১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন


কুমিল্লায় বিনা ভোটে পরাস্ত আওয়ামী লীগ!
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১১-২০২২
কুমিল্লায় বিনা ভোটে পরাস্ত আওয়ামী লীগ!


কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করার ব্যাপারে প্রস্তাব থেকে সড়ে আসা নিয়ে সারা দেশে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। ঠিক এসময়ে কেনো কি কারণে পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ করার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিতে গেলো, আবার আচমকা কেনো পিছু হটলো তার কোনো সদুত্তর মিলছে না। যদিও বলা হচ্ছে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণেই সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে। তবে অনেকে মনে করেন, এক শ্রেণীর আমলাদের কারণে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শেষমেষ প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক পরামর্শে সেখান থেকে পিছু হটেছে সরকার। বিশ্লেষকদের মতে, পুরো ঘটনায় বিজয়ের মালা ঝুলেছে বিএনপি’র গলায়। এর বিপরীতে নির্মমভাবে হেরে গেছে আওয়ামী লীগ। 

অতীত ফিরে দেখা...

গত বছরে অক্টোবরে ‘কুমিল্লাা বিভাগ’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বাহারের ‘মধুর’ বাহাস হয়ে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের চুম্বক অংশ আগে তুলে ধরা হলো। গত বছরের অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানে কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার দাবি জানিয়েছিলেন আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন এতে। অপরদিকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে নেতাকর্মীরাও যোগদান করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংসদ সদস্য বাহার ‘মধুর’ বাহাসে জড়িয়ে পড়েন। অনুষ্ঠানের একেবারে শেষ দিকে কুমিল্লা বিভাগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আবেদন জানান আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, কুমিল্লাতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর দীর্ঘ জীবন কাটিয়েছেন। তিনি এ জেলার জামাতা ছিলেন। একশ বছর আগে এ কুমিল্লা রাজধানী ছিলো। আমি ১৯৮৮ সাল থেকে বিভাগের আন্দোলন করি। এখনো আন্দোলন করেছি। কিন্তু বিভাগ হয়েছে ফরিদপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট। অথচ আমি একমাত্র সংসদ সদস্য, যে সংসদে দাঁড়িয়ে বিভাগের বিষয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আমার এলাকা কুমিল্লা বিভাগ হয়নি। আজকের এ সুন্দর একটি দিনে আপনার কাছে আবেদন করছি। এদিন আমরা আর কখনো পাব না। এ সুন্দর দিন আমরা মনে রাখব। ৬০ লাখ মানুষের প্রাণের দাবি কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করা হোক।’

আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের এমন বক্তবের পরই শুরু হয়ে যায় এক মধুর তর্ক-বিতর্ক। আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারে আবেগঘন আবেদনের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভাগের বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি দুটি বিভাগ বানাব দুটি নদীর নামে। একটি হবে পদ্মা, অপরটি মেঘনা। এ দুই নামে বিভাগ করতে চাই।’ এ সময় আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা, আমি একটি কথা বলতে চাই।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুচকি হেসে বলেন, ‘হুম, বলো। আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা, কুমিল্লা নামে দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “না, আমি এ ‘কু’ নামে দিব না।” জবাবে বাহার আবারো বলেন, ‘না আপা, কুমিল্লার নামে দেন।’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, ‘আমি তোমার কুমিল্লার নামে দিব না। কারণ, তোমার কুমিল্লার নামের সঙ্গে খুনি মোসতাকের নাম জড়িত।’ আ. ক. ম. বাহার আবারও বলেন, ‘না আপা, কুমিল্লার নামে দেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নো, আমি কুমিল্লার নামে দিব না। কুমিল্লার নাম নিলেই মোসতাকের নাম উঠে।’ আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার আবারও বলেন, ‘আপা, কোনো কুলাঙ্গারের নামে দেশের পরিচয় হয় না। বাংলাদেশের পরিচয় বঙ্গবন্ধুর ওপর, মোনায়েম খানের ওপর না। যখন বাংলাদেশের নাম ছিলো না, তখন সবাই বঙ্গবন্ধুর দেশ নামে বলত। কোনো কুলাঙ্গারের নামে পরিচিত না।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাহার থামো, আমি যদি কুমিল্লার নামে দিই তাহলে চাঁদপুর বলবে তাদের নামে, নোয়াখালী বলবে তাদের নামে দেওয়ার জন্য। কুমিল্লার তো ত্রিপুরার একটি ভগ্নাংশ।’

