২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০১:৩৯:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


নাটকীয়তার টুর্নামেন্টে সেরা ইংল্যান্ড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-১১-২০২২
নাটকীয়তার টুর্নামেন্টে সেরা ইংল্যান্ড


কত নাটক? কত স্বপ্ন? সবকিছুকে পিছু ফেলে টি ২০ বিশ্বকাপ ২০২২-এর সবচেয়ে সুসংঘটিত ইংল্যান্ড দলের শোভা পেলো শিরোপা। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো টি২০ শিরোপা জয় করলো ইংলিশ লায়ন্স। ইতিহাসের গতিধারা পরিবর্তন করে ১৯৯২-এর পাকিস্তান পুনরাবৃত্তির সম্ভাবনা রুদ্ধ করলো। থ্রি লায়ন্স এখন ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে সাদা বলের দুটি বিশ্ব টুর্নামেন্ট ওডিআই এবং টি২০ শিরোপাধারী। ওডিআই টুর্নামেন্ট জয় দারুণ কিছু। তবে কাল আইকনিক এমসিজিতে জয়ে কোনো ভেজাল ছিল না। সুন্দর পরিচ্ছন্ন খেলা উপহার দিয়ে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে যোগ্য দলই জিতেছে শিরোপা। 

আকাশে মেঘের ঘনঘটা ছিল, আসি আসি করেও আসেনি বৃষ্টি। উইকেটে সুইং, স্পিন, অসম বাউন্স সবই ছিল। গুরুত্বপূর্ণ টস জয় ইংল্যান্ড দলের আশীর্বাদ ছিল। এই উইকেটে উঁচু মার্গের বোলিং দিয়ে পাকিস্তানকে শুরু থেকেই চেপে ধরেছিলো ইংল্যান্ড। নিজেদের সেরা ব্যাটিং প্রদর্শনী করতে পারেনি ও রা শাম কুরান (৩/১২) আর জর্দানের (২/২২) তুখোড় সুইং বোলিং আর আদিল রশিদের (২/৩২) কার্যকর স্পিনের সাঁড়াশি আক্রমণের মোকাবিলায়। একে তো বৈরী পরিবেশ তার পর উইকেট অনুযায়ী কার্যকর ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণে পাকিস্তানের ১৩৭/৮ অন্তত ২৫ রান অপর্যাপ্ত ছিল। উইকেটে স্থিতু হয়েও বাবার আজম ৩২ রান করে আনাড়ির মতো আদিল রশিদের বলে ওর হাতে ধরা পড়ে। ম্যাচের ধারা অনুযায়ী বাবর শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকলে পাকিস্তান হয়তো ১৬০ করতে পারতো। থামলে এই ম্যাচ পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা সমুজ্জল ছিল। এমনিতেই বল সহজে উইকেটে আসছিলো না। উইকেট অনুযায়ী বিচক্ষণতার সঙ্গে বল করেছে ইংলিশ বোলারস।  বাটলার দক্ষ হাতে দলের সম্পদ ব্যবহার করেছে। বিন্দু মাত্র সুযোগ দেয়নি পাকিস্তানিদের খোলস ছেড়ে বের হবার। শান মাসুদ (৩৮) ধৈর্য নিয়ে খেলছিল একসময় রানের চেইপ উইকেট উৎসর্গ করেছে মাসুদ। অবশ্য টুর্নামেন্ট এবং ম্যাচের সেরা বলার স্যাম কুরানের তুখোড় বোলিংয়ের প্রশংসা করতেই হয়।  

আগেই বলেছি, ১৩৮ রান ফাইনাল খেলার মতো স্নায়ুক্ষয়ী খেলায় অন্তত ২৫ রান কম ছিল। তার পরেও শক্তিশালী বোলিং নিয়ে পাকিস্তান তুমুল লড়াই করলো। শাহীন আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহ কিন্তু সাড়াশি আক্রমণ করে চেপে ধরেছিলো ইংল্যান্ডকে। শাহিনের গতি আর সুইঙের কাছে হার মেনেছিলো হেলস। হারিস রউফ দূরন্ত গতিতে বল করে ফিরিয়ে দিয়েছিলো বাটলার আর সল্টকে। দুর্ভাগ্য নাসিমের। বার বার গতি আর মুভমেন্ট দিয়ে ব্যাটসম্যানদের পরাস্ত করেও উইকেট পেলো না। উইকেট আঁকড়ে ধরে কোনোভাবে টিকে ছিল ইংল্যান্ডের জয়ের অন্যতম নায়ক বেন স্টোকস। একসময় সাদাবের বলে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নিয়েছিল শাহীন আফ্রিদি। কিন্তু ক্যাচ লুফে নেয়ার সময় হাঁটুতে আঘাত পেয়েছিলো শাহীন। তখন ওর দুটি মূল্যবান ওভার বাকি। ম্যাচের মোক্ষম সময়ে দলের মূল স্ট্রাইক বলার আহত হওয়ায় পিছিয়ে গেলো পাকিস্তান। ফিরে এসে একটি মাত্র বল করেছিল শাহীন। বাকি ৫ বল করতে হলো অফ স্পিনার ইফতিখারকে। ওর ওভারে স্টোকস, মঈন জুটি গুরুত্ব পূর্ণ ১৩ রান তুলে নিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো। ১৯ ওভার শেষে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান তুলে নিয়ে ম্যাচ জয় করলো ইংল্যান্ড।

