১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০১:০৪:৫০ অপরাহ্ন


পশুর নদী খননকৃত বালিতে তিন ফসলি জমি শেষ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২২
পশুর নদী খননকৃত বালিতে তিন ফসলি জমি শেষ “পশুর নদী খননকৃত বালি থেকে তিন-ফসলি জমি রক্ষার” -দাবীতে সংবাদ সম্মেলন, ছবি : নিজস্ব


অভিযোগ বাপা’র

পশুর নদী খননকৃত বালিতে তিন ফসলি জমি শেষ। এর কারন হলো উত্তোলনকৃত বালু ফেলার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী বাগেরহাটের চিলা ইউনিয়ন এবং খুলনার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ তিন-ফসলি কৃষিজমি ।এতে করে এসব অঞ্চলের মানুষের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষিকাজ ও মৎস্য চাষ। তাঁদের সেই জীবিকা এখন হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তিনি ফসলী জমি রক্ষায় তাগিদ দিয়েছেন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (সাগর-রুনী) মিলনায়তনে ঢাকায় “পশুর নদী খননকৃত বালি থেকে তিন-ফসলি জমি রক্ষার” -দাবীতে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশবাদিসহ এলাকার ভুক্তভুগীরা এদাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাপা মোংলা শাখার আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ।

এতে সরজমিনে পরিদর্শন পূর্বক এতদসংশ্লিষ্ট মূল আলোচনা উপস্থাপন করবেন বাপা’র সহ-সভাপতি ও বেনের প্রতিষ্ঠাতা ড. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ড. মো. খালেকুজ্জামান, বাপা’র নির্বাহী সদস্য এমএস সিদ্দিকী এবং মোংলা-দাকোপ থেকে আগত স্থানীয় কৃষিজমির মালিক সত্যজিত গাইন, হিরন্ময় রায়, বাণীশান্তা ইউপি সদস্য ও কৃষি জমির মালিক জয় কুমার মন্ডল মানিক ও সুপর্না রায়।


পশুর নদী খননকৃত বালি থেকে তিন-ফসলী জমি রক্ষার দাবী জানিয়ে লিখিত বক্তবে বলা হয় মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। খুলনা শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বন্দরটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। বর্তমানে এই বন্দর সচল রাখার নিমিত্তে গুরুত্বপূর্ণ পশুর চ্যানেল (পশুর নদী) এর নাব্যতা সংকট এর কারণে বন্দরের সঠিক ব্যবহার বাধাগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি মোংলা ও রামপাল অঞ্চলকে কেন্দ্র করে শিল্পায়ন বিস্তাারের কারণে জরুরী ভিত্তিতে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ পশুর নদীতে ব্যাপক খনন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তায়নে এগিয়ে যায়। পশুর নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্র জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের সার্বিক বাস্তুতন্ত্রের টিকে থাকা না থাকার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি পশুর নদীতে যেকোনো খননকাজ পরিচালনার পূর্বে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষার ব্যাপারে সরকারকে ইতিমধ্যে পরামর্শ দিয়েছে।  


মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে একটি খনন প্রকল্প ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় পশুর নদী থেকে প্রায় ২১৬ লাখ ঘনমিটার মাটি ও বালু উত্তোলন করার কথা। এতে উল্লেখ করা হয় যে, মোংলা বন্দরের পর্যাপ্ত জমি না থাকায় খননকৃত মাটি ও বালু, দাকোপ ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন খাস ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ফেলতে হবে।

উল্লেখ করা আবশ্যক, বেপরোয়া শিল্পায়নের কবলে থাকা সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন যে সকল এলাকায় উচ্চ আদালত যেকোনো ভরাট ও শিল্প স্থাপন নিষেধ করেছে, মোংলা ও দাকোপ উপজেলায় জেলা প্রশাসন ও বন্দর কতৃক চিহ্নিত স্থানসমূহও সেই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। জেলা প্রশাসন ও বন্দর কতৃপক্ষ ইতিমধ্যে স্থানীয় জনসাধারণের ব্যাপক প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পশুর নদীর খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার মাধ্যমে মোংলার ৭০০ একর জায়গায় বালির পাহাড় গড়ে অসাধু শিল্পপতি ও ব্যাবসায়িদের ইতিমধ্যে সুবিধা করে দিয়েছে। একইসাথে দাকোপ উপজেলার বাণীয়াশান্তা ইউনিয়নের ৩০০ একর জমিতে পশুর নদীর খননকৃত মাটি ও বালু ফেলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।


পশুর নদী থেকে ড্রেজিং এর মাধ্যমে উত্তোলনকৃত বালু ভরাট এখন পশুর পাড়ে ব্যাপক উদ্বেগের  কারণ । অপরদিকে মোংলা বন্দর চ্যানেলের অধিক গভীরতার জন্য পশুর নদী খনন করে মাটি ও বালু ফেলতে তাঁদের চাষের জমি হুকুমদখল করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত এই খনন প্রকল্পের ফলে পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে । তিন ফসলি কৃষিজমির ওপর নির্ভর করে বংশপরম্পরায় বানিয়াশান্তা এলাকায় মূলত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের  মানুষের জীবন-জীবিকা চলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বন্দরের প্রয়োজনে দীর্ঘদিন বালু, মাটি ফেলে রাখায় তাঁদের জমি উর্বরতা হারাবে। সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ হয়তো মিলবে, তবে ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির শিকার হয়ে একসময় তাদের উদ্বাস্তু হিসাবে ভিটেবাড়ি ছাড়তে হবে।

এক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে তিন-ফসলি জমি ধ্বংস না করতে  প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনাও লঙ্ঘিত হচ্ছে। কাজেই, স্থানীয় জনগনের সাথে কথা না বলে এরকম অগ্রহণযোগ্য প্রকল্প সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে পরিচালিত কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এজন্য দাকোপের বানিয়াশান্তা এলাকায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বালু ফেলার পরিকল্পনা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।  সেই সাথে স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে স্বচ্ছভাবে যথাযথ পরিবেশগত অভিঘাত পর্যালোচনার মধ্যদিয়ে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পশুর নদীর নাব্যতা-সংকট সমাধান করতে হবে। 

শেয়ার করুন