২৫ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:২৫:৪১ অপরাহ্ন


গ্যাস অনুসন্ধানে প্রয়োজন মানসিকতা পাল্টানো
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
গ্যাস অনুসন্ধানে প্রয়োজন মানসিকতা পাল্টানো


বাংলাদেশে চলছে গভীর জ্বালানি সংকট। গ্যাস সরবরাহে রীতিমতো দুর্ভিক্ষ। অথচ সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা দুর্বলতার কারণে বিপুল সম্ভানাময় বিস্তীর্ণ সাগর এবং স্থলবাগের বিশাল সম্ভাব্য অঞ্চলের অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। দেশে গ্যাসের চাহিদা এখন সাড়ে ৪৫ হাজার এমএমসিএফডি। নিজেদের উৎপাদন হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ এমএমসিএফডি আর এলএনজি আমদাদনি হচ্ছে ৫০০ এমএমসিসিএফডি।

সবমিলিয়ে ২ হাজার ৮০০ এমএমএমসিএফডি সরবরাহ করে ঘাটতি ১ হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ তরল জ্বালানি ব্যবহার এবং অন্যান্য গ্রাহকের ক্ষেত্রে নানা ধরনের কৃচ্ছ্রতাসাধন সত্ত্বেও শিল্পখাত ডুবতে বসেছে তীব্র গ্যাস সংকটে। বিশ্ববাজারে এলএনজি অগ্নিমূল্য থাকায় প্রধানমন্ত্রী দুই মাস আগে স্পট মার্কেট থেকে আমদানি বন্ধ করে সরবরাহ ৩০০ এমএমসিএফডি করে গেছে।

 পেট্রোবাংলার নিজস্ব উদ্যোগে আগামী ৩ বছরে নতুন গ্যাস যোগ হবে সামান্য।  তবে উৎপাদনরত  কূপগুলোর উৎপাদন অনেক কমে যেতে পারে। ওদিকে এই সময়ে নতুন করে এলএনজি আমদানির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এলএনজি বাজার স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। পরিস্থিতি জরুরিভিত্তিতে সামাল দিতে হলে চিরুনি অভিযান চালিয়ে গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে। লিকেজ এবং অন্যান্য অপচয় কমাতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, সেই ২০০০ সাল থেকেই নিজেদের অনুসন্ধান কাজ বহুগুণ বাড়াতে। কিন্তু ২০০০-২০২২ সাল পর্যন্ত কয়েকটি সরকার এই ব্যাপারে চূড়ান্ত উদাসীনতার পরিচয় দিয়ে আজকের সংকট ডেকে এনেছে। এমনকি বর্তমান সরকারের তিন টার্মে গ্যাস অনুসন্ধান সীমিত রেখে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকেপড়া যে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা এখন না হলেও অচিরেই বুঝতে পারবে সরকার। 

২০১০ থেকে শুরু হওয়া উদ্যোগের ফল মিলেছে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে  দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে। দৈনিক ১ হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমতার বিপরীতে ৭৫০-৮০০ এমএমসিএফডি হরে এলএনজি আমদানি হয়েছে কিছু সময়। কাতার ও ওমান থেকে সরকার ৬০ শতাংশ আমদানি করেছে দীর্ঘমেয়াাদ চুক্তির আওতায় বাকিটা স্পট মার্কেট থেকে আসতো। বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব জ্বালানি বাজরের অস্থিরতার কথা মাথায় রেখে আমদানির চেয়ে নিজেদের গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বহু আগে থেকে। ভ্রুক্ষেপ না করে এখন বিপদে সরকার। 

২০১০ থেকেই সাগরে গ্যাস অনুসদ্ধান জোরদার করার সুযোগ ছিল। মডেল পিএসসি ২০১২ বা ২০১৯ সাগরে বিশেষ করে গভীর সাগরে অনুসন্ধান করার মতো উপযোগী ছিল না এটি বুঝতে আলবার্ট আইনস্টাইন হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের গভীর সাগরে অনুসন্ধান করার মতো কারিগরি দক্ষতা, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ পুঁজি বিনিয়োগের প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি মডেল পিএসসি আপডেট করার মতো ভরসা পায়নি নিজেরা। উড অ্যান্ড মাকেনজিয়াকে নিয়োগ করে সুপারিশ নেয়া হয়েছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্যাস মূল্য ব্রেন্ট ক্রুদের সঙ্গে সংযুক্ত করে ফ্লোর আর সিলিং লিমিট তুলে দেয়ার সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে নিজেদের হাতে থাকা তথ্যাবলি বিনিয়োগকারীদের কাছে উন্মুক্ত করতে পরামর্শক দিয়েছে। 

গভীর সাগর আর অগভীর সাগরের মধ্যে বিভাজন না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় মডেল পিএসসি ২০১৯ আপডেট করে ২০২২-এর মধ্যে নতুন টেন্ডার আহবান করা হলে ২০২৩ শেষ নাগাদ বা ২০১৪ শুরুতে আগ্রহী আইওসিদের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে। এই বিষয়ে অতি রক্ষণশীলতার চরম মূল্য দিচ্ছে বাংলাদেশ। এখন আর কুণ্ঠা করার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ এমনিতেই মাল্টি ক্লায়েন্ট সার্ভার নামে অযথা কালক্ষেপণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিজেদের কাছেই ১৯৭৪ পর্ব, টোটাল গ্যাস, কনোকো ফিলিপ্স, পস্কো দেবো, সানসের অনেক ডাটা আছে। সেগুলো সংরক্ষিত করে রাকার অর্থ হয় না। সাগরে বিলিয়ন ডলার্স ঝুঁকি বিনোয়োগে করবে যেই কোম্পানিগুলো তাদের যথেষ্ট প্রণোদনা দিতেই হবে। এবার সুযোগ হারালে বাংলাদেশ গ্যাস সংকট ২০৩০-এর পরেও অব্যাহত থাকবে।

অনেকে ভাবছেন, এলএনজি আমদানি সমাধান হবে। আসন্ন শীতকাল থেকে বিশ্ববাজারে এলএনজি মূল্য সীমা ছাড়িয়ে যাবার অভাস মিলছে। পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র জ্বালানি সংকটের কারণে এলএনজি সেই দিকে যাবে। এশিয়ার জাপান, চীন, কোরিয়া ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারবে না বাংলাদেশ। জলে স্থলে নিজেদের উৎপাদন বাড়াতেই হবে। প্রয়োজন দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং পেশাদারি বাস্তবায়ন কৌশল। 

পেট্রোবাংলা স্থলভাগে একমাত্র বাপেক্স কৌশল থেকে বেরিয়ে এসে স্থলভাগেও বাপেক্স বরাদ্দকৃত ব্লকগুলোর বাইরে আইওসিদের নিয়োজিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার সম্ভাব্য গ্যাস স্ট্র্যাকচারগুলোতে বাপেক্সের সহযোগী হিসেবে যোগ্য আইওসিদের নিয়োগের বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। মোট কথা অদূর ভবিষ্যতে গ্যাস সংকট থেকে মুক্ত হতে হলে সাহসী পদক্ষেপ নেয়া এখন জরুরি।

শেয়ার করুন