জবাবে আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর সবাইকে তাদের নামে দিয়েছেন এতে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ফরিদপুর বিভাগ করব ‘পদ্মা’ নামে। ফরিদপুরের নামও দিচ্ছি না। আর কুমিল্লা বিভাগ হবে ‘মেঘনা’ নামে। কারণ ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’- এ শ্লোাগান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে বিজয় অর্জন করেছে।” এসময় নাছোড়বান্দা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘না আপা, আমাদেরটা কুমিল্লার নামে রাখেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ নামে অন্য জেলাগুলো আসতে চায় না।’ আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বলেন, ‘কেন আসবে না?’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেউ আসবে না।’ আ. ক. ম. বাহার আবারও বলেন, ‘আপা আপনি কী সিলেটে জিজ্ঞাসা করে বিভাগ দিয়েছেন। আপনি দিলে সবাই আসবে, সবাই মানবে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘নো, তোমাকে দায়িত্ব দিলাম; তুমি রাজি করিয়ে নিয়ে আস। সবাইর কাছ থেকে লিখিত নিয়ে আস।’ আ. ক. ম. বাহার বলেন, ‘আপা, আপনি বলে দিলে সবাই মানবে। আমার কথা কেউ শুনবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নাম দিয়ে দিচ্ছি। তোমরা ছাত্র আবস্থায় শ্লোগান দিয়েছ- ‘পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার-আমার ঠিকানা; বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’।” এমন কথার পরও আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন করো। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমরাই প্রথম বলেছিলাম। আমরা বঙ্গবন্ধুর কর্মী।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে বলেন, “তাহলে তুমি থাকো। যদি বিভাগ চাও তাহলে আমি ‘মেঘনা’ নামে করে দিতে পারি।” নাছোড়বান্দা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, ‘আপা করজোড়ে অনুরোধ করছি, কুমিল্লা নামে দেন।’ প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, ‘মেঘনা পার হলেই তো কুমিল্লা, আর পদ্মা পার হয়ে যাবো ফরিদপুর।’ আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়; আপা হিসেবে আপনার কাছে দাবি জানাচ্ছি; বঙ্গবন্ধুকন্যা আমাদের ফেরত দিবে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের ফেরত দিতে পারবে না।’

এছিল কুমিল্লা বিভাগ নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সাথে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে ওপেন টক। যা সারা দেশে বেশ আলোচিত হয়ে উঠে। এমন আলোচনায় প্রকারান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই প্রশংসার প্লালা ভারি হয়েছিল। কারণ কুমিল্লার একজন বিচক্ষণ নেতা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা রাজনৈতিক পরিমন্ডলে থেকেই বির্তক করেন, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মডেল হয়ে থাকার মতো বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। কেননা প্রধানমন্ত্রী তার দলের একজন পরীক্ষিত নেতা আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের সাথে এমন বাহাস হয়েছে যাতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী)একটু বিরক্ত বা বিব্রতবোধ করেননি। 

