২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন


জনগণের প্রত্যাশা সমঝোতা
সংঘাত অরাজকতা মঙ্গল বয়ে আনবে না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
সংঘাত অরাজকতা মঙ্গল বয়ে আনবে না


রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সংঘাত অনিবার্য। ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারি দল আর প্রধান বিরোধী দল ময়দানে মুখোমুখি। বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক বিভাজন থাকবেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশে নির্ভেজাল রাজনৈতিক শিষ্টাচার গড়ে উঠেইনি। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহিষ্ণুতা রাজনীতি থেকে অনুপস্থিত। রাজনীতি থেকে নিবেদিত রাজনীতিকরা নির্বাসিত। অথচ দুই দলেরই প্রধান টার্গেট দেশের সেবা। জনগণের সেবা। কিন্তু জনগণ কী চায় সেটা তারা ভ্রুক্ষেপই করে না। জনগণের প্রত্যাশা সমঝোতা। দেশের স্বার্থে ঐক্যমত। সুন্দর পরিবেশ। সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ। কিন্তু সেটা কী বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বিদ্যমান? 

সেনাকুঞ্জ থেকে জন্ম নেয়া স্বৈরশাসক আর তথাকথিত গণতান্ত্রিক দল দুটির পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধাবাদী আমলা আর দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের দাপটে প্রকৃত রাজনীতি এখন দুর্বৃত্তায়ণে। দেশের সংকট মুহূর্তে জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় না নিয়ে সরকারি দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ক্ষমতায় ফেরার জন্য দেশকে সংঘাতের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 

১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ঢাকার পুরানো পল্টনে সড়ক অবরুদ্ধ করে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি সরকারি দলের কৌঁসুলি বাধার মুখেও বিরোধী দল ৯ টি বিভাগীয় শহরে সমাবেশে জনগণের আশান্বিত সাড়া পেয়েছে। সরকারি দল শুরু করেছে সভা- সমাবেশ। ঢাকার সমাবেশ থেকে প্রধান বিরোধী দল সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করার অভাস দিয়েছে। সরকারি দল রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা না করে প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে দমনমূলক পথে হাঁটছে। উভয় পক্ষ সংযত না হলে সংঘাত অনিবার্য।  সংঘাত হলেই অরাজকতা, প্রাণহানি ঘটবে। অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  বর্তমান অবস্থায় দেশ জ্বালানি সংকট, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অগ্নিমূল্যের  কারণে জনগণের জীবন চরম অস্বস্তিতে। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা শুধু জনগণের দুর্ভোগ বাড়াবে। 

বিএনপি কেন শুধুমাত্র পল্টনে মহাসমাবেশ করার গো ধরেছে? সরকার কেন কোন যুক্তিতে সেখানে মহাসমাবেশ করতে দিবে না? স্মরণে আছে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এমনি এক সমাবেশে কথিত সরকারি দলের সমাবেশে দুর্বৃত্তরা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আর্জেস গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ করেছিল। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। বিষাক্ত আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির কারণে হানাহানি, খুনোখুনি করতে পারে বাংলাদেশ বিরোধী মহল। দেশপ্রেমিক মহল শঙ্কিত আতংকিত।

আমার কাছে বোধগম্য হয় না সরকার সব ধরনের শান্তিরক্ষী বাহিনীর সতর্ক প্রহরায় পল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দিলে কি ক্ষতি? সমাবেশকে কেন্দ্র করে নাশকতা করার মতো পেশী শক্তি বিরোধী দলের আছে বলে মনে হয় না। বরং সরকারের এক্সগুয়েমীর কারণে নীরব সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামলে কিন্তু রাজনীতির বিশাল ক্ষতি হবে। অতীতে বাংলাদেশে এমন নজির রয়েছে। ফলে রাস্তায় সাধারণ মানুষ নেমে আসুক, সংঘর্ষে জড়াক এটা কেউই চাইবে না। দেশের বৃহত্তর জনকল্যাণে সরকার আর বিরোধী দলকে সামঝোতার পথে হাঁটার আহবান এখন দেশপ্রেমিক তথা সর্বমহলেরই।

শেয়ার করুন