কঠিন উইকেটে টস জয় করে বোলিং করার সুযোগ, পাকিস্তান দলের অন্তত ২৫ রান কম করা, মোক্ষম সময়ে মূল স্ট্রাইক বলার সাইন আহত হওয়া এবং অবশ্যই বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা কোকোস খেলোয়াড় বেন স্টোকসের ম্যাচ জয়ী অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জয়ী করেছে। পাকিস্তান দল সীমিত পুঁজি নিয়েও প্রাণ পান লড়াই করেছে। এই টুর্নামেন্টে অন্য কোনো দল এই উইকেটে পাকিস্তানের তুখোড় বোলিং মোকাবিলা করে টিকে থাকতো বলে মনে হয় না। বলতেই হবে এমসিজিতে ৮০ হাজার ৫০০ দর্শক একটি জম্পেশ লড়াই দেখেছে। 

দুর্ভাগ্য বাবর আযমের। ১৯৯২ ইমরান খান হয়ে পাকিস্তানকে জয়ী করা হলো না। বীরের মতো লড়াই করেই হেরেছে পাকিস্তান। এহেন পরাজয়েও গৌরব আছে। 

এ টুর্নামেন্টে এবার সূচনা থেকেই নাটকীয়তা। কেউ ভাবেনি আইসিসির নবীন সদস্যদেশগুলোর মধ্যে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড এভাবে চমক দেখাবে। সেটা চমক আর কী, ওয়েস্টইন্ডিজের মতো সাবেক দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তো মূলপর্বেই যেতে পারেনি। মূলপর্বেও তাদের ছিল দাপট। তবে এবারের সুন্দর আয়োজন প্রশ্ন বিদ্ধ ভারতের দুই ম্যাচ। ২০১৫ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের বিপক্ষে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে তুমুল আলোচনা সমালোচনা হয়। এবারো পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের একটি ম্যাচে ভারতের পক্ষে আম্পায়ারের কিছু সিদ্ধান্ত দৃষ্টিকটু লেগেছে। বিশ্বকাপের মতো এমন পর্যায়ে নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা থাকে।

আবার বাংলাদেশের বিপক্ষেও অ্যাডিলেডের এক ম্যাচে বৃষ্টি থামতে না থামতেই অনেকটা প্রেসার তৈরি করে খেলিয়ে দেয়া এটাতেও বিস্ময় জেগেছে। আউট ফিল্ডের অবস্থা বিবেচনা করে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে খেলা শুরুর কথা। কিন্তু তাতে ভারতের ক্ষতির সম্ভাবনা হবে ভেবে ছিল অপ্রত্যাশিত তাড়াহুড়া। এমন পজিশনে ভারতের বিপক্ষেই জিম্বাবুয়েকে মাঠে নামানো যায়নি। এছাড়াও স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার দ্রুত বিদায় এটাও ভালো লাগেনি। তবে সব মিলিয়ে দারুণ জমজমাট এক টুর্নামেন্ট হলো এবার অস্ট্রেলিয়ায়। ভারতের কষ্ট রয়েছে। কারণ গত বিশ্বকাপের মতো এবারো তাদের এক ম্যাচে দশ উইকেটে হারের বেদনা নিতে হলো। তবে বাংলাদেশের সান্ত¦Íনা এটাই তাদের ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন। টি২০ বিশ্বকাপে এবার তারা জিতেছে দুই ম্যাচে। প্রতিপক্ষ ছোট হলেও জয় জয়ই। তবে জয়ের সুযোগ আরো ছিল। দলের পূর্বপ্রস্তুতি আরো ভালো হলে সে জয় পেয়েও যেতে পারতো। তবে নিঃসন্দেহে চমৎকার এক টুর্নামেন্ট। যাতে ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন এবং পাকিস্তান হলো রানার্সআপ। এরপর অপেক্ষা ওয়েস্টইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী বিশ্বকাপের।

শেয়ার করুন