২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৩:০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন


আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর মন্তব্য
বিএনপির ২৭ দফা ‘সরকার পতন আন্দোলনের অংশ’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০১-২০২৩
বিএনপির ২৭ দফা ‘সরকার পতন আন্দোলনের অংশ’


বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র মেরামতে ২৭ দফা ‘সরকার পতন আন্দোলনের অংশ’ বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। রোববার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘সেজন্য আমি বার বার বলছি, এই ২৭ চলমান আন্দোলনের অংশ। এটা আলাদা কিছু নয়। তারেক রহমান সাহেবের ২৭ দফার পেছনে যে ভাবনাট, যে দশর্ণটা সেটা আমাদেরকে আন্দোলনের পাশপাশি বাংলাদেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে, তাদের মনজগতের পৌঁছাতে হবে, বাংলাদেশের মানুষকে বুঝাতে হবে যে, এই ২৭ দফার মাধ্যমে আগামী দিনের বাংলাদেশ কী রকম দেখাবে?”

‘‘ আমরা যদি এটা করতে না পারি, বিএনপি যদি এই কাজ আগামী দিন করতে পারে তাহলে বাংলাদেশ পরিচালনা করাটা সম্ভব হবে না। এই রাষ্ট্রটি ড্উানহিল জায়গাতে যাবে-এটা ধবংস হয়ে যাবে। এটা বিএনপির দেশ পরিচালনার স্বার্থে নিজের, স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে রা্ষ্েট্রর স্বার্থে এই ২৭ দফা পুরণ করতে হবে। এখানে কোনো অপসন নাই। কারণ এই ২৭ দফা না করে আপনি রাষ্ট্র চালাতে পারবেন না।”


 ব্যাখ্যা দিয়ে খসরু বলেন, ‘‘ অনেক বলছেন, রাস্তায় আন্দোলন করছি, আবার ২৭ দফা এনে  এই সেমিনার কেনো করতে হচ্ছে? আমরা কেনো প্রত্যেক জেলায় গিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছি। আমি আবারো বলছি, আমরা মানুষ যারা এখনো অনেকে একটা ধারণা নিচ্ছি যে, ফ্যাসিস্ট যাবে, দুর্নীতিবাজ-দখলদার যাবে ৃ সব ঠিক আছে। আমরা এরপরে কী লাভবান হবো কিনা। এজন্য ২৭ দফা আন্দোলনের অংশ। যারা এখানো অপেক্ষা করছে যে, আমরা আন্দোলনে যাবো কি যাবো না, আন্দোলনে অংশ নেবে কি নেবো না-এখানে ভবিষ্যতে সত্যিকার অর্থে কোনো দিক নির্দেশনা আছে কিনা,  আসলে কি হবে? এটা জিনিসটা বুঝাতে হবো। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন দেশে-বিদেশে যে, তোমরা যে ২৭ দফা দিয়েছো তার চেয়ে ভালো কিছু দেয়ার আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আর কিছু নেই। কিন্তু তোমরা আসলে কি এটা মিন করো? তোমরা আসলে কি এটা করবে? আসলে কি করতে পারবে? এই প্রশ্নটা আসছে।”

‘স্মার্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গে’

আমীর খসরু বলেন, ‘‘ এরা এখন স্মার্ট বাংলাদেশ এর কথা বলছে। স্মার্ট নেসের দুইটা অর্থ আছে। একটা হচ্ছে ভালো কাজের স্মার্টনেস। আরেকটা অর্থ হচ্ছে, আপনাকে প্রফেশনালি চুরি করতে হবে, কিভাবে ব্যাংক লুট করতে হয় তা শিখতে হবে. শেয়ার বাজার কিভাবে লুট করা শিখতে হবে, তারপরে ওই ভোটচুরি স্মার্টলি করতে হবে, কখনো দিনে কখনো রাতে।”