আচমকা খবর কুমিল্লার বদলে মেঘনা 

২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগকে ভেঙে কুমিল্লাা ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে পৃথক বিভাগ করা যায় কি না। আর এমন বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্দেশনা দেন সে বৈঠকে। এরপর বিভাগের নাম ময়নামতি ও মেঘনা নামকরণ করার কথা বিভিন্ন সময়ে উচ্চারিত হয়। কিন্তু কুমিল্লাবাসী কুমিল্লা নামেই বিভাগের পক্ষে আন্দোলন করে। অবশ্য কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৯ সালের ৫ জানুয়ারিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কুমিল্লা গণদাবি পরিষদ নামে সে সংগঠনের ব্যানারে বিভিন্ন সময়ে বিভাগ আন্দোলন হয়। আর ২০১৫  সালের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের পর গত বছরে অক্টোবরে ‘কুমিল্লা বিভাগ’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের ‘মধুর’ বাহাস ছাড়া আর কোনো সাড়া শব্দ মেলেনি। কিন্তু দীর্ঘ বিরতির পর হঠাৎ একটি খবরে কুমিল্লার পাশাপাশি সারাদেশেই কমবেশি আলোচিত হয়ে উঠে যে কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করা হচ্ছে। এমাসের গত সপ্তাহে খবরটি এমনি ছিল যে, ”অবশেষে দুই নদীর নামেই হচ্ছে নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ। এর মধ্যে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা’ বিভাগ এবং কুমিল্লা ও আশপাশের জেলাগুলো নিয়ে হবে ‘মেঘনা’ বিভাগ। আর এ খবরটি এমন সময় প্রকাশ হয় যখন কয়েকদিন পর কুমিল্লায় ছিল বিএনপি’র বিভাগীয় সম্মেলন। 

সবার দৃষ্টি ছিল বিএনপি’র দিকে...

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে গত ২৬ নভেম্বরে বিএনপি’র কুমিল্লা বিভাগীয় সম্মেলন যতো না ছিল রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশ মাত্রায় হয়ে উঠে আঞ্চলিক। জানা গেছে, এসমাবেশ থেকেই কুমিল্লাবাসী জানান দিতে দলমত নির্বিশেশে এক হয় যায়। তারা কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করার ব্যাপারে প্রস্তাব থেকে সরে আসা নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এ কাজে সুকৌশলে তারা ২৬ নভেম্বরে বিএনপি’র সমাবেশকে ব্যবহার করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। যার পেছনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের একটি থিংক ট্যাংক কাজ করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লাকে বিভাগ করার জোর দাবি জানিয়েই বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা ২৬ নভেম্বরের সমাবেশে বেশি বক্তব্য রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। সুকৌশলে বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা বলা চলে এব্যাপারে কথা রেখেছেন। আর এর প্রতিফলনও হয়েছে। দলটির নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মেঘনা বিভাগের নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ারুল আজিমসহ স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতারা এই বিষয়ে বক্তব্য দেন। জানা গেছে, ২৬ নভেম্বরের এই সমাবেশে যেনো বিএনপি এধরনের বক্তব্য দেন এমনটাই চেয়েছিল কুমিল্লা আওয়ামী লীগের শীর্ষ থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর একারণেই কুমিল্লায় বিএনপি’র এমন একটি সমাবেশ সর্বসাধারণের জণসমাগমে পরিণত হয় কোনো ধরনের মারামারি হানাহানি ছাড়াই। কোথাও দেখাই যায়নি যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি’র সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করেছে। কেননা কুমিল্লার নামের বিভাগের দাবিই যে তাদের প্রাণের দাবি সে ব্যাপারে বলা চলে আওয়ামী লীগ বিএনপি’র মধ্যে ঐক্যমত হয়ে আছে তা-ও ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। এমনও শোনা যায় কুমিল্লার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিএনপি’র শীর্ষনেতাদের নানা ভাবে বলেছেন তারা যেনো কুমিল্লার নামেই বিভাগের দাবি করে জোড়ালোর বক্তব্য রাখেন। 

বেকায়দায় পড়ে পিছু হটে সরকার...

বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের এমন আশ্বাসে সরকারের একবারে শীর্ষ পর্যায়ে টনক নড়ে। নড়ে চড়ে বসে সরকার। দলের সুপ্রীম কমান্ড বুঝে ফেলে তারা প্রশাসনিক কূটকৌশলে হেরে গেছে কুমিল্লায়। আর এজন্যই গত রোববার প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভার আলোচ্যসূচিতে নতুন দুটি বিভাগ অনুমোদনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা থাকলেও তা হয়নি। বলা হয় বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচটি জেলা নিয়ে ‘পদ্মা’ এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালীর তিনটি করে মোট ছয়টি জেলা নিয়ে ‘মেঘনা’ বিভাগ গঠন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

কিন্তু কারা এতে বাগড়া দিল?

প্রশ্ন হচ্ছে ‘কুমিল্লা বিভাগ’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহারের ‘মধুর’ বাহাসের পরও কেনো সরকার কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করার ব্যাপারে প্রস্তাব এসেছিল? একটি রাজনৈতিক দলের সভাপতির সাথে তার দলের একজন নেতার এমন মধুর গণতান্ত্রিক তর্ক-বিতর্কের পর কারা এতে বাগড়া দিয়েছে। কারা কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করার ব্যাপারে প্রস্তাব রাখতে উৎসাহিত করে? কারা সরকার প্রধানকে রাজনৈতিক পরিমন্ডলের বাইরে যেয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে? কারা এমন দূরত্বে ভূমিকা রাখছে? এটিই এখন আলোচিত হচ্ছে। 

শেষ কথা....

মাত্র কয়েকদিন আগেই কুমিল্লায় বিশাল এক সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। সেসময় চলছিল বিএনপি বহুল আলোচিত কর্মসূচির মধ্যে বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ। ৫ নভেম্বর  হয় বরিশালে সমাবেশটি। একিই দিন অনুষ্ঠিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন যা শেষমেষ রূপ নেয় মহাসমাবেশে। কুমিল্লায় দলের এমন সমাবেশ দেখে অহংকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন অনেক কথা। ওবায়দুল কাদের  বলেন, কুমিল্লায় আ.লীগের সম্মেলনে কত লোক হয়েছে দেখে যান, ভাড়া করা লোক নেই এখানে। কিন্তু আওয়ামী লীগের এমন অহংকারে হঠাৎ ছেদ পড়ে একটি খবরে। তা হলো পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ হওয়ার খবরে। এতে কুমিল্লাবাসীর মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কেননা তারা এতোদিন কুমিল্লা নামেই বিভাগ হওয়ার ব্যাপারে জোড় দাবি করে আসছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ হওয়ার খবরে আওয়ামী লীগের প্রতি কুমিল্লাবাসী ৫ নভেম্বরে দেখানো জনস্রোতের ইমেজ একপ্রকার ম্লান হয়ে যায়। যদিও কুমিল্লার বদলে মেঘনা নদীর নামে বিভাগ করার ব্যাপারে প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে সরকার। এর পাশাপাশি সরকার সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে একটি কারণও উপস্থাপন করেছে। কিন্তু কুমিল্লাবাসীর পাশাপাশি সারা দেশের মানুষ মনে করে বিএনপি’র হুংকারেই সরকারের মত পাল্টে গেছে মেঘনা নদীর নামে কুমিল্লা বিভাগ হওয়ার বিষয়টির ব্যাপারে। প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে দূরে সরে আছে। নির্ভর হয়ে পড়েছে একশ্রেণীর আমলাদের ওপর। আর এই আমরাই কলকাটি নেড়ে পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ করার ব্যাপারে কুটকৌশল ও পরামর্শ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে। যে কারণে রাজনৈতিক সরকার পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ করার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। তবে শেষমেষ কুমিল্লাবাসীর পাশাপাশি সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামে দুই বিভাগ হওয়ার বিষয় থেকে সরে আসার চমকপ্রদ খবরে। এতে কুমিল্লায় বিনা ভোটেই জিতে গেলো বিএনপি। আর হেরে গেলো আওয়ামী লীগ-এমনটাই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন।

শেয়ার করুন