যে গাছ থেকে একটা সাপ জুলেখার হাতের ওপর পড়ে। জুলেখার কাজিন তো লাফিয়ে পালায় সেখান থেকে, জুলেখা পড়তে থাকে।  

সুরা আস-সাফাতের ৭৯নং আয়াত

‘সালামুন আলা নুহিন ফিল আলামীন।’ (সুরা আস-সাফ্ফাত, ৩৭:৭৯) Salamun (peace) be upon Nuh (Noah) (from Us) among the Alamin (mankind, jinns and all that exists)-‘বিশ্ববাসীর মধ্যে নূহের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।!’

এই আয়াত পাঠ করলে সর্বপ্রকার জীবজন্তু ও কীটপতঙ্গের দংশন ও জাদুটোনা থেকে নিরাপদ থাকা যায়। 

সাপটা তখন জুলেখাকে ছেড়ে চলে যায়। 

পৃথিবীতে যতো কিছু জীবন্ত আছে জীবজন্তু আছে ও ছিল তা সবই  নূহ (আ.)-এর প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ উনি প্রতিটা জীবন্ত কিছুর জোড়া জোড়া করে নিয়ে তাঁর জাহাজে উঠেছিলেন। এই আয়াতটিতে যেন নূহ (আ.)-এর দোহাই দেয়া হয়ে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, একমাত্র উনিই (সা.) সমগ্র বিশ্বের জন্য এসেছেন আর সব নবী স্ব স্ব কওমের জন্য এসেছিলেন।  এতে মনে হয় সে সময় নূহ (আ.)-এর অঞ্চলেই তার কওমের সীমাবদ্ধতা ছিল। গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী গ্রন্থে দেখা যায় আদম (আ.) ও নূহ (আ.)-এর মাঝখানে রয়েছেন শিশ, ইউনুস, কাইনা, মহলিল, ইয়ার্দ, ইদ্রিস, মাতুশালাখ ও লমক।  আদম (আ.)কে এক নম্বর ধরলে, নূহ (আ.) পড়েন দশ নম্বরে।  ইনাদের মধ্যে শিশ, ইউনুস ও ইদ্রিস পরিচিত নবী।  নূহ (আ.) ৯৫০ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি তাঁবুতে বাস করতেন। কোনো বাড়িঘরে বাস করতেন না। এই দীর্ঘ জীবনে খুবই কম সংখ্যক লোককে হিদায়াত করতে পেরেছিলেন। সাহসী জুলেখা বাল্যাবস্থায় অনেক বার হারিয়ে গিয়েছিল। কুকুর ঘেঁউ ঘেঁউ করে তাকে পথ দেখিয়েছিল।

হাদিসে জীনের কথা-

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন যে, জিনেরা যে বেশ ধরতে পারে তা হচ্ছে কুকুরের বেশ, সাপের বেশ, বাতাসের মধ্য দিয়ে উড়ন্তের বেশ, আর আসা-যাওয়ার বেশ।  

`Abu Tha labah reported: The Messenger of Allah, peace and blessings be upon him, said, The jinn have three forms: one form like dogs and snakes, one form flies through the air, and one form comes and goes.'

Source: Ṣaḥiḥ Ibn Ḥibban 6156

উপরের হাদিস পড়ে মনে হয় যে, জিনই জুলেখাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। আর সাপ তাড়ানোর জন্য ওপরের দোয়া বেশ কার্যকর ছিল। আটলান্টা থেকে জিন বাতাসে উড়ে বাংলাদেশির বাড়িতে এসেছিল। নামাজের সময় স্কুইকিং শব্দ সম্ভবত জিনের আসা-যাওয়ার জন্যই হতো।

শেয়ার করুন