‘‘ তারপরে ধরেন, স্মার্ট মানে হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষকে আপনি প্রজার মতো ব্যবহার করবেন। মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে আপনি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা চুরি করার স্মার্টনেস আপনার মধ্যে থাকতে হবে, ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার মতো আপনার স্মার্টনেস থাকতে হবে। আমরা সেই স্মার্টনেস বাংলাদেশের কথা বলছি না।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা বলছি, বাংলাদেশ যে গভীর গর্তের মধ্যে ডুবে আছে, পড়ে আছে সেখান থেকে বের করে এনে, সেখানে থেকে ট্যাকে আনার জন্য ২৭ দফা। ওই গর্ত থেকে এনে আপনি যদি ট্যাকে বসাতে পারেন তারপরে হচ্ছে আপনি দেশ পরিচালনা করতে প্রাবেন।”


‘‘ আমরা বলতে চাই এই ২৭ দফা পুরণ করা ছাড়া দেশ পরিচালনা সম্ভব নয়, রাষ্ট্র মেরামতের কোনো কাজ করা সম্ভব হবে না। এটা অবশ্যই পুরণ করতে হবে, আমাদেরকে ধারণ করতে হবে, জনগনের দ্বার গোড়ায় পৌঁছিয়ে দিতে হবে।”

২৭ দফা উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্ব উচ্চ পর্যায়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ঢাকা মহানগর উত্তর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ড্যাব) এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের যৌথ আয়োজনে ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।


এতে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখার ২৭ দফার বিশ্লেষন তুলে ধরেন মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন।


আমীর খসরু বলেন, ‘‘ একটি কল্যাণকর রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষা অনেক বড় বিষয়। এখানে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্ধ করার কথা বলা হযেছে। এখন স্বাস্থ্য সেবায় ১ শতাংশের আসেপাশে ঘুরাঘুরি করেছে এবং শিক্ষা ১ শতাংশের নিচে। তার উপরে রেেয়্ছ দুর্নীতি। বিশ্বের যে মানদন্ড বাংলাদেশের প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য খাতে যে খরচটা করে আফগানিস্তানেরও নিচে। তাহলে বুঝতে পারছেন বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে জন সাধারণের প্রাইমারী হেলফ কেয়ার ও প্রিভেন্টিভ হেলথ কেয়ারের বিষয়ে কি করবে তার রুপরেখা গ্রাম-উপজেলা পর্যায়ে জনগনের কাছে তুলে ধরার জন্য ড্যাবের চিকিতসকদের পরামর্শ দেন তিনি।


 খসরু অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ এখন কী হচ্ছে? এখন আমাদের দেশের অধিকার হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট  করব আর চুরি করব, মেগা প্রজেক্ট করব আর বিদেশে টাকা পাচার করব, মেগা প্রজেক্ট করব আর পাঁচটা গাড়ি চালাব। একেকটা গাড়ির দাম দুই কোটি, তিন কোটি, চার কোটি টাকা। আমরা মেগা প্রজেক্ট করব নিজের দলের লোকজনের পকেট ভর্তি করার জন্যে। এখানে আমরা বলেছি, সংসদ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট হবে- এই কথাটা আসছে কেনো? যে সংসদ আছে, এই সংসদে আজকে যারা আছেন সত্যিকার অর্থে এরা কয়জন যোগ্য। এরা কী আইন জানেন, আইন বুঝেন, এরা পড়াশুনা আছে কিছু, এদের জানার কী কোনো ইচ্ছা আছে। এর বেশিভাগ দেখবেন যে দুর্নীতিবাজ, এরা সংসদ ঢুকেছে দুর্নীতি করে আরো অর্থ উপার্জন করতে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৬৫% সংসদে বসে আছেনৃ এদের সময় কোথায়? এদের আইন প্রনয়নের সময় আছে, পড়াশুনার সময় আছে।” 

ঢাকা উত্তর ড্যাবের সভাপতি সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদ, মিডিয়া সেলের সদস্য কাদের গনি চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নবী উল্লাহ নবী, ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. বজলুল গনি ভুঁইয়া প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। 


শেয়ার করুন