২৮ মার্চ ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:১৫:০৩ অপরাহ্ন


গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির সমাবেশে ঘোষনা
নিজেদের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ ও ১০ দফা দাবী বিএনপি’র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২২
নিজেদের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ ও ১০ দফা দাবী বিএনপি’র


গোলাপবাগে বিএনপি'র বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে মূলত তাদের যে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ হয়ে আসছে সে কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘটলো। এর আগে অনেক নাটকীয়তার পর সরকার শেষ পর্যন্ত গতকাল (শুক্রবার) দুপুরে গোলাপবাগে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল। দেরীতে সমাবেশের ভেনু পেলেও সমাবেশস্থল ছিল কানায় কানায় ভর্তি।

 মাঠ পেরিয়ে ও আশপাশের রাস্তা উঁচু জায়গায় মানুষের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ও আরো অনেক নেতাকে কারাগারে পাঠানোর পর এ সমাবেশ আকর্ষনহীন হবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

 কিন্তু মানুষের উপস্থিতি ঠিকই ছিল। বিএনপি নেতাকর্মীদের ঢল নামে সমাবেশে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সমাবেশে তিনি পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

সমাবেশ থেকে বিএনপির ১০ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও এই সমাবেশে বিএনপির ৭ সংসদ সদস্য তাদের সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। বিএনপি'র কর্মসূচীর মধ্যে আগামী ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী সমমনাদের নিয়ে গণমিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। 

সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষনা 

 সমাবেশে বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ প্রথম পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এরপর অন্যান্যরাও একে একে পদত্যাগের ঘোষনা দেন। দেশের বাইরে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনূর রশীদ তার পদত্যাগের কথা তার পক্ষে অণ্য একজন দিলেও তিনি অবিলম্বে তার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন বলে জানা গেছে। অণ্য সংসদ সদস্যরা রোববারই তাদের পদত্যাগ পত্র স্পিকারের কাছে জমা দেবেন বলে জানা গেছে। 

 পরবর্তি কর্মসূচি 

বিএনপি গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে তাদের পরবর্তি কর্মসূচির মধ্যে আগামী ২৪ ডিসেম্বর বিএনপি সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সারা দেশে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গণমিছিল পালন করার কর্মসূচি দিয়েছে। এটা হবে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। এই গণমিছিলে যোগ দিতে সব সমমনা দল এবং সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। সমাবেশের প্রধান অতিথি ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ ঘোষণা দেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তার নেতা কর্মীদের মুক্তি ও গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ১৩ ডিসেম্বর সারা দেশের সব বিভাগীয় ও জেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করবে বিএনপি।

১০ দফা ঘোষণা করল বিএনপি

১ . বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন  সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে ২. হাজার ৯৯৬ সালের সংবিধানের সঙ্গে যুক্ত ধারা ৫৮ খ গ ঘ অনুচ্ছেদ এর আলোকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার / অন্তবর্তীকালীন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন। ৩. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অন্তবর্তীকালীন সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্ব শর্ত হিসেবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন পদ্ধতি বাতিল ও ব্যালট পেপার মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা। 

৪. খালেদা জিয়াসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দেশে সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের কোনো রকম বাধা সৃষ্টি না করা সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি না করা বৃদ্ধি কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা। 

 ৫.  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ সহমৌলিক মানব অধিকার হরণ বাতিল করা। 

  ৬ . বিদ্যুৎ জ্বালানি গ্যাস ও পানিসহ সেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল। ৭.  নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. বিদেশে অর্থ পাচার ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত বিদ্যুৎ জ্বালানি খাত শেয়ারবাজার সহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন দুর্নীতি করে দ্রুত যথাযথ শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। 

 ৯. গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচার বহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার বিচার ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা 

১০.  আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রসাশন ও বিচার বিভাগের সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।  


শেয়ার করুন